আজহারুল হক, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) : ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের টানা উপস্থিতির কারনে ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। ফলশ্র“তিতে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
গতকাল রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ও বাইরে চিকিৎসা নিতে আসা অসংখ্য মানুষের ভিড়। হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক আলমগীর মোস্তাক আহমেদ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ সময় উপজেলার লংগাইর গ্রামের আব্দুল গফুর নামে প্রায় আশি ছুই ছুই করা এক বৃদ্ধকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। জানতে চাইলেই ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, সেই সাড়ে ১০টা থাইকা খাঁড়া অইয়া আছি। ভিতরে ডাক্তারের কাছে যাওনডা ভিড়ের কারনে অসম্ভস অইয়া পড়ছে। ফাক ফুতর দিয়া ভিতরে যাইবার কোন সুযোগেই নাই। রসুলপুর গ্রাম আমেনা খাতুন তার তিন মাসের শিশু সন্তানকে চিকিৎসা করাতে এসেছেন। এ সময় তিনি ডাক্তার না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন এ হাসপাতালে যেদিনেই আসি, হেদিন দিনেই হুনি আজকা ডাক্তার নাই। এত বড় একটা হাসপাতাল আর এহানে আসলেই খালি হুনি ডাক্তার নাই। ভাই ডাক্তার নাই ক্যান?। আমেনার মতো এমন প্রশ্ন আরো অসংখ্য রোগীর। দুপুর ১২টার দিকে ডাঃ মুর্শিদ উদ্দিন তার কক্ষে বসে মুঠোফোনে কথা বলছেন। সেখানে কোন রোগী নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ২০টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৬ জন ডাক্তার। ১৬ জন ডাক্তারের মধ্যে গতকাল হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলেন ডাঃ তাজ নাহার, মিজানুর রহমান, রোকাইয়া আক্তার, ডাঃ নূরুন্নাহার, সাজ্জাদ হোসেন, নাসরিন সুলতানা মুন, সানজিদা খান, আতাউর রহমানসহ ৯ জন ডাক্তার।
এদিকে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মাহফুজ গতকাল হাসপাতালে উপস্থিত থাকলেও গত ১৮ দিন ধরে হাজিরা খাতায় তার কোন স্বাক্ষর নেই। অপর দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডাঃ খাদেমুল ইসলাম দুই মাস পর গতকাল হাসপাতালে এসেছেন।
হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার ফেরদৌস দুপুর ১২ দিকে হাসপাতালে আসেন। এ সময় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাসে কয়দিন ডিউটি করতে হয় তার কোন ঠিক নেই। এ সময় তার পাশ দিয়ে যাওয়া আরেক কর্মকর্তা জানান, তিনি মাসে খুব বেশি দিন আসেননা। এ জন্যই তিনি বলতে পারেননি মাসে কয়দিন ডিউটি করতে হয়।
হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ মৌসুমী আক্তার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে কৈফিয়ত দিবে বাধ্য নন বলে জানান তিনি। ডাঃ নাসরিন সুলতানা মুন ও ডাঃ আতাউর রহমান বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারনে যেতে পারিনি।
জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত হাজারো রোগী চিকিৎসা নেন। অন্তর্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৯০ জন রোগী ভর্তি থাকেন।
হাসপাতালে চিকিৎসদের অনুপস্থিতির কারন জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজি চিকিৎসক উপস্থিতি কম থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কি কারনে তারা অনুপস্থিত তা জানতে আজই তাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন আসম আঃ ছামাদ বলেন, চিকিৎসদের হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও খুব শিগগির শুন্য পূরনে চেষ্টা করা হবে।