এম,লুত্ফর রহমান, নরসিংদী : বাংলা লিমন নামে পরিচিত নরসিংদীর কুখ্যাত সন্ত্রাসী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক তানজিরুল হক লিমন ধরা পড়েছে। গতকাল বুধবার নরসিংদীর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ঘোড়াশালের কর্তে তৈল গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর ও পলাশসহ বিভিন্ন থানায় খুন, ডাকাতি, রাহাজানী, অস্ত্রবাজী, চাঁদাবাজীর বহুসংখ্যাক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সে সর্বশেষ গত মে মাসে নরসিংদী শহর এলাকার দাসপাড়া গ্রামের মান্নানের ছেলে শরিফকে হত্যা করে। গ্রেফতারের আগের দিন সে নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী পশ্চিমপাড়া মহল্লা থেকে শরীফকে অপহরন করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে গিয়ে তাকে খুন করে। পরে পলাশ থানা পুলিশ শরিফের লাশ একই থানার সানেরবাড়ী এলাকা থেকে উদ্ধার করে। কুখ্যাত কিলার বাংলা লিমনের বাড়ী পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার কর্তেতৈল গ্রামে। তার পিতার শাহজাহান নরসিংদী টেলিৃফোন অফিসে চাকুরী করে। সে সুবাদে লিমন তার পিতা মাতার সাথে শহরের দাসপাড়ায় তার খালার বাড়ীতে বসবাস করে। তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পলাশ থানার ওসি সাথে যোগাযোগ করা হলে ওসি শাহাদাৎ হোসেন জানান, তাকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সে শরিফ হত্যামামলার আসামী। কিছুদিন পূর্বে এক আসামী স্বীকারোক্তিতেও শরীফ হত্যাকান্ডে লিমন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ডিবি ইন্সপেক্টর আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি বর্তমানে ঢাকায় আছেন। ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। তবে তাকে গ্রেফতার করার জন্য মঙ্গলবার ডিবিপুলিশ রেইড দিয়েছিল। তাকে পাওয়া যায়নি। নরসিংদী সদর থানার ওসি আবুল কাসেম জানিয়েছেন লিমনকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে তিনি শুনতে পেয়েছেন।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আতিথ্য গ্রহন করেননি
নরসিংদী জেলা পরিষদের ইফতার পার্টি সুপার ফ্লপ
সাবেক মন্ত্রী রাজু ছাড়া কোন বিশেষ অতিথিও যাননি
নরসিংদী জেলা পরিষদের ইফতার পার্টিতে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেঃ কর্ণেল (অব:) নজরুল ইসলাম হীরু যোগদান নিয়ে আলোচনা সমালোচনার অবসান ঘটেছে। জেলা পরিষদের ইফতার পার্টিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আতিথ্য গ্রহণ করেননি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল হীরু। বহু বির্তকিত সাবেক মন্ত্রী আ’লীগ নেতা রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর প্রধান আতিথ্যে অনুষ্ঠিত এই ইফতার পার্টিতে শেষ পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী যোগদান করেননি। যোগদান করেননি মনোহরদী-বেলাব’র এমপি নুুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিবপুরের এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, পলাশের এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন, ডিসি আবু হেনা মোরশেদ জামান, এসপি শেখ রফিকুল ইসলামসহ কোন বিশেষ অতিথি। অতিথি উপস্থিতির দিক থেকে জেলা পরিষদের ইফতার পার্টি সুপার ফ্লপ করেছে বলে মন্তব্য করেছে ইফতার পার্টিতে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা।
প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ জনেরা জানিয়েছেন, জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ সাবেক মন্ত্রী রাজুকে প্রধান অতিথি এবং বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল হীরুকে বিশেষ অতিথি করে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্টের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রীসিডেন্স’ ভঙ্গ করেছেন। জেলা পরিষদ আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে দলীয় অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী অতিথি নির্বাচন করার সুযোগ নেই। জেলা পরিষদ সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারী অর্গানোগ্রাম বা ওয়ারেন্ট অব প্রীসিডেন্স অনুযায়ী অতিথি নির্বাচন করতে হবে। তারা বলেন, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু মন্ত্রী থাকা অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আসাদুজ্জামানকে যদি জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে নিয়োগ দান করে থাকেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এড. আসাদুজ্জামান সাহেব রাজুর প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হলে দলীয়ভাবে করতে পারতেন। কিংবা বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে কিংবা বড় ধরনের উপহার সামগ্রী নিয়ে ঢাকায় গিয়ে তাকে সম্মান করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারতেন। সরকারী প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদকে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কাজে ব্যাবহার করার তার কোন আইন বা বিধিসম্মত অধিকার নেই। একজন দলীয় নেতাকে সরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রধান আতিথ্য দিয়ে তিনি শুধু জেলা পরিষদকে বির্তকিত করেননি, তিনি জেলা পরিষদকে দলীয়করন করার বদনাম দলের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। তিনি দলকে বির্তকিত করেছেন অপমানিত করেছেন সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীকে। আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন নরসিংদীর রাজনৈতিক মহলে। তিনি কোন সাধারণ রাজনীতিক নন। একজন প্রবীন আইনজীবি হয়ে আইন ও বিধি বিধানের প্রতি এতটা অশ্রদ্ধা তিনি দেখাতে পারেন না।
এদিকে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু অতিথির দিক থেকে ছিলেন একেবারেই নিঃসংগ। ইফতার পার্টির মঞ্চে কোন অতিথি বর্গকে না পেয়ে তিনি অনেকটাই হুদাশ হয়ে পড়েন। তিনি তার কয়েক মিনিটের বক্তৃতায় বলেন, যাদের আসার কথা ছিল তারা কেন আসেনি বুঝতে পারছি না। হয়তো বা ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি। যারা এসেছেন তাদেরকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
নরসিংদী জেলা পরিষদ প্রশাসক এড. আসাদুজ্জামান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগ নেতা রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু মন্ত্রী থাকা কালে এড. আসাদুজ্জামানকে জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে অধিষ্ঠান দেন। মেয়র লোকমান হত্যাকান্ডের পর নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দল প্রকট আকার ধারন করলে এড. আসাদুজ্জামান তৎকালীন মন্ত্রী রাজুর পক্ষ নেন। পক্ষান্তরে তৎকালীন এমপি বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল হীরু নিহত মেয়র লোকমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পক্ষ গ্রহন করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর কর্ণেল হীরুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। এ অবস্থায় নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নেয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আসাদুজ্জামান হলেও জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাই প্রতিমন্ত্রী হীরুর নেতৃত্বে চলে যায়। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন এড. আসাদুজ্জামান। এতে প্রধান অতিথি করা হয় সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে। পক্ষান্তরে বিশেষ অতিথি করা হয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল হীরুকে। জেলা পরিষদের ইফতার পার্টির এই দাওয়াত পত্র নরসিংদীর রাজনৈতিক, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক মহলে বিলি হবার পর সারা নরসিংদীতে দাওয়াত পত্র নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকজনসহ রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন উঠে একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা কিভাবে একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রধান অতিথি করা হয়। কিভাবে একজন বর্তমান প্রতিমন্ত্রীকে বিশেষ অতিথি করা হয়। এই দাওয়াতপত্র প্রেসিডেন্টের ওয়ারেন্ট অব প্রীসিডেন্স’র সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। বর্তমান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সরকারের ৮ নং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। পক্ষান্তরে ওয়ারেন্ট অব প্রীসিডেন্স অনুযায়ী সাবেক মন্ত্রীর কোন সরকারী মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া প্রতিমন্ত্রী হিরুকে বিশেষ অতিথি করার আগে জেলা পরিষদ প্রশাসক এড. আসাদুজ্জামান প্রতিমন্ত্রীর সাথে কোন কথা বলেননি। প্রতিমন্ত্রীর সম্মতি না নিয়ে দাওয়াত পত্রে তার নাম ছাপানো একটি রাজনৈতিক হঠকারীতা ছাড়া আর কিছুই নয়।