তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা : কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ঋণের টাকা যোগার করতে না পারায় এক গৃহবধূ বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে দাউদকান্দি উপজেলা গৌরীপুর ইউনিয়নের আঙ্গাউড়া গ্রামে। আজ রোববার গৃহবধুকে দাফন করা হয়। নিহত গৃহবধূ ৬ সন্তানের জননী ফাতেমা বেগম (৩৫) আঙ্গাউড়া গ্রামের সিএনজি মিস্ত্রি মনির হোসেনের স্ত্রী। পুলিশ ও নিহত পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মনির হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩৫) তার স্বামীকে ওয়ার্কসপ করার জন্য ৬মাস আগে এনজিও ব্যুরো বাংলাদেশ দাউদকান্দির গৌরীপুর শাখা থেকে দুই নামে ৮৫হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সেই টাকা প্রতি সপ্তাহে পরিশোধ করা কথা। কিন্তু সংসারের অভাব অনটন আর স্বামীর ব্যবসা মন্দার কারণে ৪ সপ্তাহ যাবৎ সেই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। সেই ঋণের টাকার জন্য এনজিও বুরো বাংলাদেশের কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে টাকা জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। গৃহবধূ আজ রোববার সেই কিস্তির আড়াই হাজার টাকা পরিশোধ করা কথা দিয়েছিলেন। শনিবার রাতে তার স্বামী মনির হোসেন এক হাজার এক’শ টাকা নিয়ে বাড়ি আসেন। বাকী টাকা কোথায় থেকে যোগাড় করবেন সেই উপায় না পেয়ে রাতেই বিষ পান করেন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গৌরীপুরে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এব্যাপারে নিহতের স্বামী মনির হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, সিএনজি গ্যারেজের দেওয়ার জন্য আমার স্ত্রীসহ দুই জনের নামে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ তুলেছিল। ব্যবসা মন্দা আর অভাব অনটনের কারণে ৪ সপ্তাহের কিস্তি পরিশোধ করতে পারি নাই। তারপরও অনেক কষ্ট কইরা এগারো’শ টাকা যোগার দিয়েছিলাম। এনজিও আড়াই হাজার টাকার যোগার করতে না পারায় ক্ষোভে বিষ পানে আত্মহত্যা করে। এনজিও ব্যুরো বাংলাদেশ দাউদকান্দি শাখার ম্যানেজার প্রনব সাহার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ঋণ গ্রহীতা গৃহবধূ ফাতেমা বেগম সেই কথা দিয়েছিল আজ রোববার একটা কিস্তির টাকা পরিশোধ কথা ছিল। তারপরও সে ঋণের টাকার জন্য আত্মহত্যা করে থাকলে তা মওকুফের জন্য বিবেচনা করা হবে। গৌরীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, এনজিওদের ঋণের টাকার চাপ প্রয়োগের কারণে যদি আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে নিহত গৃহবধূর পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশু নিহত : আহত ৪

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চান্দিনা উপজেলার পশ্চিম বেলাশ্বর ঊষা জুট মিল গেইট সংলগ্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক শিশু (৩) নিহত হয়। রবিবার দুপুর ১২টায় দ্রুত গতি সম্পন্ন বাস পেছন দিক থেকে একটি যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিক্সাকে ধাক্কা দিলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম জানা যায়নি। তবে সে দেবিদ্বার উপজেলার আসাদনগর গ্রামের আব্দুল কাদের মাস্টারের ছেলে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছে আব্দুল কাদের মাষ্টার (৩৫), তার স্ত্রী শেফালী বেগম (২৮), একই উপজেলার সুরপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩০), তার স্ত্রী নিলুফা বেগম (২৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, রবিবার দুপুর ১২টায় কুমিল্লা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কর্ডোভা পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস একই মুখী একটি সিএনজি অটোরিক্সাকে পিছন দিক থেকে থাক্কা দিলে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের তাৎক্ষনিক ভাবে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডা. আব্দুল আল-মামুন জানান, এক শিশুসহ আহত ৫জনকে হাসপাতালে আনার পর তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটির মুত্যু ঘটে। হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইন-চার্জ (সার্জেন্ট) আসাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও সিএনজি অটোরিক্সা আটক করে ফাঁড়িতে আনা হয়েছে। তবে বাস চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
না ফেরার দেশে চলে গেলেন নিবেদিতা ছাত্রী নিবাসের প্রধান তত্ত্বাবধায়িকা শিশির কণা চন্দ
কুমিল্লা মহানগরীর ঈশ্বরপাঠশালা নিবেদিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকা শাখা’র প্রাক্তণ শিক্ষিকা ও নিবেদিতা ছাত্রী নিবাসের প্রধান তত্ত্বাবধায়িকা শিশির কণা চন্দ (৭৬) এর ব্রেইন স্টোক করে গত ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টায় তাঁর কর্মস্থল নিবেদিতা ছাত্রী নিবাসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার বর্তমানে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাগদী গ্রামের বিপিন বিহারী চন্দ এর মেয়ে। এই মহিষী নারী ১৯৫৭ইং থেকে ২০০০ইং পর্যন্ত স্বর্গীয় দানবীর ঁমহেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যের প্রতিষ্ঠিত নিবেদিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নিবেদিতা ছাত্রী নিবাসের প্রধান তত্ত্বাবধায়িকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে কুমিল্লা ঠাকুরপাড়াস্থ মৃণালিনী দত্ত ছাত্রী নিবাসের সহ-তত্ত্বাবধায়িকা ছিলেন এ মহিষী নারী। তাঁর এই বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। তিনি মৃত্যুকালে আত্মীয়-স্বজন সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান। পরদিন সকাল ১১টায় কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ ঠাকুরপাড়াস্থ মহাশশ্মানে তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন তাঁর কাকাতো ভাই মিহির চন্দ।
শিশির কণা চন্দের মৃত্যুতে তাঁর আত্মার সৎগতি কামনাসহ পরিবারের প্রতি সমবেনা জ্ঞাপন করেন- মহেশাঙ্গণ নিবেদিতা ছাত্রী নিবাসের সহযোগী তত্ত্বাবধায়িকা শেলী, কর্মরত সাধনা শীলসহ নিবেদিতা ছাত্রী নিবাসের বর্তমান ও প্রাক্তণ ছাত্রীবৃন্দ। এ ছাড়াও শোক প্রকাশ করেন- বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্ঠাণ ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখা, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কুমিল্লা মহানগর শাখা, বাংলাদেশ ছাত্র-যুব-ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা ও মহানগর শাখা, মহেশাঙ্গণ লোকনাথ স্মৃতি তর্পণ সংঘ ও লোকনাথ যুব সেবা সংঘ, মহেশ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, কুমিল্লা ট্যূরিজম ও কুমিল্লা ট্যুরিস্ট ভিশন সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
