ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী : পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি হচ্ছে মানুষের জীবনে স্বাস্থ্য সেবা। কিন্তু রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খাতা-কলমে বিভিন্ন বিভাগের ১৬ জন ডাক্তার থাকলেও নিয়মিত আসেন হাতে গোনা ৪/৫ জন। বাকিরা মাসে একদিন হাজিরা দিয়ে বেতন উত্তোলন করে চলে যাচ্ছেন। অপরদিকে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখন ১২টি চিকিৎসকের পদশূন্য রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অবহেলায় পুঠিয়া উপজেলাসহ দূর্গাপুর, চারঘাট ও বাগাতিপাড়া সীমান্ত এলাকার প্রায় দু’লাখ আগত সাধারন রোগীরা সে অধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানাগেছে, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে আধুনিক স্বাস্থ্য সেবাদানে বর্তমান সরকারের একটি অঙ্গীকার। সে মোতাবেক এই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নতি করণে মোট ২৮ টি পদে চিকিৎসক রাখা হয়। বর্তমানে খাতা-কলমে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ১৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসা সেবায় আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সিরাজুল ইসলাম, হাড় জোড় বিশেষজ্ঞ এনামূল হক, গাইনী বিভাগের মেরিনা আখতারসহ ২/১ জন চিকিৎসক নিয়মিত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। হাবিবুল ইসলাম (অজ্ঞান), রেজাউল করিম (যৌন ও চর্ম), মাহবুব জাহান আহমেদ (চক্ষু), আবুল কালাম আজাদ (ডেন্টাল) ও হাসান আলী (মেডিসিন) চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না। তারা প্রতিমাসে একদিন এসে শুধু বেতন উত্তোলন করেন। অপরদিকে ফজলুল হক (শিশু), তারানা তাসনিন (কার্ডিওলজি), আশরাফুল ইসলাম (মেডিকেল অফিসার), রেহেনা পারভীন (সহকারী সার্জন), জায়েদুল ইসলাম (মেডিকেল অফিসার) ও রোমান (সহ.সার্জন) পেশনে রয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। নিয়ম অনুসারে আরো ১২টি পদে চিকিৎসক শূণ্য রয়েছে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোপেন্দ্রনাথ আচার্য-এর সাথে বিশেষ সখ্যতা থাকায় বেশীর ভাগ চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না। তারা শুধুমাত্র বেতন নিয়ে যায়। আর চুক্তি ভিক্তিক অর্থের বিনিময় বাহিরে ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসকের দায়ীত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক্রা-রে মেশিন ও এসি বিকল হয়ে রয়েছে। জেনেরেটর থাকা সর্তেও স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে একদিনও চালু করা হয়নি। অথচ প্রতি বছর জেনেটরের তেল খরচ বাবদ হাজার হাজার টাকা লোপাট হচ্ছে। লোপাট হচ্ছে সাধারন ও অসহায় রোগীদের জন্য বরাদে আসা ঔষধ গুলোও। গত কয়েকমাস পূর্বে ঔষধের গোডাউন থেকে কয়েক লাখ টাকার ঔষধ লোপাট করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকার শত শত নিন্ম আয়ের মানুষ গুলো স্বাস্থ্য সেবা নিতে ভীড় করছেন। হাতে গোনো ৩/৪ জন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। বাকি চিকিৎসকগনের চেম্বার গুলো ছিল তালা বন্ধ। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকা শরিফা বেগম জানান, এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়। দু’জন ডাক্তার ছাড়া আর কোনো ডাক্তার আমাদের চিকিৎসা দেয় না। তাছাড়া হাসপাতাল থেকে আমাদের খালি দু’একটি ঔষধ দেওয়া হয়। আর বাকি গুলো বাজার থেকে আনতে বলা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য জানান, কিছু ডাক্তার মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে পেশনে আছেন। সরকারী বরাদ্দকৃত ঔষধ গুলো সঠিক ভাবে বিতরণ করা হয়। আর হাসপাতালে কর্মরত ৫/৬ জন চিকিৎসক না এসে প্রতিমাসে বেতন উত্তোলন করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন আব্দুস সোবাহানের সাথে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
