রাজশাহী প্রতিনিধি : বছর ঘুরে আসছে ঈদ উল ফিতর। আর একে সামনে রেখে রাজশাহী নগরী ও এর আশেপাশের এলাকায় গড়ে আবারও উত্পাদন শুরু করেছে মৌসুমী সেমাই কারখানাগুলো। সব মিলিয়ে রাজশাহীতে অন্তত: অর্ধশতাধিক কারাখানায় সেমাই উত্পাদন চলছে। এসব কারখানার অধিকাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মান নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নাকের ডগাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাত-দিন সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে উত্পাদন। তবে বিএসটিআই বলছে, মানহীন সেমাই কারখানাগুলোতে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা। সংশ্লি¬ষ্টরা বলছেন, বিএসটিআইএ’র অনুমোদন না নিয়েই নগরীর ও এর আশেপাশের এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে সেমাই তৈরীর কারখানা। এক শ্রেণির অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী ওইসব কারখানা গড়ে তুলেছেন। সেগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে লাচ্ছা ও সেমাই (রোলেক্স)। রোজার শুরু থেকে ব্যাংঙের ছাতার মত গড়ে ওঠে অবৈধ এসব কারখানা। প্রতিবছরের মতো এবারো এসব কারখানায় অবাধে তৈরি হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই। প্রতিদিন এসব কারখানায় অন্তত: আড়াই থেকে তিন হাজার খাঁচি বা টুকরি সেমাই তৈরি হচ্ছে। গত ২৯ জুন নগরীর হাজরাপুকুর এলাকার মেসার্স শাহী ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর কারখানায় যৌথ অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় বিএসটিআই’র মান সনদ বিহীন ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরী এবং বিএসটিআই’র মান চিহ্ন ব্যবহার করায় কারখানা মালিক অ্যাডভোকেট শেখ তোজাম্মের আহমদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে কারখানাটি সিলগালা করে দেয়া হয়। ভেজাল ঠেকাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআই অভিযান অব্যহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।এদিকে, রাজশাহী বিসিকসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এবার বিসিকের বিভিন্ন কারখানার ভেতরে এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে গড়ে উঠেছে অন্তত: ৫০টির মত অস্থায়ী সেমাই কারখানা। এছাড়া নর্থবেঙ্গল, দিনার, বিশাল, বনফুল, বেলিফুল, রুচিতা, পপুলার, মিষ্টিবাড়িসহ ১০ থেকে ১৫টি স্থায়ী কারখানা রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে এসব কারখানা গত প্রায় পনের দিন ধরেই সেমাই উৎপাদন করছে। অস্থায়ী কারখানাগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৮০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) সেমাই উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যদিকে স্থায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি সেমাই। এসব কারখানায় উৎপাদিত লাচ্ছা ও সেমাই রাতের আঁধারেই চলে যাচ্ছে খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। সেখানে প্রতি খাঁচি লাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ১৪’শ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। আর ৩৫ কেজি ওজনের প্রতি খাঁচি সেমাই মিলছে প্রায় ১৮’শ টাকায়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অস্থায়ী কারখানাগুলোতে খুব গোপনে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। বিসিক এলাকায় গড়ে ওঠা সবগুলো কারখানার ক্ষেত্রেই স্টিল, প¬াস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন কারাখানার দুই-একটি রুম ভাড়া করে অথবা কারখানা মালিক নিজেই অস্থায়ী সেমাই কারখানা গড়ে তুলেছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত এসব সেমাইয়ে মেশানো হচ্ছে নিম্নমানের উপাদান ও ক্ষতিকারক রঙ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অস্থায়ী সেমাই কারখানার কয়েকজন মালিক স্বীকার করেন, শুধুমাত্র হাতে গোনা কয়েকটি কারখানায় সেমাই উৎপাদন করলে চাহিদা পুরণ অসম্ভব হয়ে পড়বে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। তাছাড়া সবাই কমবেশি সেমাই-এ ভেজাল দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্থায়ী কারখানাগুলো ওই তালিকা থেকে বাদ যাবেনা বলেও জানান তারা। এদিকে, বিএসটিআই আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম সরকার জানান, বিএসটিআই’র মান নিয়ন্ত্রিত পণ্যের তালিকায় চিকন সেমাই নেই। ফলে স্বপ্রনোদিত হয়ে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোতে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হচ্ছে। রোজা শুরুর আগে থেকেই নগরীতে প্রায় প্রতিদিন ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে বিএসটিআই।তিনি আরো জানান, অভিযানে রমজানের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য যেমন, মুড়ি, ছোলা, ফলমূল, ভোজ্যতেল, সেমাই, মাছ ও মাংসের বিষাক্ত কেমিক্যালের মিশ্রণ না ঘটে সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ওজনে কারচুপিকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হচ্ছে। পুরো রোজার মাস জুড়েই এ অভিযান অব্যহত থাকবে বলেও জানান তিনি।