প্রতীক ওমর, বগুড়া: বগুড়ার আলোচিত কৃষিযন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন এবার চিনি তৈরি সুগারবিট অটোমেশিন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন। আখ থেকে উত্পাদিত চিনির বিকল্প হিসেবে সুগারবিট থেকে চিনি তৈরির এই নতুন মেশিন আবিস্কার করেছেন তিনি। দেশীয় কাঁচামালের সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণে তৈরি এই অটোমেশিন ইতোমধ্যেই সবার মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

জানাগেছে, চিনির ঘাটতি পূরণ করতে এবার বাংলাদেশে আবাদ হচ্ছে ভিন্নস্বাদের ফসল ‘সুগার বিট’। সুগার বিট দেখতে অনেকটা নারিকেল কচুর (কাঠকচু) মতো। শীত প্রধান অঞ্চলের এই ফসল সুগার বিট ভাল ফলন হয়। চারা রোপনের পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে সুগার বিট জমি থেকে তোলা যায়। যেখানে আখ থেকে ৬/৭ শতাংশ চিনি পাওয়া যায়, সেখানে সুগারবিট থেকে ১৪/১৮ শতাংশ চিনি উত্পাদনে সক্ষম। বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ২৩ লাখ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা। কিন্তু এর বিপরীতে চিনি উত্পাদন একেবারেই কম। দেশের ১৫টি চিনিকলের উত্পাদন ক্ষমতা দুই লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের বিপরীতে গত বছর চিনি উত্পাদন হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৩০৮ মেট্রিক টন। তাই বিপুল পরিমানের চিনি বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়। এই অবস্থায় চাষীদের মাঝে সুগার বিট চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করা গেলে দেশে চিনির চাহিদার পুরোটাই নিজেরা মেটানো সম্ভব হবে। এমনকি বিদেশেও রপ্তানী সম্ভব। সুগার বিট থেকে শুধু চিনি নয়; গুড়ও উত্পাদন সম্ভব।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, আমাদের দেশে আবহাওয়া উপযোগি হওয়ায় দুই ধরনে সুগারবিট চাষ হচ্ছে শুভ্রা ও কাবেরী। প্রতি হেক্টরে শুভ্রা উৎপাদিত হয় ৮২ মেট্রিক টন ও কাবেরী ৭৫ দশমিক ৭৭ মেট্রিক টন। গবেষনায় এই সুগারবিট থেকে গড়ে ১২ শতাংশ চিনি আহরণ সম্ভব হয়েছে এই অটো মেশিনের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে উৎপটাদনের পরিমান আরো বাড়ানো সম্ভব বলে গবেষকরা দাবি করছেন। পরীক্ষা মূলক ভাবে লবনাক্ত এলাকা বলে পরিচিত সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাও, রংপুর এবং বাগেরহাটে সুগার বিটের এই দুটি জাত আবাদ করে হেক্টর প্রতি ৬৭ থেকে ৭৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে। চিনি আহরণের হার ছিল ১২ শতাংশ। ঠাকুরগাঁও চিনিকল এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে আবাদ করে শুভ্রা জাতের সুগার বিটের সর্বোচ্চ ফলন হেক্টর প্রতি ১০৬ দশমিক ২১ মেট্রিক টন এবং রংপুরের শ্যামপুরে চিনিকল এলাকায় সর্বোচ্চ ১৩৫ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন পাওয়া গেছে। বগুড়ার যন্ত্রবিজ্ঞানী ইঞ্জিনিয়ার আমির হোসেনের অটোমেশিনে সাতটি পদ্ধতিতে চিনি তৈরি করেছেন। সুগারবিট প্রথমে স্লাইস মেশিনে কার্টিং করে ডিফিউজার মেশিনে মেশানো হয় এরপর ক্রডস অটো বয়লার মেশিনে দিলে গাঢ় বা ঘনত্ব হবে। এরপর কোল্ড ও ড্রাই দানা কাটিং রিফাইনিং মেশিনে দিলে তৈরি হবে চিনি।
শীত প্রধান অঞ্চলে ফসল সুগার বিট থেকে চিনি ও গুড় উৎপাদনের গবেষনায় এরই মধ্যে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষনা ইনষ্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সফলতা পেয়েছেন। এখন দেশে এই অটোমেশিনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে চিনি ও গুড় তৈরি করা সম্ভব। কৃষি যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন তার নতুন আবিস্কার সুগার বিট অটোমেশিনসহ তার তৈরি পামওয়েল অটোমেশিন, গো-খাদ্য মেশিন, পাটের রিবন রেটিং সালকরন মেশিন ও কৃষি যন্ত্রপাতি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
