রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ফলের দোকান ও ফল আড়ৎ গুলোতে ফরমালিন, কীটনাশক ও বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত আম, জাম, লিচু, মাল্টা, আপেল, খেজুর, কাঠাল ও কলা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এসব ফল খেয়ে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ। রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে সাড়াশি কোন অভিযানে না নামলেও হঠাৎ করে গত শুক্র ও রবিবার রামগঞ্জ শহরের ২টি ফলের আড়ৎ ও ৩/৪টি ফুটপাতের ফল দোকানে অভিযান চালিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করে ২৩ ক্যারেট আম, ২০ কেজি মাল্টা, ১৫ কেজি খেজুর জব্দ করে ধ্বংস করে দেন। এ সময় ফরমালিন যুক্ত আম, মাল্টা ও খেজুর বিক্রি ও সরবরাহের দায়ে অভিযুক্ত ২টি আমের আড়ৎ সহ কয়েক জন ফল ব্যবসায়ীর অর্ধ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়।
জানা গেছে, গত শুক্রবার ২০ জুন সকাল ১১টার দিকে রামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট কাজী মাহবুবুল আলম রামগঞ্জ-সোনাইমুড়ি সিএনজি স্টান্ড সংলগ্ন চৌরাস্তার মোড়ে ফুটপাতের ৩টি ফলের দোকানে অভিযান চালিয়ে ফরমালিন মিশ্রিত প্রায় ২০ কেজি মাল্টা, রামগঞ্জ কাঁচা বাজার সংলগ্ন একটি কনফেকশনারী দোকান থেকে ফরমালিন মিশ্রিত ১৫ কেজি খেজুর জব্দ করে ধ্বংস ও ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় শহরের সাইনবোর্ড বিহীন মেসার্স জলিল মজুমদার আড়তে অভিযান চালিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করে মজুদকৃত ৭শত ক্যারেট আম জব্দ করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু জব্দকৃত আমগুলো ওইদিন ধ্বংস না করে ওই আড়তে রেখে তালা লাগিয়ে দিয়ে যান। পরে গত রবিবার ২২ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট কাজী মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট কামরুল হাসান খান ও রামগঞ্জ পৌরসভার স্যনিটারী ইন্সúেক্টর মোঃ আলমগীর কবির জব্দকৃত আমের আড়তে এসে তালা খুলে পুনরায় ফরমালিন পরীক্ষা করে ৭শত ক্যারেট আমের মধ্যে ১৮ ক্যারট আমে ফরমালিন আছে বলে ঘোষণা করেন। পরে সেগুলো ধ্বংস করা হয়। এসময় এই আমের আড়তে রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, ওই আড়তের পিছনে আরো কয়েকটি কক্ষে কয়েক শত ক্যারেট আম ছিল সেগুলো পুনরায় পরীক্ষা করা হয়নি। অনেকে পরীক্ষা করার কথা বললেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা আমলে না নিয়ে বলেন, এগুলোতে ফরমালিন নেই আগে পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়াও রবিবার রাত ৮টার দিকে সাইনবোর্ড বিহীন মেসার্স একতা টেড্রার্স নামের পার্শবত্তি আরেকটি আমের আড়তে অভিযান চালিয়ে মজুতকৃত আম পরীক্ষা করে ৫ ক্যারেট আমে ফরমালিন আছে বলে জব্দ করে ধ্বংস ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সূত্রে আরো জানা গেছে, রামগঞ্জ শহরে আরো কয়েকটি আম, কাঠাল ও কলার আড়ৎ ও ২৫/৩০টি ফলের দোকান রয়েছে। এসব আড়ৎ ও ফল দোকানের ফলগুলোতে ফরমালিন থাকতে পারে। কিন্তু ভ্রাম্যমান আদালতের অব্যাহত জোরালো কোন অভিযান না থাকায় অসাধু ফল ব্যবসায়ীরা অবাধে ফরমালিন মিশ্রিত ফল বিক্রি ও সরবরাহ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বড় মাছ, টমেটু, মিষ্টি, দধি সহ সহজে পঁচনশীল খাদ্য দ্রব্যে ফরমালিন ও বিষাক্ত ক্যামিকেল মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর হাত ও জটিল রোগ থেকে বাচাঁতে দ্রুত প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণের দাবী রামগঞ্জ বাসীর। সচেতন মানুষের প্রশ্ন কবে মুক্তি পাবো এসব বিষাক্ত ফলের হাত থেকে?
