ads

শনিবার , ২১ জুন ২০১৪ | ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

পেশা ও শিক্ষা সংকটে বিপথগামী হচ্ছে হৃষি সম্প্রদায়

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
জুন ২১, ২০১৪ ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

॥ এস, এম, আজিজুল হক ॥

Azizসম্প্রদায়গত নাম হৃষি। এলাকা ভেদে মুচি বা চামার বলে অভিহিত করা হয় এদের। মুল জনগোষ্ঠীর ভিতরে বসবাস করেও এরা ভিন্ন ধারার জীবন যাপনে অভ্যস্থ। এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেনা। সুনির্দিষ্ট একটি পাড়া বা মহল্লায় এদের বসবাস। যে পাড়া বা মহল্লার অন্য কোন নাম থাকলেও তা মুলত মুচিপাড়া বা হৃষিপাড়া হিসেবে পরিচয় বহন করে।
হাজার বছরের পুরোন ট্রেডিশনাল পেশায় আজো অষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পরে আছে এই হৃষি সম্প্রদায়। ফেলে দেয়া মরা গবাদী পশুর চামরা সংগ্রহ ও এলাকায় জবেহ করা গবাদী পশুর চামড়া ক্রয় করে তা প্রক্রিয়াজাত করে মহাজনদের কাছে বিক্রি করাই এদেও মুল পেশা। ছেড়া স্যান্ডেল জুতা মেরামত ও রং করাসহ বেতের গৃহস্থালী তৈজসপত্র (ধামা, কাঠা, ডালা, দাঁড়িপাল্লা, ঢাল ইত্যাদী) তৈরি করাও এদেও পেশার অন্তর্ভুক্ত।
হৃষি সম্প্রদায়ের মধ্যে লেখাপড়ার কোন বালাই নেই। দু’একটি পরিবার থেকে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠালেও অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা তাদেরকে সহজ ভাবে গ্রহন করেনা। নানা অপমানজনক কথা ও আচরনের শিকার হতে হয়। ফলে এরা আর স্কুলে যায়না। হৃষি সম্প্রদায়ের মানুষজনের মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার আলোর ছোয়াও লাগেনি।
রোগব্যাধি জড়ায় এখনও হৃষি সম্প্রদায়ের মানুষেরা ঝারফুক তাবিজ কবজে বেশী বিশ্বাস করে। ফলে এই সম্প্রদায়ের বেশীর ভাগ মানুষ বলতে গেলে রোগশোককে জীবনের এক অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে জীবন যাপন করে থাকে। বড় ধরনের অসুখবিসুখ হলে এদের বেশীর ভাগ মানুষ গ্রাম্য হাতুরে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
শুধু বাংলাদেশ কেন, বরং পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে বিয়ে হয় হৃষি সম্প্রদায়ের মেয়েদের।। শতকরা ৮০ শতাংশ মেয়েদের বিয়ে হয় ৯ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্যে। ফলে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশী। তাছাড়া বাল্য বিয়ের প্রবনতার কারনে হৃষি সম্প্রদায়ের মায়েরা সাধারনত অপুষ্ঠ শিশুর জন্ম দিয়ে থাকে। এই অপুষ্ঠ শিশুরা সারা জীবন তাদের জন্মগত অপুষ্ঠতার অভিষাপ বয়ে বেড়ায় এবং এদের অধিকাংশেরই অকাল মৃত্যু হয়ে থাকে। একমাত্র বাল্য বিয়ের কারনে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার যেমন বেশী, তেমনি অপুষ্ট শিশু জন্মের হার এবং অকাল মৃত্যুর হারও তেমনি বেশী। ফলে হৃষি সম্প্রদায়ের মেয়েদের মধ্যে অতি অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার হারও সবচেয়ে বেশী।
হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী পৈত্রিক পেশা ছাড়া অন্য পেশার প্রতি যেমন এই সম্প্রদায়ের মানুষের তেমন আগ্রহ নেই, পাশাপাশি মুলধারার গনমানুষের প্রচলিত পেশায় প্রবেশ করাও এদের জন্য সহজ নয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে গবাদী পশুর মড়ক নাই বললেই চলে, উপরন্তু যদিও বা দু’একটি গবাদী পশু অনাকাঙ্খিত ভাবে মারা যায়, পশু মালিক সেই মরা পশুকে মাটিতে পুতে রাখে। ফলে মাগনা পাওয়া মৃত পশুর চামড়া মুচিদের ভাগ্যে আর জোটেনা। অন্য দিকে চামড়ার দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ও চামড়া ক্রয় বিক্রয় ব্যবসায় অধিক হারে বিত্তশালী মুসলমান ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশের ফলে এক্ষেত্র থেকেও বিতারিত হয়েছে হৃষি সম্প্রদায়।
জুতা স্যান্ডেল প্রস্তুতে চামড়ার বদলে কৃত্তিম তন্তুর ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এ গুলো ছিড়েছুটে গেলে মেরামতের জন্য মুচির পরশের দরকার হয়না। কৃতিম তন্তু দিয়ে তৈরি জুতা স্যান্ডেলে রং বা কালি করার খুব একটা প্রয়োজন হয়না। ফলে এ পেশায়ও পরেছে ভাটা।
বেতের সহজ লভ্যতা হ্রাস, প্লাস্টিকের তৈজসপত্রের আধিক্য ও বাজার ব্যবস্থাপনার ত্র“টির কারনে ধামা, কাঠা, ডালা, দাঁড়িপাল্লা, ঢাল ইত্যাদী তৈরি করে দু’পয়সা রোজগারের পথ চির বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক চাহিদা পুরনের জন্য প্রচলিত ধারার বিভিন্ন পেশায় প্রবেশ করেও টিকতে পাছেনা এই হৃষি সম্প্রদায়। চুল কাটার সেলুনে কাজ করতে গেলে এদের দিয়ে মুলধারার মানুষেরা চুল কাটাতে দ্বিধাবোধ করে। ফলে সেলুন মালিকেরা কর্মচারী হিসেবে এই সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়োগ করতে চায়না। মুদিখানা দোকান বা ছোট খাটো ব্যবসা করতে গেলে একই ধরনের সমস্যায় পড়ে পুজি খোয়াতে হয় এদের। পৈত্রিক পেশার ক্ষেত্র সংকোচন ও মুলধারার আধুনিক পেশায় প্রবেশের ক্ষেত্রে সম্প্রদায়গত বাঁধার কারনে হৃষি সম্প্রদায়ের মানূষেরা অর্থনৈতিক কারনে আজ নানা অপরাধ সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। ছিচকে চুরি, পকেট কাটা ও নেশাজাতীয় দ্রব্য কেনা বেচার সাথে তারা দিন দিন জড়িয়ে পড়ছে আশঙ্কাজনক ভাবে। এই সম্প্রদায়ের প্রাপ্ত বয়স্কদের পাশাপাশি অধিকাংশ শিশু আজ বিপথগামী। নেশার কালো থাবা হৃষি সম্প্রদায়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে। হতাশার দুঃস্বপ্ন থেকে পরিত্রান পাওয়ার মানসে ও আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির আশায় নেশারজগত এখন হৃষি সম্প্রদায়ের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সরকারী ও বেসরকারী অনেক সংস্থা নানা কর্মসুচি নিয়ে কাগজে কলমে মাঠ গরম করছে। উন্নয়নের ঢাকঢোল পিটাতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে সরকার ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলো। বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলো বৈদেশিক অর্থ দিয়ে পতিতাদের উন্নয়নে কাজ করছে, ভাসমান পতিতা নিয়ে কাজ করছে, সুইপার নিয়ে কাজ করছে, সমাজের অপরাপর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করছে। পক্ষান্তরে মুচি বা হৃষি সম্প্রদায়ের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সরকারী বা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনা। দু’একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাকে তাদের বানিজ্যিক কার্যক্রম ক্ষুদ্র ঋনের কাজ করতে দেখা যায়। ক্ষয়িষ্ণু মানবিক মুল্যবোধ ফিরিয়ে আনা, শিক্ষার সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও আয়ের আধুনিক ও স্থায়ী পন্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে হৃষি সম্প্রদায় নিয়ে সরকারী বা বেসরকারী কোন উদ্যোগ না থাকায় এই সম্প্রদায় আজ বিলুপ্তির পথে।
দেশের অন্যান্য জেলার মত পাবনা জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায়ই রয়েছে হৃষি সম্প্রদায়ের বসবাস। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা ও ফরিদপুর উপজেলায় এদের সর্বাধিক বসবাস। একমাত্র সাঁথিয়া উপজেলার করঞ্জা, বিষ্ণুপুর, সাঁথিয়া পৌর এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার হৃষি সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। এদের মধ্যে একমাত্র করঞ্জা ইউনিয়নেই প্রায় দু’হাজার হৃষি সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। আর এই করঞ্জাই এখন জেলার অন্যতম মাদক স্পট হিসেবে বেশ সুপরিচিত। এই করঞ্জায় পুলিশ কর্তৃক মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী আটক ও ছাড়ার নাটক চলে প্রতি নিয়ত। আদালতে সোপর্দের ঘটনাও নেহায়েতই কম নয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে বলে মনে হয়না। কারন এখানে মাদক ব্যবসায়ী বলে যাদের আটক করা হয়, তারা মুলত চুনোপুটি। এদের পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক আশির্বাদপুষ্ট বিত্তশালী গডফাদার। যারা সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে। তবে আটক চুনোপুটিদের জামিনের তদ্বিরকারকদের তথ্য যাচাই করলে থলের বিড়াল অনেক খানি বেড়িয়ে আসবে। হৃষি সম্প্রদায়ের জীবন যাপনের মান আজ সর্ব নিম্ন পর্যায়ে। সমাজের মুল ধারার গণমানুষের সাথে বসবাস করেও তারা অধিকারের ক্ষেত্রে সব সময় থাকছে বঞ্ছিত। লাগসই প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করে পেশাগত উন্নয়ন মাধ্যমের তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার চাকা সচল করতে না পারলে দিনে দিনে তারা অপরাধ জগতের অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।

Shamol Bangla Ads

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, পাবনা।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!