এম,এস,আই শরীফ, ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : ভোলাহাটসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলিতে এ মধুমাসে জমে উঠেছে আমের বাজার। সূর্যোদয় হতে সারা রাতভর চলছে বেচাকেনা। প্রতিবছর এ মৌসুমে আম-জাম, কাঠাল, পেঁয়ারা-লিচুর রসে টইটম্বুর স্বাদে ভরা মাস বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ। এমনি ভাবে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে চলেছে আমচাষীরা তাদের বাৎসরিক বর্ধিত আয়ের জন্য কাঁচা-পাকা আম আহরনের আশায়। আর সে আম নিয়ে মনের সুখে বিক্রি-বাট্টায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন, ভোলাহাট উপজেলার সকল স্তরের আমচাষী, আমব্যবসায়ী আর আড়তদারেরা। ভোলাহাট আম ফাউণ্ডেশনের আমের বাজারে আমচাষী, ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারসহ সাধারণ লোকের সমাগমের ব্যস্ততায় বাজারে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে দাড়ায় রাস্তা পারাপরেরর। আর এ মৌসূমেই গ্রাম-গঞ্জের বধুরা তৈরী করে থাকে বিভিন্ন আমের নানা আচাড়-চাটনী। যার স্বাদের বর্ণনার কথা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। কবি বলেছেন, “গুঠি ফজলী আশ্বিনা লক্ষণ তোতা পরি, খিরশাপাত গোপালভোগ ল্যাংড়া খাইতে মজা ভারী”। এ সময় আমচাষীরা মহা আনন্দে তাদের বিভিন্ন কাজে-কামে ব্যস্ত সময় কাটায়। একবিন্দু সময় নেই তাদের। আমচাষীরা কেউ কেউ সারাটা দিন পাড় করে দেয় টুকরী তৈরী করার কাজে। ফের কেউ ঐ টুকরীতে আম গোঝানোই ব্যস্ত। কেউ আমের টুকরী ট্রাকে লোড দেওয়া পর্যন্ত মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আমচাষী ও আড়ৎদারেরা। এবারের আম ব্যবসায়ী ও আমচাষীরা আমের দাম বেশী হওয়ায় আরো বেশী মনোনিবেশ করেছে তারা এ কাজে। ভোলাহাট উপজেলার আম বেচাকেনার জন্য প্রানকেন্দ্র নামে খ্যাত “ভোলাহাট আম ফাউণ্ডেশন”। আর উপজেলার সর্বস্তরের আমচাষী একমাত্র এই স্থানেই বেচাকেনা করে থাকে। দ্বিতীয় আ কোন আমের বাজার নেই। এমনকি তাদের মধ্যে বাধাধরা নিয়ম-কানুন করা রয়েছে, যা তারা (আমচাষীরা) মানতে বাধ্য। এমনকি এ নিয়ম না মানলে অবাধ্যকারীদের জন্য শাস্তিও বিধান রয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, এই আম ফাউণ্ডেশনের সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সকল আমচাষী এবং আড়তদারগণকে নিয়ে সম্প্রতি আলাপ-আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমে বা আমজাত দ্রব্যে ভেজাল(ফরমালিন, কার্বাইড বা কোন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্যাদি) করলে তা প্রমাণিত হলে তাদের জরম শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি উপজেলার মধ্যে ভোলাহাট উপজেলার আম খুবই ভালো ও সম্পূর্ণ ভেজালমক্ত এবং চাহিদা অনুপাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় এর সুখ্যাতি রয়েছে। প্রতি বছরেই আমের মৌসূমে ভোলাহাট উপজেলার একমাত্র আম বেচাকেনার কেন্দ্রবিন্দু “আম ফাউণ্ডেশন”। আর আম ফাউণ্ডেশনের বাজারের বিক্রয়কৃত আমের কোন বিকল্প নেই। আম ফাউণ্ডেশনের ভিতরে তাদের নিজস্ব জমিতে এবারের প্রায় ৮০ থেকে ৮৫টি আমের আড়ৎ বসেছে। গতবারেও ছিলো এ পরিমান আমের আড়ৎ। প্রতিদিন এ বাজারে বড় বড় ব্যবসায়ীরা চুক্তি মূল্যে বাগান কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে-বাজারে চালান করলেও বসে থাকে না এ এলাকার দরিদ্র ব্যবসায়ীরাও। এ ছাড়া প্রতিদিন ভোর হতে শুরু করে রাত্রি প্রায় ১১/১২টা পর্যন্ত চলে আম ব্যবসায়ীদের আম বেচাকেনা। উপজেলার গোহালবাড়ী গ্রামের আমচাষী ও ব্যবসায়ী আরমান আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, এবারের আমের মৌসূম শুরুর প্রথমের দিকে আমচাষীগণ ভীষণ চিন্তায় ছিলো, না জানি কখন প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা কালবৈশাখী নেমে আসে। কিন্তু মহান আল্লাহ তা’আলার পরম মহিমায় একদিকে যেমন ধানের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অপরদিকে বর্তমান আমের এখন ভরা মৌসূম। এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোন লক্ষণ নেই। সে কারণে এবারের আমের বাজার অত্যন্ত ভালো। আর এ কারণে আমাদের লাভের অংশটাও ভালো। সদর ইউনিয়নের আমব্যবসায়ী ও আম ফাউণ্ডেশন সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, এবারের আমের ফলন ভালো না হলেও আমের মূল্যের দিকদিয়ে আমরা বেশ পাচ্ছি। এর ফলে লোকশানের অংশটা পুশিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভোলাহাটের আমের বিশেষ ভাবে ফজলি আমের খ্যাতি রয়েছে। এ কারণে এখানকার আম অন্যান্য এলাকার আমের চেয়ে বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার ফুটানীবাজারের মোসাদ্দেক হোসেন বলেন বর্তমানে আম ফাউণ্ডেশনের বাজারে খিরশাপাত, গোপালভোগ ল্যাংড়া আম ২,৪০০ থেকে ২,৫০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আম্রপলি, লখনাসহ অন্যান্য গুঠি জাতীয় আম ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকা মন দরের মধ্যে বেচাকেনা হতে লক্ষ্য করা গেছে। আম ব্যবসায়ীরা বলেন এখান থেকে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, বরিশাল, টাঙ্গাইলসহ চট্টগ্রাম আম মোকামের উদ্দ্যেশ্যে প্রতিদিনই রাত্রির দিকে ট্রাক-মিনিট্রাক গুলো ছেড়ে যায়। এ ছাড়াও আভ্যন্তরীণ রোড লালমনিরহাট, বগুড়া, নাটোর, রংপুর, কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর উদ্দ্যেশ্যে চলছে একাধিক বাসেও এসব আম যাচ্ছে।
