কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ বাউল শিল্পী আবদুল করিম শাহ আর নেই। ১০ জুন মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টায় কুষ্টিয়া শহরতলীর চৌড়হাস ক্যানেলপাড়া এলাকার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাউল আবদুল করিম শাহর পালিত নাতি ছেলে জেসি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকালে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এরপর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। বাড়িতেই মারা যান।’
লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ লালন একাডেমি ও লালন ভক্ত অনুসারীরা বাউল আবদুল করিমকে একনজর দেখার জন্য সেখানে যান। কুষ্টিয়া জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ. গণি বলেন, ‘অসুস্থ বাউল আবদুল করিম শাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩১ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। সেখানে সমাজসেবার ইউনিট তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর রাখেন ও দেখভাল করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়।’ গত ৭ তারিখে কিছু সুস্থ হলে ঢাকা মেডিকেল থেকে তাকে তার পরিবার কুষ্টিয়া নিয়ে আসে।
বাউল আবদুল করিম শাহর শিষ্য আকমল ফকির বলেন, ‘ওস্তাদজী (বাউল আবদুল করিম শাহ) জীবদ্দশায় বলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর পর যেন তাকে মিরপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকায় তার মাজার গড়ে তোলা হয়। সেখানে মাজার করার জন্য ৪ কাঠা জমিও রয়েছে তার নামে।’ আনু ফকির নামে আরেক ভক্ত বলেন, ‘বাউল আবদুল করিম শাহর ধ্যান-জ্ঞান সবই লালনকে নিয়ে। জীবনের সবটুকু ব্যয় করেছেন লালন ও তার গানকে নিয়ে, বিনিময়ে অনেক কিছু পেয়েছেন।’
লালন একাডেমীর নির্বাহী সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘গত ৭ তারিখে আমরা লালন একামেডেমিতে মিটিং করেছি। তাকে কীভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা যায়। হঠাৎ ৯ তারিখ বিকেলে লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে বাউল আবদুল করিম শাহর আগমন ঘটলো। সে সময় তিনি জানান, ঢাকায় আর ভালো লাগলো না চিকিৎসা নিতে। তাই চলে এলাম আবার এই সাঁইজির ধামে। আমাকে তোমরা অধিবাস (রাতের খাবার) দেবে। পরে আমরা ইলিশ মাছ দিয়ে তাকে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। আর আজ আর তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার মৃত্যুতে যে পরিমাণ ক্ষতি হলো তা পূরণ হবার নয়।’
গত ১৯ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখানে তার সমস্যা পর্যালোচনা করে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩১ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। সেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার চিকিৎসার দেয়া হচ্ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়।
আবদুল করিম শাহর স্ত্রী রিজিয়া খাতুন জানান, সাহায্য-সহযোগিতার আবেদন নিয়ে লালন একাডেমি, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে ধর্ণা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। কেউ বলেছে দেখবো পরে আসেন, আবার কেউ বলেছেন আবেদন রেখে যান পাশ হলে ডাকবো। কিন্তু এতে কী তার চিকিৎসা হয়ে প্রাণ বাঁচবে। হায়রে দেশ, হায়রে জাতি, একি পদক প্রাপ্তির চরম প্রাপ্তি! একদিন যার কৃতিত্বের জন্য সম্মান করে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। সবধরনের সাহায্য সহযোগিতার আশা ছেড়ে অসুস্থ স্বামীকে বাঁচাতে আমি ভিক্ষাবৃত্তিও করেছি। এতকিছুর পরেও সরকার যখন অনুদান দিল তখন আর তাকে বাঁচাতে পারলাম না।’
