মো: আমির হোসেন আমু, দেবিদ্বার (কুমিল্লা) : কুমিল্লার দেবিদ্বারে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বখাটেদের কর্তৃক ইভটিজিং’র প্রতিবাদ এবং একটি জুয়ার আসর বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে ব্যাপক হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ফতেহাবাদ গ্রামের আশিকুর রহমান(১৭), জামাল খান(২৫), রুবেল খান(১৬), নাছির উদ্দীন(৩০), রোমন(৩০) ও জামাল হোসেন(২৬), আল আমীন(২২)সহ ২৫/৩০জনের একটি সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদল দেবিদ্বার পৌর এলাকার ফতেহাবাদ গ্রামে ওই তান্ডব চালায়।
সন্ত্রাসীদের হামলা চলাকালে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা এসময় গৌরাঙ্গ চন্দ্র সূত্রধর এবং রবীন্দ্র চন্দ্র বীরের বাড়িতে হামলা চালানোর সময় রাত জেগে অনুষ্ঠান পালন শেষে ঘুমন্ত নারী, পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু ও অতিথিরাও রেহাই পায়নি। হামলায় অন্ততঃ ১০জন আহত হলেও মারাত্মক আহত অধীকার চন্দ্র মজুমদার(৪৫), তার স্ত্রী অনিতা রানী মজুমদার(৩০), কণ্যা জোনাকী রানী মজুমদার(১০), স্বজল দত্ত(৫০)কে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তী করা হয়েছে। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) রোকেয়া বেগম অভিযান চালিয়ে ফতেহাবাদ গ্রাম থেকে অহিদ ড্রাইভারের ছেলে রোমন(৩০) ও আব্দুল হান্নান’র ছেলে আল আমীন(২২)সহ দুজনকে আটক করে নিয়ে আসে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দেবিদ্বার পৌরএলাকার ফতেহাবাদ গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের “ফতেহাবাদ লোকনাথ ব্রক্ষèচারী আশ্রম মন্দিরে” ৬দিন ব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলার পঞ্চমদিন মঙ্গলবার রাত ৯টায় একদল বখাটে মন্দীর’র উত্তর পার্শ্বে ফতেহাবাদ গ্রামের আজু খানের ছেলে আশিকুর রহমান(১৭)’র নেতৃত্বে একটি জুয়ার আসর বসায়। ওই জুয়া খেলা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে “ফতেহাবাদ লোকনাথ ব্রক্ষèচারী আশ্রম মন্দির’’র ভক্ত ও অনুসারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকনাথ ব্রক্ষèচারী আশ্রম মন্দি’র সভাপতি মানিক রায় ঘটনাস্থল থেকে জুয়ার আসর উচ্ছেদ করতে আয়োজকদের অনুরোধ জানান। এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এঘটনার কিছুক্ষণ পর এক কিশোরী মন্দীর থেকে বেড়িয়ে ঘরে যাওয়ার সময় আজু খানের ছেলে আশিকুর রহমান ওই কিশোরীর হাত ধরে টানা হেচড়া শুরু করলে, কিশোরীর ভাই সোহাগ মজুমদার(২০) বাঁধা প্রদান ও ওই ঘটনার প্রতিবাদ করে। এসময় স্থানীয়রা বখাটে আশিক’র আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে আশিককে চর-থাপ্পর ও কান ধরে উঠ-বস করিয়ে ছেড়ে দেয়। ঘটনার কিছুক্ষন পর আশিক তার সমর্থকদের নিয়ে দা, লাঠি, রডসহ বিভিন্ন মরনাস্ত্র নিয়ে ইভটিজিং’র প্রতিবাদকারী সোহাগ মজুমদার’র বাড়ি ঘেরাউ করে। সংবাদ পেয়ে দেবিদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই)সোহরাব হোসেন’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় গ্রামের আজু খানের ছেলে আশিকুর রহমান(১৭), ইব্রাহীম খান’র ছেলে জামাল খান(২৫), রুবেল খান(১৬), আনোয়ার আলীর ছেলে নাছির উদ্দীন(৩০), অহিদ ড্রাইভারের ছেলে রোমন(৩০), ও জামাল হোসেন(২৬), আব্দুল হান্নান’র ছেলে আল আমীন(২২)সহ ২৫/৩০জনের একটি সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদল বিভিন্ন মরনাস্ত্র নিয়ে অধীকার চন্দ্র মজুমদার’র বাড়িতে হামলা চালায়। রাত জেগে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করায় ওই বাড়ির লোকজন ঘুমিয়ে ছিল। এসময় ঘরের দরজা-জানালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। হামলায় ঘরের লোকজন ছাড়াও লোকনাথ ব্রক্ষèচারী আশ্রম’র ধর্মীয় অুনুষ্ঠানে আগত অতিথিরাও রেহাই পায়নি। হামলাকারীরা ঘুমন্ত অধীকার চন্দ্র মজুমদার(৪৫)’রকে ডেকে উঠিয়ে বেধরক পিটিয়ে আহত করে, এসময় তার স্ত্রী অনিতা রানী মজুমদার(৩০) এগিয়ে আসলে তার উপরও নির্যাতন চালায়, নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি অধীকার চন্দ্র মজুমদার কণ্যা কিশোরী জোনাকী রানী মজুমদার(১০), ব্রাক্ষণবাড়িয়া’র কসবা উপজেলার দূর্গাপুর গ্রাম থেকে বেড়াতে আসা গৃহবধূ চম্পা সূত্রধর(২৫)। হামলাকারীরা ঘরের আসবাব সামগ্রী, ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ করেন ভোক্তভূগীরা।
বেড়াতে আসা চম্পা সূত্রধর জানান, লোকনাথ ব্রক্ষèচারী আশ্রম’র ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আমার স্বামীর বড় বোন অনিতা রানী মজুমদারের বাড়িতে বেড়াতে আসি। হামলা কারীরা আমার ভগ্নীপতি অধিকার মজুমদারকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে অমানবিক ভাবে মারধর করে, এসময় আমিও ওদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে রেহাই করেনি।
ফতেহাবাদ গ্রামের রবীন্দ্র বীর’র স্ত্রী সুনিতী বীর জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় স্বজল দত্ত(৫০) বাজারে যাওয়ার সময় তাকে রাস্তা দেখে ২৫/৩০জন লাঠি-সোটা, রড, বৈদ্যুতিক তার নিয়ে মারার জন্য দৌড়ে আসে। এসময় সে আমাদের ঘরে পেছনের খুপরিতে লোকিয়ে পড়ে। আমরা দরজা বন্ধ করে দিলে সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে তাকে খুঁজে বের করে অমানবিক ভাবে মারধর করে। মারের চোটে সে পায়খা করে দেয়, সন্ত্রাসীরা আমার ঘরের পূঁজার মন্দির, আসবাব সামগ্রী ভাংচুর, নগদ টাকা, ৪টি মোবাইল সেট ও অন্যান্য সামগ্রী লুটে নেয়।
‘ফতেহাবাদ লোকনাথ ব্রক্ষèচারী আশ্রম মন্দির’র সভাপতি মানিক রায় জানান, লোকনাথ ব্রক্ষèচারী আশ্রম’র ৬দিনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলছিল, কয়েক হাজার ভক্ত-অনুসারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও জুয়ার আসর বসা এবং এক কিশোরীকে শ্লীলতা হানীর চেষ্টার ঘটনায় কিছুক্ষনের মধ্যে অনুষ্ঠানস্থল ফাঁকা হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা যাতে আমাদের উপর ক্ষুব্ধ না হয় সেজন্য রাতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশও সরিয়ে দেই। তার পরও আজ সকালে ঘুমন্ত বাড়ির লোকদের উপর হামলা, লুট-পাট এবং ভাংচুর চালায়।
