স্টাফ রিপোর্টার : শেরপুরে রড দিয়ে পিটিয়ে শিশু গৃহ পরিচারিকাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে এক পাষন্ড গৃহকর্ত্রী। ২ জুন সোমবার বিকেলে শহরের নাগপাড়া মহল্লায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গৃহকর্ত্রী সালমা জাহান সাথীকে (২২) আটক করেছে পুলিশ। সে স্থানীয় এস.এম. মমিন সীমান্তের স্ত্রী। নির্যাতিত শিশু খাদিজা বেগমকে (৯) আহতাবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খাদিজা পার্শ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের দক্ষিণ নাকশী গ্রামের লিয়াকত আলীর মেয়ে।

জানা যায়, অভাবের কারণে ৪ মাস আগে খাদিজাকে শেরপুর জেলা শহরের নাগপাড়া মহল্লার বাসিন্দা এস.এম.মমিনের বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজে দেওয়া হয়। মমিন ১০ বছর যাবত দক্ষিণ আফ্রিকায় থেকে ব্যবসা করছেন। শেরপুর শহরের বাসায় তাঁর স্ত্রী সালমা জাহান ৭ মাসের শিশু কন্যাকে নিয়ে বসবাস করেন। মূলত. শিশু কন্যাকে দেখাশুনা করার কথা বলে খাদিজাকে কাজে নিয়ে এলেও সালমা তাকে (খাদিজা) দিয়ে রান্নাবান্নার কাজও করাতেন। কোনো কাজে পান থেকে চুন খসলেই সালমা গৃহপরিচারিকা খাদিজাকে প্রায়ই মারপিট করতেন। নির্যাতনের ঘটনার সংবাদ পেয়ে স্থানীয় মানবাধিকার সোসাইটির সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন ও স্থানীয় সরকার উন্নয়ন সম্পাদক এ.টি.এম. জাকির হোসেনের সহযোগিতায় শিশু গৃহপরিচারিকা খাদিজাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় খাদিজা কান্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, ‘আইজ সকালে বাবুর (সালমার শিশু কন্যা) জন্য খিচুরি রান্না করার সময় খিচুরি পুইড়া যায়। এতে খালা (সালমা) আমার ওপর ভীষণ খেইপ্যা যায় এবং আমাকে পর্দা টানানোর স্টিলের রড ও ঝাড়– দিয়া সারা শরীরে খুউব মারধর করে। অহন আমার শরীরে খুউব ব্যথা করতাছে এবং পুরা পিঠ কালো দাগ অইয়া ফুইল্যা গেছে।’ খাদিজার বাবা দিনমজুর লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমার তিন ছেলেমেয়ে। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের দুইবেলা খাবার দিবার পারিনা। তাই শিশু খাদিজাকে সালমা আপার বাসায় কাজ করতে দিছিলাম। কিন্তু তিনি (সালমা) যে এইভাবে আমার মাইড্যারে মারবো তা কল্পনাও করবার পারি নাই। অহন আমি এই ঘটনার জন্য সালমার বিচার চাই।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গৃহকর্ত্রী সালমা জাহান অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘আজ সকাল থেকে আমার শিশু মেয়েটি না খেয়ে ছিল। বারবার বলা সত্বেও খাদিজা আমার কথা ঠিকভাবে শুনছিলনা। তাই রাগের মাথায় তাকে মারপিট করেছি।’ তবে এর আগে কখনও খাদিজাকে মারধর করেননি বলে তিনি দাবি করেন। শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম জানান, ওই ঘটনায় শেরপুর সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গৃহকর্ত্রী সালমা জাহানকে আটক করা হয়েছে।
