বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নাগরভিটা সীমান্তে বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিনকে (২৫) ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার তীনগাঁও ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা।
এলাকাবাসী ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কাশুয়া খাদেমগঞ্জ গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলেসহ ৮/৯ জন ব্যবসায়ী মিলে গত রবিবার রাত ১১টায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নাগরভিটা সীমান্তের ৩৭৬/৪ এস সাবÑপিলারের নিকট গরু কিনতে গেলে ওইসময় ভারতীয় উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার তীনগাঁও ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ধাওয়া করে মফিজ উদ্দিনকে আটক করে শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে আহত করার পরে তাকে ওপারের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় । এঘটনায় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে গতকাল সকালে নাগরভিটা বিজিবির পক্ষ থেকে পত্র প্রদানের মাধ্যমে বিএসএফ’র নিকট তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অপারেশন অফিসার মেজর মীর আলমগীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মফিজ উদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিএসএফর কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকেল ৪ টায় নাগরভিটা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে উভয় দেশের কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীকে ভারতীয় থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছে বলে বিএসএফ বিজিবিকে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত শনিবার দুপুর ১টায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলিয়াডাঙ্গী ৪নং কলোনীর বাসিন্ধা কুমির উদ্দিনের ছেলে কোরবান আলীসহ ৮/৯ জন গরু ব্যবসায়ী মিলে নাগরভিটা সীমান্তের ৩৭৬/৪ এস সাব-পিলারের বাংলাদেশের প্রায় ১শ’ গজ অভ্যান্তরে গরু কিনতে গেলে ওই সময় ভারতীয় উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার তিলগাঁও ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তারকাটা বেড়া পেড়িয়ে এপারে এসে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের লক্ষ করে এলোপাথারীভাবে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে গুলিবৃদ্ধ হয়ে গরু ব্যবসায়ী কোরবান আলী (২৫) গুরুতর আহত অবস্থায় কোন রকমে এপারে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলে পরে এলাকাবাসীদের সহায়তায় চিকিৎসার জন্য তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এঘটনায় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বিজিবির পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে পত্র প্রদানের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
অপরদিকে, পার্শ্ববতী জগদল সীমান্তে গত শনিবার সকাল ৭ টায় বাংলাদেশী শিশু হোসেন আলী (১২) কে ভারতীয় উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার তিলগাঁও ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে বিজিবি পত্র প্রদানের মাধ্যমে বিএসএফকে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। শিশুটিকে বিএসএফ তাদের ক্যাম্পে ৮ঘন্টা আটক রাখার পর ওইদিন বিকাল ৩টায় উভয় দেশের কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ বাংলাদেশী শিশু হোসেন আলীকে বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী রাণীশংকৈল উপজেলার চিকমাটি গ্রামের আব্দুল মাজেদের ১২ বছরের শিশু পুত্র হোসেন আলী বাবার প্রতি অভিমান করে ২ সপ্তাহ আগে ভারতে পাড়ি দেয়। গত শনিবার সকাল ৭ টায় রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তের ৩৭৫ মেইন পিলার দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে ভারতীয় উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপুকুর থানার তিলগাঁও ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যদের নজরে পড়লে তাকে ধাওয়া করে আটকের পর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে পরে তাদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। এঘটনায় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বিজিবির পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে পত্র প্রদানের মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। এব্যাপারে ঠাকুরগাঁও ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের নাগরভিটা সদর দপ্তরের কোম্পানী কমান্ডার শহিদুজ্জামান শহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হোসেন আলীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিএসএফর কাছে বার্তা পাঠানো হলে বিকাল ৩টায় জগদল সীমান্তের ৩৭৫ মেইন পিলারের জিরো পয়েন্টে উভয় দেশের কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশী হোসেন আলীকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেন।
