ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী : রাজশাহী বিভাগজুড়ে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে। ধর্মঘটের কারণে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মনজুর রহমান পিটার জানান, ২৬ মে সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার তার কার্যালয়ে বিভাগের ৮ জেলার বাস-ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, তার ওপর নির্ভর করবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে কি-না।তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আমাদের দাবিগুলোও ন্যায় সঙ্গত। এর আগে প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমাদের চলমান এই আন্দোলন স্থগিত ছিলো, এবার দাবী আদায় না হওয়া আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে সারা দেশেই এ আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া হবে বলেও উল্লেখ তিনি।এর আগে ছয় দফা দাবিতে গত ২০ মে থেকে টানা ২৯ ঘন্টার প্রতীক ধর্মঘট পালন করেন রাজশাহীর বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিকরা। পরে ২১ মে দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনকে ৭২ ঘন্টা সময় দেধে দেন। ওই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত রোববার থেকে বিভাগজুড়ে লাগাতার পরিবহণ ধর্মঘট শুরু করেন তারা।বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ঘোষিত ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, নসিমন, করিমন, ভটভটি, পাওয়ারটিলার, ট্রাক্টরসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ, সিএনজি, মাহেন্দ্র, থ্রিহুইলার, ইমা রুট পারমিট বহির্ভূত এলাকায় চলাচল বন্ধ ও রুট পারমিট প্রদান বন্ধ, লিজকৃত বিআরটিসি ও দ্বিতল বাস উপজেলা ভিত্তিক চলাচল বন্ধ, স্কেলের নামে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ, বিআরটিএর ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস এর বর্ধিত ফি প্রত্যাহার এবং সকল প্রকার পুলিশী হয়রানি বন্ধ।রাজশাহী বিভাগে অবৈধভাবে চলাচলরত ভটভটি, নসিম ও করিমন বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে মালিক ও শ্রমিক সমিতির ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।ধর্মঘটের কারণে বাসের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে মালবাহী ট্রাক ও ট্যাংকলরি। ফলে সড়কপথে রাজশাহীর সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। ট্রেন চলাচল করলেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত টিকিটি।এদিকে, যানবাহন না পেয়ে দূর-দূরান্তে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েও পথে পথে যাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশে মহানগরের শিরোইল, ভদ্রা ও রেলগেট বাস টার্মিনালে আসেন যাত্রীরা। কিন্তু বাস না পেয়ে কেউ বিকল্প যানবাহন কেউ বা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেককে রেল স্টেশনে ভীড় করতে দেখা যাচ্ছে।ধর্মঘটের ফলে ট্রেনের যাত্রী দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। এছাড়া পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রাজশাহীর আন্তঃজেলা রুটের যাত্রীরা। সিএনজি, হিউম্যান হলার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে নিজ গন্তব্যে রওয়ানা দিচ্ছেন।

ধর্মঘট জেনেও মহানগরীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষারত নাদের আলী নামের এক যাত্রী জানান, তিনি রংপুর যাওয়ার জন্য ভোর সাড়ে পাঁচটায় কাউন্টারে পৌঁছান। তার ঢাকা যাওয়া খুবই জরুরি। তার আশা ছিল ধর্মঘটের ডাক দিলেও সকালে তা প্রত্যাহার হতে পারে। কিন্তু তা হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি। যাত্রী দুর্ভোগের এমন কথা জানান, রায়হান, মাসুম, জয়নালসহ আরও অনেক যাত্রী।রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুনজুর রহমান পিটার জানান, ছয় দফা দাবিতে রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। গত ২১ মে নসিমন, করিমন, ভটভটি পাওয়ারটিলার ছাড়াও অবৈধ যানবাহন বন্ধসহ ছয় দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। দাবি না মানা হলে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল, যা শুরু হয়েছে রোববার সকাল ৬টা থেকে।রাজশাহী জেলা বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ৬ দফা দাবির মধ্যে অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- সিএনজি, মাহেন্দ্রা, ত্রি-হুইলার, ইমা, রুট পারমিট বর্র্হিভূত এলাকায় চলাচল এবং রুট পারিমট দেওয়া বন্ধ করতে হবে, লিজকৃত বিআরটিসি ও দ্বিতল বাস উপজেলা ভিত্তিক চলাচল বন্ধ করতে হবে, স্কেলের নামে ট্রাকের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে এবং সকল প্রকার পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলে জানান এ পরিবহন নেতারা।এদিকে সকালে রাজশাহী জেলা বাস-ট্রাক মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি মহানগরীর বাস টামির্নাল থেকে কামারুজ্জামান চত্বর হয়ে পুনরায় একই স্থানে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
