আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : আমতলী উপজেলাকে বিভক্ত করে তালতলী নতুন উপজেলায় রুপান্তরিত হওয়ায় জমির মুল্য বেড়ে যাওয়ার ফলে, প্রভাবশালী মহল, ভূমি দস্যুরা দখল করে নিচ্ছে বরগুনার তালতলী উপজেলার রাখাইন পাড়া, রাখাইনদের উপাসনালয় প্যাগোডা, দামী মূর্তি ও সংখ্যালঘু রাখাইন পরিবারগুলোর ফসলি জমি। রাখাইনদের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রভাবশালীদের মামলা দায়ের ও ভূমি দস্যুদের কালো থাবায়, ভয়ে অনেক পরিবারই রাখাইন পাড়া ছেড়ে দেশ ছাড়া। অনেকেই বালবাচ্চা নিয়ে পাড়ি জমিয়েছে সুদূর মায়ানমারে। সমষ্টিগতভাবে নিজেদের মধ্যে একতাবদ্ধ না থাকাকে দায়ী করছেন উপজেলা প্রশাসন।
২৫০ বছর পূর্বে মায়ানমার থেকে এসে বরগুনার তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫৬ টি পাড়ায় বিভক্ত হয়ে বসবাস শুরু করে রাখাইন পরিবারগুলো। তাঁত শিল্প এবং কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল এই রাখাইন সম্প্রদায়। সুদৃশ্য টোং পাতা সারিবদ্ধ ঘর রাখাইন পরিবারের আবাসস্থল। আধুনিক কালের ইমারতের তৈরী ঘরের সাথে এ ঘরগুলো সম্পূর্ণ বেমানান। কিন্তু অনেক রাখাইন পরিবার কিছু ভূমিদস্যুর দখলদারীত্বে ও অসাধু প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তের শিকার হয়ে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে চলে যাওয়ায় আজ এ ঘর গুলোর অবস্থা বিলুপ্ত প্রায়। রাখাইন পরিবারের তৈরী করা দু’একটি ঘর পুরোনো ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী হয়ে একদিন হয়ত পড়ে থাকবে এই রাখাইন পল্লীতে। ২০১৩ সালের মে মাসে তালতলী থানা উপজেলায় রুপান্তরিত হওয়ায় এখানকার জমির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল রাখাইনদের জমি দখলের চেষ্টা শুরু করে। হামলা, মামলা, হুমকিসহ নিরীহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রাখাইনদের ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন মামলা হয়রানীতে। এর প্রভাবে শুধু পরিবার নয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি রাখাইন পাড়া। বর্তমানে এ উপজেলায় মাত্র ১৩ টি পাড়ায় ৪৭৩ টি রাখাইন পরিবার বসবাস করছে। যারা অছে তারা হুমকি, বিভিন্ন মামলা হয়রানীর মধ্যে ভীত শন্ত্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক রাখাইন পরিবারের।
বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড অনুযায়ী তালতলী উপজেলা ও বরগুনা সদর উপজেলায় ঈঝ. জঝ এবং ঝঅ খতিয়ানের মালিক রাখাইন সম্প্রদায়। জাল দলিল, ভুয়া নিলাম, লুস খতিয়ান, ভুয়া বন্দোবস্ত, ভুয়া ওয়ারিশ এবং পাওয়ার অফ এ্যাটর্নীর মাধ্যমে স্থানীয় কতিপয় ভূমি দস্যু, রাজনৈতিক মহল এবং প্রশাসনের অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে গ্রুপ তৈরী করে বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পাড়াসহ অবৈধ ভাবে জবর দখল করে নিচ্ছে রাখাইনদের ফসলি জমি, এমনটি বললেন, তালতলী উপজেলার, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খেমংলা তালুকদার। রাখাইনদের এ সমস্যার কথা স্বীকার করে জমি রেজিষ্ট্রীর ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী তোফায়েল হোসেন।

রাখাইনদের ভূমি দখলসহ তাদের উপর নির্যাতনের ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আলী বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনের ব্যাপারে এ যাবৎ আমি কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো সাধারণত দেখে থাকেন এডিসি রেভিনিউ। রাখাইনদের প্রতি ভূমি দখলদারদের এ আচরণ অব্যহত থাকলে একদিন হয়ত এরা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। বিলীন হয়ে যাবে এই সংখ্যালঘু শান্তি প্রিয় রাখাইন সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব। অবিলম্বে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে সংখ্যালঘু রাখাইন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়, জমি-জমা, বিভিন্ন ধরনের দামী মূর্তিসহ জাীবনের পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে ভূমী দস্যু ও কুচক্রি মহলের হাত থেকে রক্ষা করা হোক এ দাবী রাখাইন সম্প্রদায়ের।
