তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা : কুমিল্লা সরকারী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী অপহরনের ৪ দিন অতিবাহিত হলেও এ পযর্ন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। বাদীনির লিখিত অভিযোগে জানাযায়, ২১ মে ভোরে ফজর নামাজ পড়ে মেয়েটি মেয়ের বাড়ির উঠানের পাশে রাস্তায় হাটাহাটি করার সময় একই এলাকার একদল বখাটে শ্রেনী ও চিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্যরা মেয়েটির মুখ ছেপে ধরে উঠিয়ে নেয়ার জন্য টানা হেচঁড়া শুরু করে। তার চিৎকার শুনে মেয়ের ছোটবোন ঘরের দরজা খুলে তাদের দেখে চিৎকার দিলে বখাটেরা ছাত্রীকে টেনে হেচঁড়ে সিএনজিতে তোলে নিয়ে পালিয়ে যায়। মেয়ের ছোটবোনের চিৎকার শুনে মেয়ের মা ঘুম থেকে উঠে আশেপাশে থাকা লোকজন কে নিয়ে বিভিন্ন দিকে খোজাখুজি করে। কোথাও সন্ধান না পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের কে জানান। স্থানীয় লোকজনের পরামর্শ নিয়ে আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে ২১ মে বিকাল আনুমানিক ৩ ঘটিকার সময় চিহ্নিত ৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামী করে কোতয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করে মেয়ের মা। আসামীরা হল চিনতাইকারী দলের সদস্য পিন্স (২২), পলিন (২৩), সজিব (২৫)। বর্তমানে মেয়ের মা মেয়ের শোকে জ্ঞান হারিয়ে মানসিক রোগে ভুগছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপহরন হওয়া কলেজ ছাত্রী উদ্ধারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। যে কোন মূল্যে তাকে উদ্ধার করা হবে।

আমার ছেলে শাওনকে জীবিত ফেরত চাই-শাওনের মা
কুমিল্লার যুবলীগ নেতা শাওন অপহরণের ঘটনায় র্যাবের ১৫ সদস্য’র বিরুদ্ধে মামলা
অপহরণের প্রায় ২মাসেও উদ্ধার হয়নি কুমিল্লার যুবলীগ নেতা শাওন। জীবিত ফেরত পেতে এখনো অফো শাওনের মা আনোয়ারা। প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বজনদের একটাই দাবি শাওনকে জীবিত ফেরত দিয়ে তার সন্তানের মুখে হাসি। কুমিল্লা মহানগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টারের বাসায় গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদকের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সার্জেন্ট এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজকীয় বাহিনীর দেহরী কাজী আবদুল মতিনের স্ত্রী ও অপহৃত যুবলীগ নেতা রকিবুল ইসলাম শাওনের মা আনোয়ারা বেগম। তিনি আপে করে বলেন, ‘আমার স্বামী এ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে। আর এ দেশের বাহিনীর লোকজনই আমার পোলারে নিয়া গেছে। আমার পোলা শাওনরে ফেরত চাই।’ এদিকে শাওনের কোন হদিস না পাওয়ায় কুমিল্লা র্যাব-১১ এর শেখ এনামুল হক, মোঃ নুরুজ্জামান, মোঃ রবিউল ইসলাম, মোঃ ছানাউল্লাহ, সঞ্জয় চাকমা, মোঃ ওসমান গণি, মোঃ মোশারফ হোসেন, মোঃ আবু ছালেক আহমেদ, মোঃ তারেক মিয়া, মোঃ নুরুল ইসলাম, সহদেব বর্মন, মোঃ জামাল হোসেন চৌঃ, ড্রাইভার সৈনিক মজনু মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম ও এ এস আই হুমায়ুন কবির (হুমায়ুন) কে আসামী করে কোতয়ালী থানার সিআর নং ৩৭২/১৪, তারিখ ২৭/০৪/১৪ইং এ মামলা দায়ের করেন। মামলার বিপরীতে কুমিল্লা আমলী আদালত -১ এর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অম্লান কুসুম জিষ্ণু আগামী ২৯/০৬/১৪ইং তারিখের মধ্যে কুমিল্লা জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা শাখাকে এর একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দ্দেশ দেন।
সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর যুবলীগ নেতা রকিবুল ইসলাম শাওন। পরিবারে ৪ ভাই এবং এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। ২০০৯ সালের ২৫ মে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষ্মীপাড়া গ্রামের ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) মো. নুরুল ইসলামের মেয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে ফারজানা আক্তার মুন্নীর সঙ্গে সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাসনুভা নুর রাইসা (৩) নামে তাদের একমাত্র মেয়ে রয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মার্চ ভোরে যুবলীগ নেতা শাওন তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। এ সময় র্যাবের হাতে আটক জনৈক আনোয়ারকে দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে শাওনের বাসায় অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পরে র্যাব-এর পরিচয়ে ২ জন গেঞ্জি ও প্যান্ট পরিহিত অস্ত্রসহ আরও ১৫/২০ জন কালো পোশাক পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী একটি দল শাওনের বাড়ির চারদিক ঘেরাও করে। এ সময় ঘরের দরজায় লাঠি দ্বারা জোরে আঘাত করতে থাকলে তার বাবা আবদুল মতিন ঘুম থেকে ওঠে দরজা খুলে পরিচয় জানতে চান। এ সময় কালো পোশাকধারী র্যাব পরিবারের সদস্যরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে বিভিন্ন কে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে শাওনকে ঘুমন্ত অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গাড়িতে তুলে। এ সময় তার স্ত্রী ফারজানা তাকে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তাকে হাতুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং শাওনের বাবা-মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারা শাওনকে নিয়ে একটি এক্সজিএল মাইক্রো এবং র্যাবেরই দুটি গাড়ি বিষ্ণুপুরের দিকে চলে যায়। শাওনের বাবা আবদুল মতিন বলেন, ঘটনার পর ওইদিন সকাল ১০টায় কুমিল্লাস্থ র্যাব-১১ শাকতলা অফিসে গিয়ে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব সদস্যরা জানায়, শাওন নামে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ ঘটনায় গত ৩১ মার্চ কোতয়ালী মডেল থানায় শাওনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার মুন্নী বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করেন । এখন শাওনের সন্ধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তপে কামনা করছি।’ এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘শাওনকে উদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।’ এ বিষয়ে কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর-এ সার্কেল) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে আমরা শাওনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি খোঁজখবর নিচ্ছি এবং তাকে উদ্ধারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’ তবে এ বিষয়ে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, ‘শাওনের পরিবারের প থেকে র্যাব-১১কে জড়িয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সঙ্গে র্যাব-১১ এর কোন সম্পৃক্ততা নেই।’
