হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন হয়ে এখনো পুরাতন জরাজীর্ন স্থাপনার মাঝে দাড়িয়ে আছে। জমিদার বাড়ির ভেতরের অট্টালিকা চমৎকার নৈপুন্যে কারুকাজে ভরা থাকলেও বাড়ির সামনে রয়েছে সু-বিশাল পুকুর ও বিস্তির্ন মাঠ। যা দেখে পথিকরা এখনো থমকে দাড়ায়। জমিদার বাড়ির নহবতখানা, দরবারগৃহ ও মন্দির বিশেষ স্থাপত্যের নিদর্শন আজও কালের সাক্ষী। পুরাতন এ বাড়িটি দেখতে প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী,সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ভীড় বাড়ছে।জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টি নন্দন করতে পারলে এটিও হতে পারে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানের একটি।

সূত্রমতে, খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে গাংগাটিয়া জমিদার বংশের পূর্ব পুরুষেরা রাঢ়ীয় ব্রাহ্মন গোত্রের জনৈক শাস্ত্রীয় পন্ডিত ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে এ দেশে এসে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালিন সময়ে গৌড়ীয় রীতি অনুযায়ী বাড়ির পতিত ভিটায় পুজা অর্চনার জন্য একটি শিব মন্দির তৈরি করেন। এ শিব মন্দিরটিই এ বংশের প্রথম নির্মিত মন্দির বলে এখনো দন্ডায়মান। ব্রাক্ষণ্য ধ্যান-ধারণা, পূজা-পার্বন, আচার অনুষ্ঠানে জমিদার পরিবার এ অঞ্চলে এক সময় বিশেষ প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জন করেন।অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে দীননাথ চক্রবর্তী হোসেনশাহী পরগনার এক ত্রিতিয়াংশ ক্রয় করে প্রথমে এ অঞ্চলে জমিদারী প্রথার সূচনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাবু অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী ‘পত্তনি’ সূত্রে আঠার বাড়ির জমিদার জ্ঞানদা সুন্দরী চৌধুরাণীর কাছ থেকে আরো দুই আনা-অংশ গাঙ্গাটিয়া জমিদারির সাথে অন্তঃর্ভূক্ত করেন। জমিদার অতুল বাবু ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইংরেজ আমলে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যে ব্যাপক প্রসার লাভ করে।তাদের পরবর্তী বংশধর খ্যাতিমান সাহিত্যিক গবেষক এবং হাইকোর্টের জজ দারনাথ চক্রবর্তী এ জমিদার পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমৃত্যু নিরলস চেষ্টা করেন।ফলশ্রুতিতে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পরও অদ্যবধি এ বাড়িটিতে জমিদারদের বংশধর মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী এখনো বসবাস করছেন। পর্যটকরা জমিদারের ছেলে সাথে সাক্ষাত করে কৌতুহল মিটানোর পাশাপাশি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন দৃষ্টি নন্দন গাংগাটিয়া জমিদার বাড়ীটি দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।
