ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ সপ্তাহ খানেক আগে শিশুপত্র নাহলকে চিকিত্সার জন্য বাড়ি নাটোরের সিংড়া সদর থেকে নিয়ে আসে রাজশাহী নগরীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু সেখান থেকে চিকিত্সক তাকে রেফার করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।সোমবার থেকে হাসপাতালের পনসেটি ক্লিনিকে তার চিকিত্সা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে রামেক হাসপাতাল সূত্র।গত সোমবার হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে এসেছিলো সাত মাস বয়সি শিশু নীলও। বেশ কিছু দিন ধরে চিকিত্সা চলছে তার।ফুট ফুটে নাহলের মিটি মিটি করা চোখের পাতা সবেমাত্র আলোর পরশ পেলো। মা আলেয়া বেগমের কোল জুড়ে ২২দিন আগে এসেছে সে, নাহলের জন্মের সময় পুরো পরিবারে বয়ে গেছে আনন্দের বন্যা। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ি হয়নি।যখনই তার কুসুম কমল দুটি পায়ের দিকে পায়ে চোখ পড়লে মা অলেয়া তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি । বাঁকা পা নিয়ে জন্মানো নাহলের ভবিষ্যৎ নিয়ে হয়ে পড়েন উদ্বিগ্ন। বাবা ওসমান গনিও পড়েন জীবন্ত পাথারে। আচ্ছনতায় ঢেকে যায় রঙিন স্বপ্ন।তবে নিকটাত্মীয়রা তাকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে চিকিত্সায় সব ধরণের রোগ নিরাময় সম্ভব এরপর থেকে মুহূর্তের জন্য হলেও সাহস হারাননি ওসমান গনি। এখন প্রায় সুস্থ্য সে। তার বাঁকা পা দুটি এখন প্রায় পুরোপুরি স্বাভাবিক। ছেলের এ সুস্থতায় খুশি মা শান্তা বেগম।শান্তা বেগম জানান, রামেক হাসপালের পনসেটি ক্লিনিকে শুরু হয় শিশু নীলের চিকিত্সা। প্রথম দিনই শিশুটির বাঁকা দু পায়ে দেওয়া হয় ব্যান্ডেজ। এরপর চলতে থাকে ধারাবাহিক বিনা খরচে চিকিত্সা। এরইমধ্যে বিনামূল্যে দেওয়া হয় ‘ক্লাবফুট সু, (বাঁকা পায়ের জুতা)। কয়েক সপ্তাহ পরে শিশুটির দু পায়ে করা হয় মাত্র এক মিনিটের ছোট্ট একটি অপারেশন। শেষে মাস কয়েক যেতে না যেতেই নীলের দু পা ফিরে এসেছে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায়।এদিকে, রামেক হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. বি কে দাম জানান, ২০১০ সালের ৫ মে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ চিকিত্সা কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সহযোগীতায় ওয়াক ফর লাইফ ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো শিশুদের আজীবন প্রতিবন্ধী জীবন ঘোচাতে এক যোগে কাজ করে যাচ্ছে।রামেক হাসপাতালের পনসেটি ক্লিনিক খোলা তাকে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। প্রায় সাড়ে তিন বছর সময়ের মধ্যে ৫৮৮ জন শিশুর সাড়ে ৮শ ক্লাবফুট বা মুগুর পা চিকিত্সার মাধ্যমে সাজা করা হয়েছে। সফলতার হার ৯০ শতাংশের উপরে বলে জানান তিনি।রামেক হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পনসেটি ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানকারী অর্থপেডিক সার্জন ডা. সাঈদ আহমেদ জানান, শিশুদের সুচিকিত্সার মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য এ প্রতিবন্ধীতা রোধে বাংলাদেশ ক্লাবফুট প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।অভিভাবকদের তথ্যদানের মাধ্যমে জন্মের পর থেকে ৩ বছর বয়স পেরুনোর আগেই শিশুদের ওয়াক ফর লাইফের পনসেটি চিকিত্সা কার্যক্রমের আওতায় আনতে হবে। এটি একটি কার্যকর সুলভ ও স্থায়ী চিকিত্সা পদ্ধতি। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে এ চিকিত্সা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ জটিলতায় অভিভাবকদের আতংকিত না হবার পরামর্শ দেন তিনি।
