রাজশাহী প্রতিনিধি : দীর্ঘ এক দশেরও অধীক সময় ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়া, অভ্যন্তরীন কোন্দল, লবিং গ্রুপিং ও রাজশাহীর স্থানীয় নেতাদের উদাসিনতার কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। কমিটিতে পদ পাওয়ার আশায় এতো দিন আহবায়ক কমিটির সদস্যরা যে যার মত করে গ্রুপিং ক্যাম্পাসে রাজনীতি করলেও দশম জাতীয় নির্বানের পর তারা এখন উধাও। ক্যাম্পাসে আহ্বায়ক কমিটিসহ ছাত্রদলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অনুেপাস্থতির কারণে দলের নবীন নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা। বাধ্য হয়েই তারা এখন ছাত্রলীগ, ছাত্র শিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোতে যোগদান করছেন। গত পাঁচ-ছয় মাস আগে যারা ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে তারাই এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছাত্রলীগে। এসব ছাত্রদল কর্মীরা আবার ছাত্রলীগের আবাসিক হল কমিটিতে পদ পেতে লবিং-গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সুবিধা পেতে তারাই আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে শুরু করেছে ‘সিট বাণিজ্য’।

সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয় ২০০২ সালে। ওই কমিটিতে মতিউর রহমানকে সভাপতি ও আসলামুদ্দৌলাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তীতে ২০০৫ সালে নূরুজ্জামান সরকার লিখনকে আহ্বায়ক করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ২২ মে আরাফাত রেজা আশিককে আহ্বায়ক করে ১২জন যুগ্ম আহ্বায়কের নাম উলে¬খ করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকেও পরিবেশ সৃষ্টি করে ছ’মাসের মধ্যে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ৪ বছর পার হলেও এখনও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি ছাত্রদল। এতোদিনেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার রাজশাহী মহানগর ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে দায়ি করে রাবি ছাত্রদলের আহবায়ক আরাফাত রেজা আশিক বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির দেওয়ার জন্যে বারবার পবিশেষ সৃষ্টি করেলও দলের অবকাঠামোগত জটিলতার কারণে তা করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ছাত্রদলের নেতৃত্ব সংকট ও ক্যাম্পাসে অনুপস্তিতির কারণে বিশেষ সুবিধা পেতে ছাত্রদলে সক্রিয় কর্মীরা এখন ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন দলে আশ্রয় নিচ্ছেন। হলে এখন তাদের বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নাম করে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকিও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হলে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে দিব্যি সাংগঠনিক কাজ করছেন কপিল। তিনিও ছাত্রদলের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য। তিনি পড়াশুনা করছেন ফলিত গনিত বিভাগে। তিনি এখন ওই হলে ছাত্রলীগের হল কমিটিতে সভাপতি হওয়ার জন্য লবিং-গ্রুপিং করছে বলে জানা গেছে। সৈয়দ আমীর আলী হলের ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী আসলাম হোসেনও একসময় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের মিছিল-মিটিং করতেন বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। তিনি ২০১১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরাফাত রেজা আশিকের গ্রুপে কাজ করতেন। তবে অনেক সময় তিনি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাসানের সাথেও কাজ করেছেন। কিন্তু কিছু সুবিধার জন্য তিনি এখন ছাত্রলীগে কাজ শুরু করেছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন ইতিহাস বিভাগের মো. রুবেল ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের আশরাফুল ইসলাম। এরা ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা গেছে। এছাড়াও ওই হলে যিনি ছাত্রলীগের সভাপতিপ্রার্থী বলে পরিয় দিচ্ছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সেলিম হোসেন। বর্তমানে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও ক্যাম্পাসে আসার পর ২০১১ সাল থেকেই ছাত্রদলে সাথে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে নিজেকে ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতৃর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের জিলানী। তিনি ২০১০ সালের শেষের দিকে ক্যাম্পাসে শুরু করেন ছাত্রদলের রাজনীতি। মাদার বখশ হলের শফিকুল ইসলাম নামের একজন বর্তমানে ছাত্রলীগের কাজ করছেন। তিনি এর আগে ছাত্রদলের হয়ে কাজ করেছেন। শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলে বর্তমানে ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা হিসেবে কাজ করছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের রনি, হীরক ও জীবন। তারা সবাই ২০১২ সালে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করেন বলে জানা গেছে। শামসুজ্জোহা হলে ছাত্রলীগ পরিচয়ে কাজ করছেন হৃদয় নামের এক ছাত্রদল কর্মী। এছাড়াও একাধিক ছাত্রদলকর্মী এখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও সিট বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতাকে সাথে নিয়ে একধিক শিক্ষার্থীকে কক্ষ থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন যুগ্ম-আহ্বায়ক বলেন, ২০১০ সালের ২২ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন নেতা এখন ছাত্রলীগ করছেন বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। গত বছরের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে আমাদের দলের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পর ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ভালো অবস্থান ছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী এখন বিভিন্ন সুবিধার আশায় ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছে।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য নিয়োগে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অমান্য

রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য নিয়োগে রাষ্ট্রপতির নিদের্শ না মানার অভিযোগ উঠেছে। রাষ্টপতি কর্তৃক মনোনীত উপ-উপাচার্য ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হলেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড উপ-উপাচার্য নিয়োগে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে রাষ্ট্রপতি ববারবর পাঠায়। প্রস্তাবকৃত উপ-উপাচার্যরা হলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. নূরুল কাউয়ুম, অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. তারিক সাইফুল ইসলাম। তাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ প্রফেসর ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে উপ-উপাচার্য হিসেবে মনোনীত করেন।
এ মর্মে রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে গত বৃহস্পতিবার একটি ফ্যাক্সবার্তাও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সাথে ওই শিক্ষকের ভালো সম্পর্ক না থাকায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করা থেকে বিরত রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া উপ-উপাচার্য হিসেবে মনোনীত মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে যোগদানে অনাপত্তিপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে রাষ্ট্রপতি বরবার পাঠানো হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ওসমান গণি বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি হাফিজুর রহমান এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি আজ (রোববার) দেশে ফিরবেন। তিনি ফিরলেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে বিস্তারিত জানানো হবে।
রাবি’র প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন বরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর এ এস এম শফীকুর রহমানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। এতে প্রফেসর হাবিবুর রহমান ও প্রফেসর সেলিনা পারভীন নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা, সহযোগী অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেনসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ নবীন শিক্ষার্থীদের রজনীগন্ধা ফুলের ছড়া উপহার দিয়ে বরণ করে নেন। নবীন বরণ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন বিভাগের শিক্ষার্থী মোসা. মনিরা জেসমিন ও সাবরিনা শহীদ।
