আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ও প্রশাসনিক সহায়তায় ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দি তিনজন প্রার্থীর দু’জনেই ভোট বর্জন করেছেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি সমর্থিত অ্যাডভোটেক আবদুল মজিদ তালুকদার ও বিএনপি বিদ্রোহী ফরহাদ হোসেন আক্কাস মৃধা ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন। ভোট বর্জন করা ওই দুজন প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টু ও তার সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্র প্রশাসনের সহায়তায় দখলে নিয়ে এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট কারচুপি করেছেন।

সকাল আটটায় যথারীতি ২৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহন শুরু হয়। নব-গঠিত উপজেলায় প্রথমবারেরমত ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। সকাল সাড়ে আটটা থেকেই পরবর্তি একঘন্টা বুথ গুলোতে পুরুষ ও নারী ভোটাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আলীরবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তৈয়ব আলী (৪৩) ও নুরুল ইসলাম (৬৫) নামের দুই ভোটারকে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সকাল ১০টার দিকে গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টু তার সমর্থকদের নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেন। পরে তারা ব্যালটে সিল দেন। খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা ওই কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা তাদের বাধা দেন। এ সময় তারা একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভোটাররা অভিযোগ করেছেন, জাকিরতবক দাখিল মাদ্রাসা, বেহালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলবুনিয়া সাইক্লোন শেল্টার, হরিণখোলা দাখিল মাদ্রাসা , দক্ষিন সওদাগারপাড়াসহ ২০টিরও বেশী কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা ভেতরে ঢুকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছেন।
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী নিজে ও তার সমর্থকরা কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে ইচ্ছেমত ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্সে পুড়েছেন । বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ফরহাদ হোসেন অভিযোগ করেন, ভোট নেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থক ও এজেন্টরা সকল কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল দেন।

দুপুর ১টার দিকে প্রায় সকল কেন্দ্র আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা দখলে নিয়ে ইচ্ছেমত ভোট ডাকাতি করে। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন প্রশাসনের সামনে প্রকাশ্য সিল পিটিয়ে বাক্স ভরলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে। তার নেতাকর্মীদের মারধর ভোট কেন্দ্র আসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করলে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। জাকিরতবক কেন্দ্রে তার কর্মী সাগর ও সাগরের পিতাকে পিটিয়ে আহত করছে । সরকার দলীয় প্রার্থীর সমার্থকরা এ ছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে তার নেতাকর্মীদের ওপর মারধর নির্যাতন করার অভিযোগ ও করেন । এদিকে নির্বাচন বর্জনের খবরের পর কেন্দ্রগুলোতে কোন ভোটার উপস্থিত হননি। কয়েক টি কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা যায় সরকার দলীয় সর্মাথক ছাড়া ভোটারদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনিরুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব ফরহাদ হোসেনের বানোয়াট অভিযোগ। ক্যামেরা ছিনতাই ও ব্যালটে সিল দেওয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন করার লক্ষ্যে আমাদের সব ধরনের প্রস্ততি ছিল।
