তাপস চন্দ্র সরকার কুমিল্লা প্রতিনিধি : ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি বিনিময়, ব্যালেট পেপার ছিনতাই, প্রিজাইডিং অফিসারকে মারধর করে ব্যালট পেপার ছিনতাই জ্বাল ভোটসহ বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কুমিলা আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষের কারণে কুমিলা সদর দক্ষিণের দু’টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্র দু’টি হলো-দুর্গাপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর ছায়া বিতান প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আফজল খান কমার্স কলেজ। কুমিলা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় এ দু’টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া কুমিলা সদর ও সদর দক্ষিণের প্রায় কেন্দ্রেই সকাল থেকে সংঘর্ষ চলছে। বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে ১৯ দলীয় জোটের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ৮টায় সদরের দক্ষিণ দুর্গাপুর ইউনিয়নের দিদার মডেল হাই স্কুল ভোটকেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ৬টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় উভয় গ্র“পের ৩জন আহত হয়।
আদশ সদর বামিশা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। সুবর্ণপুর কেন্দ্রে ৬শ’ ব্যালট প্যাপার ছিনতাই করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও রাছিয়া বাগবের আলীম মাদ্রাসা কেন্দ্রের সামনে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ৩ জন আহত হয়েছে।
সকাল পৌনে ১০টা থেকে একই ইউনিয়নের দৌলতপুর ছায়া বিতান প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের কর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়গ্র“পের তিনজন আহত হয়। সংঘর্ষের পর প্রায় ঘণ্টাখানেক ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে কেন্দ্র চালু করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশীদ জানান, সংঘর্ষ হয়েছে কেন্দ্রের বাইরে। এর বাইরে কিছু বলতে পারবো না। সদরের কালিবাজার ইউনিয়নের কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দু’টি ভোটকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ঢুকে ১৯ দলীয় এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়। এসময় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এসময় দুই/তিনজন আহত হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী অবস্থান করছে।
সকাল ১০টায় সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের বামিশা উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ঢুকে ১৯ দলীয় জোটের এজেন্টদের বের করে দিলে দু’গ্র“পের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৫ মিনিটের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।
কুমিলা সদরের পাঁচথুবী ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারকে মারধর করে ৬শ’ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চলাকালে এ হামলা ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল হালিম আরিফ বলেন, কয়েকজন দুর্বৃত্ত বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এ সময় আমি তাদের নিষেধ করলে তারা আমাকে ধাক্কা দেয় ও মারধর করে পেপারগুলো নিয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১০টায় সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের পিপুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিএনপির দুইজন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টায় সদরের পাঁচথুবী ইউনিয়নের বামইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের বাইরে গুলিবর্ষণ ও একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। সকাল ১০টায় সদর ৩ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর ছায়া বিতান প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করে ৬শ’ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুল হালিম আরিফ জানান, কয়েকজন দুর্বৃত্ত বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় আমি তাদের নিষেধ করলে তারা আমাকে ধাক্কা দেয় ও মারধর করে ব্যালট পেপারগুলো নিয়ে যায়।
বেলা ১১টার দিকে রতœবতী আলী আমেনা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও মাঝিগাছা আক্তারুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়, বামইল স্কুল এন্ড কলেজ এবং ভূবনঘর আবুল হোসেন আব্বাসী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সরকার সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে বিরোধীদলীয়দের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করার অভিযোগ রয়েছে। সুবর্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬০০ ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়েছে।
এ বিষয়ে ১৯ দলীয় জোটের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল হক ফজলু বলেন-সরকারদলীয় সমর্থকরা অন্তত ১০টি কেন্দ্র দখল করে আমার এজেন্টদের বের করে দেয়।
এদিকে কুমিলা সদর দক্ষিণ উপজেলার পিপুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে সরকারদলীয় প্রার্থী গোলাম সারওয়ার এবং বিএনপি সমর্থিত মাহবুব চৌধরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
কুমিলা সদর উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ৫৬টি। মোট ভোটার এক লাখ ৭২ হাজার ৫৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৫ হাজার ৮৮২ জন ও নারী ভোটার ৮৬ হাজার ৭১৩ জন।
সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ৬৪টি। মোট ভোটার দুই লাখ পাঁচ হাজার ৪৫৭ জন।এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ এক হাজার ৬৯১ জন ও নারী ভোটার এক লাখ তিন হাজার ৭৬৬ জন।
কুমিল্লার ২ কেন্দ্রে ৬শ’ ২১টি জাল ভোট বাতিল
কুমিলা সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের দু’টি ভোট কেন্দ্র থেকে ৬২১টি জাল ভোট বাতিল করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টায় সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দুপুর ১২টায় ইউনিয়নের রাছিয়া বাগবের আলিম মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্র ও বন্দী শাহী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। রাছিয়া বাগবের আলিম মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. এনামুল হক জানান, দুপুরে দুর্বৃত্তরা জোর করে কেন্দ্রে ঢুকে ৬০০টি জাল ভোট দেয়। এসময় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় জাল ভোটগুলো বাতিল করা হয়।
এদিকে, বন্দী শাহী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, কয়েকজন দুর্বৃত্ত জোর করে বুথে ঢুকে ২১টি জাল ভোট দেয়। পরে জাল ভোটগুলো বাতিল করা হয়। কুমিলা সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৫৬টি। মোট ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৫ হাজার ৮৮২ জন ও নারী ভোটার ৮৬ হাজার ৭১৩ জন। সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৬৪টি। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৪৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ৬৯১ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৩ হাজার ৭৬৬ জন।
কুমিল্লা সদরে পিস্তলসহ ছাত্রলীগের ৯ কর্মী আটক : ৩ জনের কারাদণ্ড
কুমিলা সদর উপজেলার ২ নম্বর দুর্গাপুর (উত্তর) ইউনিয়নের আলেকজান মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের (স্কুল শাখা) নারী ভোটকেন্দ্র থেকে একটি দেশী পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলিসহ ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এসময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ছোড়া গুলিতে সালাউদ্দিন নামে বিএনপির এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয় বিএনপি দাবি করেছে। তাকে কুমিলা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর দেড়টায় কেন্দ্র দখলের চেষ্টাকালে তাদের আটক করা হয়। আটক কর্মীরা হলেন- ছাত্রলীগ কর্মী জয়নাল আবেদিন (২৫), মনির (২৪) ও আব্দুল ওয়াদুদ। তারা সদরের ২ নম্বর দুর্গাপুর (উত্তর) ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা দুপুরে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ওই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এসময় বিএনপির কর্মী সালাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করে।
এ বিষয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছে কি না জানিনা তবে ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে আটক করা হয়েছে তাদের থানায় নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে দুপুর সোয়া ১টায় একই ইউনিয়নের আড়াইওড়া পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও প্রায় ১৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেয় বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। আফজল খান কমার্স কলেজ কেন্দ্র থেকে ৩ জাল ভোটারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে আদর্শ সদর উপজেলার একটি কেন্দ্রে একজন ভুয়া এজেন্ট আবু নাসের ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্ট আনোয়ার হোসেনকে ৯টি জাল ভোটসহ হাতে নাতে আটক করে ৬ মাসের কারদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সফিকুল ইসলাম ।