ads

বৃহস্পতিবার , ১৫ মে ২০১৪ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

রাবিতে আড়াই বছরেও শেষ হয়নি নতুন হলের নির্মান কাজ : ছাত্রী হলের গণরুমে মানবেতর জীবন-যাপন

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
মে ১৫, ২০১৪ ১২:৪১ অপরাহ্ণ

R U 2রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এর মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে মোট ১৬টি হল থাকলেও মেয়েদের হলের সংখ্যা মাত্র ৫টি। এদিকে ভিত্তি প্রস্তারের আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও ফজিলাতুন্নেসা হলের নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় আবাসিক হলের ছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
হল প্রশাসন জানায়, ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত মন্নুজান হলে ৮৬০ টি, বেগম রোকেয়া হলে ৭০০ টি, রহমতুন্নেছা হলে ৬০০ টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪৫২ টি এবং তাপসী রাবেয়া হলে ৪৬৯ টি সিট রয়েছে। মোট হলের সিটের সংখ্যা ৩০৮১টি।
হল সূত্রে আরো জানা যায়, রহমাতুন্নেছা ২টি গণরুমে প্রায় ২০০ জন, তাপসী রাবেয়া হলে ১টিতে ১৪৮ জন, রোকেয়া হলে ৭টি গণরুমে ২৩০ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ২টি গণরুমে ২০০ জন এবং মন্নুজান হলে ৩টি গণরুমে প্রায় ২০০ জন অবস্থান করে।
মোট মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্রী গাদাগাদি করে হলে অবস্থান করে। প্রতিটি হলের গণরুমের অবস্থা খুবই নাজুক। গণরুম গুলোতে বেড, চেয়ার, টেবিলগুলো একটা অপরটার সাথে লাগোয়া। পোশাক গুলো বেডের সাথে রশি টানিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই গণরুমে সিট পেতেও পোহাতে হয় নিদারুন কষ্ট। এদের মধ্যেও চলে রাজনীতি। নিজের এলাকা, বিভাগ বা আত্মীয়দের নিজের কাছে উঠাতে মরিয়া সবাই। এছাড়াও হাজারো দুর্ভোগ তো রয়েছেই। যার মধ্যে অন্যতম হলো ঘিঞ্জি পরিবেশ, গরমে ফ্যানের কষ্ট, টয়লেটের স্বল্পতা, ডাইনিংয়ে নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য করা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাওয়াসহ আরো অনেক। গণরুমে অবস্থান করছেন এমন একাধিক মেয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব দুর্ভোগের কথা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুমে থাকার কোন নিয়ম না থাকলেও, হল প্রশাসন বলছে ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তাদেরকে রেখে থাকি।
এদিকে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় সফরকালে নতুন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও গত আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন ছাত্রীরা।
শিক্ষার্থীদের তথ্যমতে, হলে সিট পেতে হলে প্রথমবর্ষ ও দ্বিতীয়বর্ষ হলের গণরুমে কাটাতে হবে। হয়ত তৃতীয়বর্ষে একটি সাধারণ কক্ষে সিট পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় গণরুমে না থাকলে সাধারণ কক্ষে সিট দিতে চায় না প্রাধ্যক্ষ। গণরুমের ঘিঞ্জি পরিবেশে পড়ালেখা হয় না। সারা সময় গল্প গুজব আর আড্ডাতেই কাটে। ক্লাসের পড়া বা বাড়ির কাজ করতে হলে ডাইনিংয়ে গিয়ে করতে হয়। এছাড়া মশা আর ড্রেনের পঁচা ময়লা-পানির দুর্গন্ধে থাকা খুবই কষ্ট হয়।
মন্নুজান হল:
মন্নুজান হল ক্যাম্পাসের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে অবস্থিত। এই হলে সবচেয়ে বেশি ছাত্রী অবস্থান করে। এতে রয়েছে তিনটি গণরুম। গণরুমগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ১শ জন অবস্থান করে। মেয়েদের আবাসিক হলগুলোর মধ্যে মন্নৃুজান হলটি সবচেয়ে বড়। প্রতি দশজন ছাত্রীর জন্য রয়েছে একটি করে ফ্যান। সামান্য বৃষ্টি হলে গণরুমগুলোতে বাইরের মাঠ থেকে কেঁচো, উঠে আসে। এর সামনে ড্রেন থাকায় মেয়েরা খাবারের উচ্ছিষ্ট ড্রেনের মধ্যে ফেলে থাকে। এগুলো পানিতে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর পোশাক মোবাইল টাকাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। হলে গণরুমে অবস্থান কারি ছাত্রীদের রান্না করার কোন নিয়ম নেই। এছাড়া এই হলের বড় আপুরা কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন অসুবিধা নিয়ে হল প্রভোস্টের কাছে বারবার অভিযোগ করলেও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন ছাত্রীরা।
এ ব্যাপারে মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বিউটি খাতুন বলেন, গনরুমে আমাদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। শত-কষ্টের মধ্যেও ভালো লাগতো যদি গনরুমের নিচের জায়গা গুলো যদি পরিষ্কার করত। বিশেষ করে ড্রেন-লইন ও মাঠটা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকত।
বেগম খালেদা জিয়া হল:
ক্যাম্পাসের রবীন্দ্র ভবন এবং সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের পিছনে অবস্থিত এই হলটিতেও রয়েছে ৫টি গণরুম। গণরুমের ছাত্রীদের জন্য পর্যপ্ত পরিমাণ বাথরুম না থাকায়, গোসলের জন্য সিরিয়াল দিতে হয়। এ হলের গণরুমে মেয়েদের রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই। হলের সিট দেওয়ার সময় ফোরামে লিখা থাকে ডাইনিংয়ে খেতে বাধ্য থাকিবে। অথচ ডইনিংয়ের খাবার মান সম্মত না। এছাড়া ডাইনিংয়ের খালাদের ব্যাবহারও ভালো না। গণরুম থেকে সাধারণ কক্ষে সিট পেতে হলে ডাইনিং সুপারের স্বাক্ষরিত কার্ড নিয়ে ভাইভা দিতে হয়। তাছাড়া হলের সাধারণ কক্ষে সিট পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন ওই হলের ছাত্ররীরা।
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী নাজমুন নাহার গণরুমে থাকার বিষয়ে বলেন, ‘হ্যা একটু কষ্ট হয় সত্য, তবে এখানে একটা অন্য রকম ভালো লাগার বিষয় থাকে। এক সাথে থাকার ফলে আনন্দ ও হইহুল্লোর করে থাকি। এ ছাড়া এই হলের বড় আপুরা অনেক সহযোগিতা করে থাকে।
তাপসী রাবেয়া হল:
বেগম খালেদা জিয়া হলের উত্তর পার্শ্বে তাপসী রাবেয়া হল অবস্থিত। এই হলে ১টি গণরুম আছে। ৭৪ টি বেডে ১৪৮ জন ছাত্রী থাকতে হয়। এদের বেশি সমস্যা হয় পরীক্ষার সময়। একরুমে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকায় পড়ালেখার পরিবেশ নাই বললেই চলে। তবে এদের মাঝেই আবার কেউ কেউ মোবাইলে লাউডস্পিকার দিয়ে শুনতে থাকে গান। অন্যজনের কি সমস্যা হলো কি না তার কোন তোয়াক্কা নেই। অন্য হলের মত এখানেও ছাত্রীদের রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে ছাত্রীরা বাধ্য হয়ে ডাইনিংয়ে খাওয়া-দাওয়া করে থাকে।
বেগম রোকেয়া হল:
তাপসী রাবেয়া হলের ঠিক সামনে বেগম রোকেয়া হল অবস্থিত। এই হলের গণরুমগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। একাধিক ছাত্রীর অভিযোগ, মাস্টার্স পাস করার পরও অনেক ছাত্রী হলের সিট না ছাড়ায় এখানকার সিট পাওয়া আরো কঠিন। এছাড়া হলের সামনের নর্দমা, অপরিস্কৃত পুকুর আর মশার কামড় অতিষ্ট করে তোলে ছাত্রীদের। এছাড়া বাথরুমের দরজা গুলো খুব একটা ভালো না। তবে নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে অনেকে আবার বেশ মজা করেই গণরুমে অবস্থান করছেন। দর্শণ বিভাগের ছাত্রী নিলুফা ইয়াছমিন নাঈমা গণরুমে থাকার বিষয়ে বলেন, ‘এখানে সবসময় সবার সাথে আনন্দঘন পরিবেশে থাকা যায়। তাছাড়া পড়াশোনার সময়ে অনেকের কাছ থেকে নানা সহযোগিতা পাওয়া যায়। ছুটি উপলক্ষে আমরা গণরুমে বান্ধবিরা মিলে একসাথে নাচি, গান গাই, মাঝে মাঝে পিকনিকও করি’।
রহমতুন্নেসা হল:
ক্যাম্পাসের সবচেয়ে দূরে এই হলের অবস্থান। হলের রিডিং রুমকে গণরুম করা হয়েছে। সবাইকে ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকতে হয়। হলটির পেছনে ছোট একটি জঙ্গল থাকায় যে কোন সময় গণরুমে সাপ চলে আসে। সাপের ভয়ে শিক্ষার্থীরা সবসময় আতংকে থাকেন। সাপে কাটার ঘটনা এ হলে ঘটে থাকে। এ বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষ কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেন।
ছাত্রী হল গুলোর আবাসিক অবস্থা আরও করুণ খোজ নিয়ে জানাগেছে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্রীদের গণরুমে আবাসিকতা দেওয়া হয়। এ রুমগুলোতে গণহারে বিছানা পেতে একটি রুমে প্রায় ৮০/৮৪ জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিছানা গুলোর মাঝে চলাচলের জন্য কোনো স্বাভাবিক সুব্যবস্থা নেই। অনেক সময় হলের কমনরুম, টিভি রুম, এমনকি ডাইনিংয় রুমগুলোতেও থাকতে হয় ছাত্রীদের।
এ সমস্ত বিষয়ে রহমাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর সাবরিনা নাজ বলেন, হলের গণরুমে ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাখতে হয়। তিনি বলেন, যেখানে ছাত্রদের থাকার জন্য ১১টি হল থাকলেও মেয়েদের হলের সংখ্যা মাত্র ৫টি।
তিনি গণরুমে ছাত্রীদের রান্না না করতে দেওয়ার বিষয়ে বলেন, গণরুমে এত জায়গা থাকে না। এছাড়া রান্না করতে গেলে বৈদুতিক তারা জীবন নাশের অশঙ্কা থাকে।
শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের নির্মান কাজ:
ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেসা হলের নির্মানকাজ আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও শেষ হচ্ছে এর নির্মান কাজ। গত ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হলের ভিত্তি প্রস্তার স্থাপন করেন। এদিকে ভিত্তি প্রস্তারের আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় আবাসিক হলের ছাত্রীদের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুল হাসান বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজেট না থাকায় এই মুহুর্তে কাজ শেষ করা সম্ভব না। আগামী বাজেটে টাকা পেলে সেটা দিয়ে এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।
রাবি প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা সরকারের নিকট শেখ হাসিনা হল ও শহীদ কামরুজ্জামান হল নির্মানের দাবী জানিয়েছি। আশা করছি সরকার এ ব্যাপারে অতি দ্রæত সিদ্ধান্ত দিবে, এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!