জিয়াউর রহমান জিয়া,রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বোরো আবাদে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বোরো ক্ষেতের ধানের শীষে ধান নেই। সব চিটা হওয়ায় শীষ খাড়া হয়ে আছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও ক্ষেতে পানি না থাকার কারণে বোরো ক্ষেতের ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। ক্ষেতের ওই সর্বনাশা চিত্র দেখে কৃষক হতাশ। ধান চিটা হওয়ার এ চিত্র কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের।

রাজীবপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো ধানের সহনশীল তাপমাত্রা হলো সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি। সেখানে রাজীবপুরে ১৫ দিনেরও বেশি একটানা তাপমাত্রা বিরাজ করছিল ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রির ওপরে। আর ওই সময়ে যেসব বোরো ক্ষেতের ধানে শীষ বের হয়েছে মূলত সেগুলোই চিটা হয়েছে। ওই সময় সার্বক্ষণিক বোরো ক্ষেতে পানি রাখা হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা আখরুজ্জামান। কিন্তু তাপমাত্রা বেশি থাকায় কৃষক সেচ দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরই ওই ক্ষেত শুকিয়ে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা আখরুজ্জামান আরো জানান, উপজেলার তিন ইউনিয়নের আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত বিঘা জমির ধান চিটা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এখন মাঠে গিয়ে ওই তথ্য সংগ্রহ করছেন। তবে এখন তাপমাত্রা কমে গেছে। এ সময় যেসব বোরো ক্ষেতের শীষ বের হবে সেগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না।

চর রাজীবপুর সরকারপাড়া গ্রামের কৃষক শহর আলী। জাউনিয়ার চর আইড়মারী এলাকায় এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। সার ও ডিজেলে খরচ করছেন ধারদেনা করে। তিনি বলেন, ‘কী করমুরে বাবা, ৫০ মণ ধানের ওপর সুদের টাকা নিয়া মাইয়ার বিয়া দিছি। কথা ছিল ধান কাইটা সুদওয়ালা ঘরোগ ধান দিমু। কিন্তু ক্ষেতে যাই দেহি সর্বনাশ হইয়া গেছে। একটা শীষেও ধান নাই, খালি চিটা। তিন বিঘায় তিন মণ ধানও পামু না।’
এই হাহাকার শুধু যে শহর আলীর পরিবারেই হচ্ছে তা নয়। বোরো ক্ষেতের এই সর্বনাশা চিত্র দেখে উপজেলার অসংখ্য কৃষক দিশাহারা। ছোটাছুটি করছে কৃষি দপ্তরে। ধুবালিয়া পাড়ার কৃষক রাজ্জাক আলী বলেন, ‘আমার আট বিঘা জমির ধান ধইরা চিটা হয়েছে। এহন আমার মরণ ছাড়া কোনো পথ নাই। কেননা ওই ধান আবাদ করতে সার-তেল খরচ করছি সুদের ওপর টাকা নিয়া।’ একই গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, ইমান আলী, ইদ্রিস আলী, আজাদ মিয়া জানান, তাঁদের সবার বোরো ধানের অবস্থাও খারাপ।
