কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান-সুপ্র কুষ্টিয়া জেলা ক্যাম্পেইন কমিটির উদ্যোগে পুনাক ফুড পার্কের হল রুমে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা ২০১৪-১৫ এর আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় সুপ্র কুষ্টিয়া জেলা ক্যাম্পেইন কমিটির সভাপতি আশরাফউদ্দিন নজুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ পরবর্তীতে ১৯৮০সালে যে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছিল সে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭.৫কোটি টাকার মতন কিন্তু বর্তমান অর্থবছরে সেই বাজেটের সম্ভাব্য আকার দাড়িয়েছে ২লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান সময়ে রেমিডেন্স বৃদ্ধি সহ বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্কিন ডলার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এক সময় হতো আমাদের দেশের মোট বাজেটের প্রায় ৮০% আয় ধরা হত বৈদশিক ঋণ হতে যা বর্তমানে ২৫% এ দাড়িয়েছে। তবে সকল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গেলে তার ভিত্তি মজবুত হতে হয় তেমনি জেলা বাজেট নিশ্চিত করতে গেলে জেলার সম্পদ ও আয়ের উৎসের দিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে। তাছাড়া কর আদায়ের ক্ষেত্রে যদি একটু ইউনিয়ন পরিষদের দিকে তাকানো হয় তবে দেখা যাবে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য নিজের পকেট থেকে করের টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। আসলে উন্নয়ন ঘটাতে গেলে সকলকে কর প্রদানে উৎসাহী করে তুলতে হবে। সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না হলে কোন ভাবে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব না এর জন্য অবশ্যই কেন্দ্রমূখী যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রমূখী যাতায়াতের ফলে ঢাকা শহর বর্তমানে বিশ্বের দরবারে আবাসের অযোগ্য প্রথম শহর হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। জেলা বাজেট নিশ্চিত করণ ও এর কাঠামোগত বাস্তবায়নের মাধ্যমে যাতে করে নিজ জেলাতে বসে সকল প্রকার কাজের নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় এবং জেলা জেলার চাহিদানুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব হয়। তাছাড়াও বিশেষ করে সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরীর নিয়োগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ ও দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে ও যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: আজিজুন নাহার, তিনি বলেন, আসলে বাজেট হচ্ছে একটি পরিবারের আয় ব্যয়ের হিসাব যা পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত বিসৃত হয়েছে। আমি যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগে আছি সেজন্য আমার বলা হচ্ছে আমার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল হচ্ছে ২৫০ বেডের আর আমাকে ৫০০ এর বেশী রোগীর সেবা প্রত্যেকদিন দিতে হয়। তাছাড়া বর্হিবিভাগে রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকে না। এজন্য জেলা হাসপাতালগুলোতে বাজেট বৃদ্ধি ও দায়িত্বপালনে সততা এবং সকল বাজেটের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। সভার আরেক বিশেষ অতিথি জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, বর্তমান সরকার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহন করেছে যা বর্তমান সময়ে দেশের উন্নয়নে বড় ধরণের ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এই দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের ফলে কৃষক লাভবান হলেও মাটি তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। কৃষি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী। জেলা বাজেটের কাঠামোগত বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবশ্যই জেলার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনঅংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান সুপ্র’র জাতীয় ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সেতু কুষ্টিয়ার নির্বাহী পরিচালক এম এ কাদের। এছাড়া মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন লালন গবেষক ও বোধোদয় সভাপিত এ্যাড. লালিম হক, গ্রীণ এন্ড ক্লীন বাংলাদেশের সভাপতি খলিলুর রহমান মজু, পরিবেশবিদ গৌতম কুমার রায়, সাফ এর নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক, আলোকিত বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি এ এইচ এম আরিফ, সুপ্র কুষ্টিয়ার সহ-সভাতি এনামুল হক সহ ছাত্র, শিক্ষক, ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, কৃষক, ব্যবসায়ী, দিনমজুর সকলেই আলোচনায় অংশগ্রহন করেন এবং তাদের জেলা ভিত্তিক দাবী প্রস্তুত করেন যা মাননীয় অর্থমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হবে। সভায় সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন সুপ্র কুষ্টিয়া জেলা ক্যাম্পেইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা হাবিবা।
