কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা আর মাসব্যাপী বিভিন্œ আয়োজনের মধ্যদিয়ে ১ মে বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী আড়ুয়াপাড়া তরুণ সংঘ পাঠগার ও ক্লাবের ৭৭তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে এলাকার নারী-পুরুষের মধ্যেছিল সাজ-সাজ রব। ক্লাব চত্বর সহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক সাজানো হয়েছিল রঙবেরঙের পতাকা দিয়ে। আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছিল ক্লাব চত্বর। মাসব্যাপী ফুটবল, রাশিয়ান ব্রিজ, অকশন ব্রিজ, ক্যারাম, দাবা, লুডু, বালিশ বদল, বিভিন্ন দৌড়, বিস্কুট দৌড়, স্পিকিং, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, যেমন খুশি তেমন সাজ সহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করে শিশু-কিশোর সহ সকল বয়সের নারী-পুরুষ। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে মানুষের মধ্য যে বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ-উলাস ছিল, তাতেই প্রমাণ করে এই প্রতিষ্ঠানটি সকলের কাছে কত প্রিয়। বৃহস্পতিবার স্মারক গ্র্রন্থের মোড়ক উম্মোচন, কেক কাটা, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ৭৭তম বর্ষপূর্তির মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। বিকেল ৫ টায় ক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও ক্লাবের সহ-সভাপতি ম.মনিরউজ্জামান সহ ক্লাবের মৃত সকল সদস্যদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর ৭৭ বর্ষপূর্তির কেক কাটার পর অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া সনো হাসপাতাল এর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ এ কে এম মুনির। ক্লাবের সভাপতি ও কুষ্টিয়া পৌরসভার জননন্দিত মেয়র জননেতা আনোয়ার আলী’র সভাপতিত্বে সভায় আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া বোধোদয়ের সভাপতি এ্যাডঃ লালিম হক, প্রাক্তন শিক্ষক মিলন সরকার ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. সরওয়ার মূর্শেদ রতন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ এ কে এম মুনীর বলেন, ক্লাব এক সময় গ্রাম বাংলার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি চর্চার মূল প্রতিষ্ঠান ছিল। ক্লাবকে ঘিরেই প্রতিটি এলাকায় প্রতি বছর নিয়মিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি চর্চার আয়োজন করা হতো। জ্ঞান চর্চার জন্য প্রায় প্রতিটি ক্লাবেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল গ্রন্থগার। আজ সময়ের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্লাবগুলো তার আসল আদর্শ ও উদ্দেশ্য হারাতে বসেছে। তবে আমি ধন্যবাদ জানাই আড়–য়াপাড়া তরুণ সংঘ পাঠাগার ও ক্লাবের কর্তকর্তাদেরকে। কারণ তারা ক্লাব ও পাঠাগারের সকল উদ্দেশ্য ও আদর্শ সঠিক ভাবে পরিচালনার মাধ্যমে এলাকার শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে। তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন সৎ ও ভাল মানুষ হওয়ার পিছনে বই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আশারাখি তরুণ সংঘ পাঠাগার ও ক্লাবের মতো প্রতিটি এলাকায় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা হবে এবং এর মাধ্যমে সৎ ও জ্ঞানী মানুষ গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, আজ যে স্মারক গ্রন্থটি উম্মোচন করা হলো তার ৪৪ নম্বর পাতায় দেখা যায় ক্লাবের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রগতিশীল কর্মকান্ড পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখান থেকে বোঝাযায় এই প্রতিষ্ঠানটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ধারায় পরিচালিত হচ্ছে। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। সভাপতির বক্তৃতায় মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ৮০’র দশকে অনেক ক্লাব তৈরী হয়েছিল। সে ক্লাবগুলোকে মানুষ চিনতো কুড়াল ক্লাব হিসেবে। ঐ সকল ক্লাব কর্মকর্তাদের কার্যক্রম ছিল অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া। কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আড়–য়াপাড়া তরুণ সংঘ পাঠগার ও ক্লাব সমাজ ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। তিনি বলেন, অবিভক্ত ভারত থেকে বিট্রিশদের তাড়ানোর জন্য সে সময় বিভিন্ন এলাকায় পাঠাগার প্রতিষ্ঠা মাধ্যমে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়েছিল। আর এরই সূত্র ধরে ১৯৩৭ সালে আড়–য়াপাড়া তরুণ সংঘ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন এলাকার কিছু যুবক। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালে ক্লাব কথাটি যুক্ত হয়ে আড়–য়াপাড়া তরুণ সংঘ পাঠাগার ও ক্লাব নাম করণ করা হয়। তিনি বলেন, এই ক্লাবটির অনেক সদস্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরমধ্যে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ইয়াকুব আলী, লিয়াকত, দিদার ও মোস্তফা এবং পুঙ্গুত্ববরণ করেন অনেকেই। তিনি আরো বলেন, এই পাঠাগারে এমন কিছু দূর্লভ বই আছে যা এখন আর পাওয়া যায় না। অনেক বই আছে যা জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করে। ভাল বই পড়লে মানুষের মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। মেয়র বলেন, বই মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এই পাঠাগারটি কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, এদেশে ভাল মানুষের অনেক অভাব। আসুন আমরা সবাই ভাল কাজ করি এবং ভাল মানুষ গড়ার চেষ্টা করি। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমান উলাহ্ আমান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ৭৭তম বর্ষপূর্তির স্মারক গ্র্রন্থের সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মাসুদ। আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সংগঠক হিসেবে সামসুদ্দিন আহম্মেদ, গবেষয় হিসেবে ম. মনিরউজ্জামান, মেধাবী ছাত্র হিসেবে রাহাদুজ্জামান সেতুকে মরনত্তোর এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আহাম্মদ আলী আমু, সংগীত শিল্পী হিসেবে আব্দুল জব্বার ও চিকিৎসক হিসেবে অবসর প্রাপ্ত কর্নেল ডাঃ হাসান ইলিয়াসকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় এবং মাসব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সর্বশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ৭৭তম বর্ষপূর্তির মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ক্লাবের নিজস্ব শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন আমান উলাহ আমান।
