এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের ভালকুটিয়া গ্রামে মাত্র ২শতাংশ জমির জন্য নির্মমভাবে পিটিয়ে কলেজ ছাত্র রাজন সরকারকে হত্যার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দিন রাতেই নিহতের পিতা লাল মিয়া সরকার বাদী হয়ে সাইদুলকে প্রধান আসামী করে মজিদ প্রামানীক, মজনু মিয়া, আব্দুল মজিদ, হানু, নুরুল ইসলাম, আবুবকর সিদ্দিক টুনু, বাবু, ওহাব আলী, নিজাম প্রামানীক, মোমিন প্রানীক, কবির প্রামীক, মানিক মিয়া, লিটন মিয়া, কালু মিয়া, দুদু মিয়া, রেজাউল করিম ও সিরাজ প্রামানীকের নাম উলেখ করে ভূঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করলেও আসামীরা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের পক্ষ থেকে আসামীদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্র“তি দিলেও তা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আসামীদের বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েও ব্যার্থ হয়েছে তারা। খুনের ঘটনার পক্ষকাল অতিবাহিত হওয়ার পরও কাউকে গেপ্তার করতে না পারায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে।
সরজেমিনে জানা যায়, খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকার এক শ্রেণির অসাধু চক্র অর্থ বাণিজ্যে নেমে পড়েছেন। তারা আসামীদের সঙ্গে কথা বলে চার্জসীট থেকে নাম কেটে দেয়া হবে এমন প্রতিশ্র“তি দিয়ে হাকাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত। এনিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলছে গোপন বৈঠকও। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে চেষ্টাও শুরু করেছেন তারা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান অবলম্বন করায় তদবির বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেনি চক্রটি।
একটি সূত্র জানায়, মামলায় অজ্ঞাত আসামী থাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে ওই এলাকার অসহায় লোকজনের নিকট থেকে একটি প্রভাবশালী মহল হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা দিতে না পেরে অনেকেই আবার গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। মিমাংসায় আসার জন্য বিভিন্নভাবে মামলার বাদী রাজন সরকারের বাবা লাল মিয়া সরকারকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকেই আবার মামলাটি রাজনৈতিকভাবে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। চাপের বিষয়টি স্বীকার করে মামলার বাদী লাল মিয়া সরকার বলেন, আমি কোন মিমাংসায় বিশ্বাসী নই। যারা আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
মামলার বিষয়ে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হারেচ আলী মিঞা বলেন, আসামীদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা খুব তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।
উলেখ্য উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ভালকুটিয়া গ্রামের লাল মিঞা সরকারের সঙ্গে ওই গ্রামের বীরু প্রামাণিকের ছেলে মজিদ প্রামাণিক ও আবুবকর সিদ্দিকীর ছেলে মজিদের ২ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এনিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ১৩ই এপ্রিল সকালে মজিদ প্রামাণিক ও আব্দুল মজিদ, সাইদুল, মজনু দলবল নিয়ে লাল মিয়া সরকারে বাড়ির টিনের বেড়া ভাঙতে থাকে। শব্দ শুনে লাল মিয়া সরকারের ছেলে রাজন সরকার এগিয়ে গেলে আব্দুল মজিদের ছেলে সাইদুল লাঠি দিয়ে রাজনের মাথায় আঘাত করে। এবং সাইদুলের লোকজনও একের পর এক আঘাত করতে থাকে। এতে রাজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার মা শাহিদা বেগম ও বোন নুপুর তাকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়। রাজনের মা-বোনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজনকে ভূঞাপুর হাসপাতালে নিয়ে আসে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়া কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এম্বুলেন্স যোগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে বিকালে রাজন মারা যায়। সে ধনবাড়ি ডিগ্রী কলেজের ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। এঘটনায় রাজন সরকারের পিতা লাল মিয়া সরকার বাদী হয়ে সাইদুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ওইদিন রাতেই ১৯জনের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেন।
