ভোলা প্রতিনিধি : শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক আগেই গাইড ও নোট বই নিষিদ্ধ করেছে। মূল উদ্দেশ্য পাঠ্যবই পড়েই শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারবে। জাতির কল্যাণ বিবেচনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতও এ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু তা সত্তে¡ও সারা দেশের ন্যায় ভোলায় দেদারছে বিক্রি হচ্ছে নোট ও গাইড বই। পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের কিছু অসাধু প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে এসব বই ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে, পৌঁছে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে। এ অবস্থা বহু বছর ধরে চলে এলেও বর্তমানে তা বেড়ে গেছে সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে। এ পদ্ধতিতে পাঠ্যদানে শিক্ষকরা যথেষ্ট দক্ষ নন বলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হচ্ছে নোট ও গাইড বই নিভব্র হতে।

এভাবে তারা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা । আর লাভবান হচ্ছেন কিছু অসাধু প্রকাশনা সংস্থার ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের নিষিদ্ধ-ঘোষিত অন্তত ৪৫/৫০টি প্রকাশনা সংস্থার নোট বইয়ের জমজমাট ব্যবসা করে ফুলেফেঁপে উঠেছে। তাদের ফুলেফেঁপে ওঠার প্রতি আমাদের হিংসা নেই। কিন্তু জাতি ধ্বংস করে কেন তারা এই উপার্জন করবেন? প্রশাসন তাদের এই অবৈধ উপার্জনের সহায়কই-বা হবে কেন? প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, প্রশাসন কি এ ব্যবসায় তাদের সহায়তা দিচ্ছে? আমরা বলব, নিশ্চয়ই সহায়তা দিচ্ছে। কারণ, ওইসব প্রকাশক তো এ বইগুলো মঙ্গলগ্রহে ছাপছে না, বাজারজাত করছে না, তাহলে প্রশাসন এসব বাজারে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বইয়ের প্রকাশকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? বহু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এসব প্রকাশকের বিরুদ্ধে।
ভোলায় বিভিন্ন স্কুলে বিভিন্ন প্রকাশনা কোম্পানীর রিপ্রেজিন্টেভ গিয়ে সাবজেট অনুযায়ী শিক্ষকদের কে গাইড ও নোটের সৌজন্য কপি দিয়ে মোটা অংকের অর্থ বাজেট করার কারনে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে চাহিদার কোম্পানির গাইড কিনতে উৎসাহ দিয়ে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশব্যাপী চাহিদার কারণে নোট-গাইড ছাপতে হচ্ছে।
নোট-গাইড বন্ধ করতে উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আমাদের দেশে আইন আছে, প্রয়োগ নেই বলে বিভিন্ন লাইব্রেরীতে সচরাচর নোট-গাইড বিক্রি বেড়ে গেছে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানায়, নোট-গাইডের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা বোর্ডের বই পড়ছেই না। এমনকি বিভিন্ন স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় শিক্ষকরা গাইড বইয়ের অনুশীলনীর প্রশ্ন পরীক্ষার প্রশ্ন হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে শিক্ষার্থীরা মুখস্থবিদ্যার দিকে ঝুঁকছে। কারণ শিক্ষার্থীরা জানে, গাইড বইয়ের ওই উত্তরটি মুখস্থ করলেই পরীক্ষায় পাস করা যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের যেমন ভাতের দরকার, তেমনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নোট-গাইড বই দরকার। কারণ আমাদের দেশের হাই স্কুলের শিক্ষকরা বর্তমান সময়ের সৃজনশীল পদ্ধতিতে মূল বই পড়াতে অক্ষম। এ কারণে শিক্ষার্থীদের চেয়ে শিক্ষকরাই নোট-গাইডের প্রতি বেশি আগ্রহী। ব্যবসায়ীরা বলেন, সব শিক্ষার্থীর শিক্ষকের দেওয়া নোট দরকার। কিন্তু গ্রাম ও শহরে খুব কম শিক্ষার্থীই শিক্ষকদের কাছ থেকে নোট বা সাজেশন পায়। যারা শিক্ষকের কাছে প্রইভেট ও কোচিংয়ে পড়তে যায়, কেবল তারাই শিক্ষকের নোট পায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় কয়জন মা-বাবা দু-তিন হাজার টাকা খরচ করে তাঁর সন্তানকে শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতে পারেন? এ জন্য অধিকাংশ মা-বাবা তাঁর সন্তানের জন্য কম টাকায় নোট-গাইড কিনে নেন। তারা আরো বলেন, বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পড়ানো হচ্ছে। এ পদ্ধতি আয়ত্ত করতে শিক্ষকদের ছয় মাস প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তিন দিন করে। এ কারণে শিক্ষকরা ক্লাসে যাওয়ার আগে নোট-গাইড পড়ে যান। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নও শিক্ষকরা নোট ও গাইড থেকে করেন।
এবং শিক্ষকরা বছরের শুরুতে লাইব্রেরী থেকে নোট-গাইডের সৌজন্য কপি চেয়ে নেন। কোনো সময় নোট-গাইড না দিলে শিক্ষকরা ফোন করে বলেন, ‘আমার সৌজন্য কপি কই?’ এভাবেই শিক্ষকরা আগে নোট-গাইড পড়েন এবং পরে শিক্ষার্থীদের বলেন নোট ও গাইড দেখে পড়া ।
এ অবস্থায় সরকার যদি জাতির ভবিষ্যত শিশুদের মেধা-মননের সুষ্ঠু বিকাশ চান তবে অবশ্যই বাজারের এসব নিষিদ্ধ-ঘোষিত নোট-গাইড বই মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে।
