চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি : এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত । বসন্তের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে চারঘাট উপজেলার আমগাছ গুলোর দিকে তাকালে । হলুদ মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ গুলো । যেন প্রকৃতির রাজকন্যা হলুদ শাড়িতে বেড়াতে এসেছে আমের দেশ চারঘাটে । বর্তমানে রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার একমাত্র অর্থকারী ফসল আম । এক সময় শুধুমাত্র শখের বশে বাড়ির আঙ্গিনায় দুই একটি আম গাছ লাগালেও এখন জীবন-জীবিকার জন্য প্রধান আয়ের উৎসে পরিনত হয়েছে আম চাষ। যে জমিতে আগে বিভিন্ন খাদ্য শষ্য উৎপাদিত হতো সেই জমিতে বর্তমানে উন্নত জাতের আম উৎপাদন করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা । সার, জ্বালানী ও বীজের অধিক মুল্যবৃদ্ধি, অপ্রতুলতা,তাছাড়া উৎপাদিত খাদ্য শষ্যের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে চারঘাটের কৃষকরা । গাছে মুকুল আসতে না আসতেই আম চাষীরা সারা বছরের আয়-ব্যায়ের খাতা খুলতে শুরু করেছে । সেই সাথে বেড়ে যাচ্ছে আম চাষীদের ব্যস্ততা ।
মধ্য ফাল্গুন হতে মধ্যচৈত্র মাস আম গাছে মুকুল আসার উপযুক্ত সময় । এ সময় ফসলী জমিতে তেমন কোন খাদ্য শষ্য না থাকায় সদ্যফুটন্ত আম মুকুল কীটপতঙ্গের প্রধান খাদ্যে পরিনত হয় । কীট পতঙ্গের আক্রমন থেকে মুকুলকে রক্ষা করতে এ সময় কৃষককে আম বাগানে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দৃষ্টি রাখতে হয় যেন ক্ষতি কারক কীট পতঙ্গ মুকুলের কোন ক্ষতি করতে না পারে ।
চারঘাটে আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত রায়পুর, চারঘাট অনুপমপুর, বাঁকড়া, ডাকড়া, ভায়ালক্ষীপুর, পরানপুর,নন্দনগাছি গ্রাম সহ আরো কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় এবার আম গাছগুলোতে মুকুলের পরিমাণ গত বৎসরের তুলনায় কম। কৃষকেরা ব্যাস্ত রয়েছে কীটনাষক প্রয়োগ করে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের হাত হতে মুকুলগুলো রক্ষা করতে । আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ২৫-৩০ কোটি টাকার আম উৎপাদন হতে পারে বলে জানান অভিজ্ঞ আম ব্যবসায়ীরা । এ দিকে উপজেলার শিবপুরের আঃ লতিফ ও মোক্তার হোসেন জানান, গত মৌসুমে ভারতীয় কীটনাশক ব্যবহার করায় আমরা কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছি এবং এবার আগাম বৃষ্টির কারণে মুকুল পর্যাপ্ত পরিমাণ বের হয়নি, তাই আমের ফলনের আশংকা কম। তবে এ বছর ভারতীয় নিম্নমানের কীটনাশক বর্জন করেছি । দেশীয় ভাল কোম্পানীর কীটনাশকের ব্যবহার ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমের ফলন ভাল হতো। তিনি আরও জানান চারঘাট বাসীর দীর্ঘেিনর দাবি, চারঘাটে একটি আম গবেষনা কেন্দ্র স্থাপন করা হোক। গত সংসদ নির্বাচনের সময় বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়াদা করেছিলেন চারঘাটে একটি আম গবেষনা কেন্দ্র স্থাপন করবেন । পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও আম গবেষনা কেন্দ্র স্থাপনের কোন মাথা ব্যাথা নেই। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা জানান, বৃষ্টির কারণে এবার মুকুল কম আসায় আমের ফলন কম হবে। এছাড়া কীটপতঙ্গ ও হপার পোকার আক্রমন প্রতিরোধে ল্যাংমড়া সাইহ্যালোথিন ¯েপ্র করলে কৃষকরা ভাল আমের ফলন পাবে আশা করছি। বর্তমানে ৩৭শত ৭০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হচ্ছে।