নরসিংদী প্রতিনিধি : ৩১ মার্চ ভোট গ্রহণকে সামনে রেখে নরসিংদী জেলার নরসিংদী সদর, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারনা এখন তুঙ্গে। ৩টি উপজেলা শহরসহ গ্রামাঞ্চলগুলো এখন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের পদভারে প্রকম্পিত। শহর ও গ্রোথ সেন্টার থেকে শুরু করে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত প্রার্থীদের ছবি ও প্রতীক সংবলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেটসহ বিভিন্ন প্রচার পত্রে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা বাড়ী-বাড়ী ঘুরে নারী ও পুরুষ ভোটারদের কাছে ভোট মাগুনি করছে। পাশাপাশি দোয়া প্রার্থনা করছে সকল স্তরের মানুষের কাছে। প্রতিটি প্রার্থীর মধ্যেই রয়েছে নিশ্চিত জয়ের উদগ্র আকাঙ্খা। যার কাছেই যাচ্ছে সেই প্রার্থীদেরকে ভোট প্রদানের আশ্বাস দিচ্ছে। কোন প্রার্থীকেই ভোট দেবে না মর্মে না করছে না কোন ভোটাররা। যার ফলে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সকলেরই বিজয়ের আকাঙ্খা দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
নরসিংদী সদর উপজেলা:
নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থীর সংখ্যা মোট ৪ জন। এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৭ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। এর মধ্যে বিএনপি প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মনজুর এলাহী, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নরসিংদীর নিহত মেয়র লোকমান হোসেনের বিধবা পত্মী তামান্না নুসরাত বুবলী, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আব্দুল ওহাব মোল্লা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন মোঃ হাবিবুল্লাহ বাহার হাবিব। সকল প্রার্থী এখন মাঠে ময়দানে ভোটের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভোট মাগুনি করছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিন যতই এগুচ্ছে প্রচারনা ততই জোরদার হচ্ছে। সকল প্রার্থীই তাদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও ভোটারদের হিসেব অনুযায়ী প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে বিএনপি প্রার্থী মনজুর এলাহী এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী তামান্না নুসরাত বুবলীর মধ্যে। বিএনপি প্রার্থী মনজুর এলাহীর সমর্থকগণ জানিয়েছেন বিপুল ভোটের ব্যবধানে মনজুর এলাহী জয়ী হবেন। পক্ষান্তরে বুবলীর সমর্থকগন জানিয়েছেন বুবলীও নিশ্চিতভাবেই বিজয়ী হবেন।
মনোহরদী উপজেলা :
মনোহরদী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হচ্ছেন ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৯ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৫ জন। এরমধ্যে বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন মোঃ শাহাদাৎ হোসেন সরকার, বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম খান বীরু, বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন মোল্লা জহিরুল ইসলাম মুকুল, জামায়াতে ইসলামীর মোঃ জাকারিয়া, ইসলামী আন্দোলনের মোঃ বেলায়েত হোসেন। সকল প্রার্থীই এখন নির্বাচনী প্রচারনায় ব্যস্ত। ভোটের ধান্দায় অহর্নিশি তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট মাগুনি করে বেড়াচ্ছেন। কে বিজয়ী হবে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে ত্রিমূখী। এর মধ্যে সবচেয়ে কাছাকাছি প্রতিদ্ব›দ্বীতায় থাকবেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বকুল এবং আওয়ামী লীগের সাইফুল ইসলাম খান বীরু। এই মতামত উভয় পক্ষের সমর্থকদের। সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছে এই উপজেলায় বিএনপি একক প্রার্থী দিতে পারলে বিজয় তাদের নিশ্চিত হতো। কিন্তু বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে লেঃ কর্ণেল (অব:) জয়নুল আবেদীন গ্রুপ এবং সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুলকে মনোনয়ন দিয়েছেন সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন এমপি বকুলের বড় ভাই। সরদার মোয়াজ্জেম বর্তমানে চালাকচর ইউপি চেয়ারম্যান। বেলাব উপজেলা নির্বাচনে সরদার বকুল সমর্থিত বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থী আহসান হাবিব বিপ্লব বিপুল ভোটে বিজয়ী হবার পর সরদার বকুলের আকাঙ্খার ক্ষেত্র আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি আশান্বিত হয়ে এবারো তার নিজ উপজেলা মনোহরদীতে বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছেন। সাধারণ ভোটাররা বলেছেন, বিএনপির ভোট ভাগাভাগির সুযোগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুল ইসলাম খান বীরু বিপুল ভোটে জয়ী হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
রায়পুরা উপজেলা:
রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবছর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সংখ্যা দাড়িয়েছে মোট ৪ জনে। ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হচ্ছেন ৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের সংখ্যা হচ্ছে ৬ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন এড. সামসুল হক, পক্ষান্তরে বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন যুবদলের মোঃ ফজলুর রহমান। তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন তিনি হচ্ছেন গোলাপ মিয়া। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৪ জন হলেও প্রতিদ্ব›দ্বীতা হবে মূলত ত্রিমূখী। এই ত্রিমুখী প্রতিদ্ব›দ্বীতায় রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী ফজলুর রহমান, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. সামসুল হক। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমানের পিছনে রয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. সামসুল হকের পক্ষে রয়েছেন মন্ত্রী রাজুর ছোট ভাই ও রায়পুরা উন্নয়ন কমিটির সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। এই ক্ষেত্রে এড. সামসুল হক ও মিজানুর রহমানের অবস্থা কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। এই আওয়ামী লীগের দুই জাদরেল প্রার্থীর ব্যাপক প্রতিদ্ব›দ্বীতার মাঝে ফাঁক মারার সুযোগ রয়েছে বিএনপি প্রার্থী ফজলুর রহমানের। ৩ জন প্রার্থীই বর্তমানে অহর্নিশী ভোটের ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সবাই যার যার বিজয়ের ব্যাপারে অতিশয় আশাবাদী। সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে ভোটের ফলাফল হবে এক ধরনের। আর যার যার এলাকায় ভোট কেন্দ্র দখল ও সীল মারামারি হলে ভোটের ফলাফল হবে ভিন্ন রূপ। রায়পুরা তথা নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পূর্বে এবং এবছরও যার যার এলাকায় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রগুলোতে সীল মারার অভিযোগ করেছে প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা। এবছর ঝুকিপূর্ন কেন্দ্র গুলোতে সার্বক্ষণিক নজরদারী বৃদ্ধি করা হলে নিরপেক্ষ ভোট গ্রেহন নিশ্চিত হবে।