হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : বাংলা হিলি ডিজিট্যাল টেলিফোণ এক্সচেঞ্জ অফিসটি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেই চলছে। সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের উদাসিনতা আর অবহেলার কারণে অফিস এলাকাটি এখন নেশাখোরদের আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
হিলির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সে সময়ের সরকার ৮৪ শতাংশ জমির উপর নির্মিত এই এক্সচেঞ্জ অফিসটি ১৯৮২ সালে চালু করেন। আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে ৮৬ সাল থেকে শুরু হয় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য। আর বানিজ্য প্রসারের সাথে সাথেই এর গুরুত্ব বাড়তে থাকে সকলের কাছে। পরবর্তিতে সরকার ২০০৩ সালে হিলি টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি ডিজিট্যালে রুপান্তরিত করেন।
কিন্তু উন্নয়নের ধারা আর অব্যহত নয়, হয়ে যায় বেহাল অবস্থা। এক জন এস এ ই কর্মকর্তা সহ ৫ জনকে নিয়ে এই অফিসটি চালু থাকার কথা থাকলেও একজন অলিখিত নিয়োগ ধারি কর্মচারি মিলন নামের জনৈক রিক্সাচালকের হাতে দেয়া হয়েছে অফিসটির চাবিকাঠি। তিনি দীর্ঘ তিন বছর ধরে নিয়োগ পাওয়ার আশায় এস এ ই কর্মকর্তার আশ্বাসে লাইনম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত ঝাড়–দারকে বাদ দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রতি মাসে ৪ শত করে টাকা উঠিয়ে লাইনম্যান মিলন কে দেয়া হয়ে থকে।
এই অফিসটিতে চার বছর থেকে এস এ ই পদে দায়িত্বে রয়েছেন সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। তিনি হিলি এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে হাকিমপুর, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ এই চার উপজেলার দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও তিনি ওই দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দপুর থেকে। তিনি পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন সৈয়দপুরে। এর মধ্যে তিনি ১৬ জানুয়ারি থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত হিলি এক্সচেঞ্জ অফিসে এক ঘন্টার জন্যও সময় দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
অফিসটিতে রয়েছে একটি বিকল্প বিদ্যৎ পরিচালনার ইঞ্জিন ও জেনারেটর, সেটিও প্রায় দু’বছর থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে। তালা ঝুলানো ওই অফিসটিতে লোকবল না থাকায় গ্রাহকেরা পাচ্ছেনা তাদের পাওনা সেবা। জানা যায় ৩ শ ৭০ টি সংযোগ থাকলেও ১০ টি লাইনের সংযোগ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। আবার ফোন সংযোগ থাকলেও ফোন সেট নষ্ট, নতুবা ক্যাবল নষ্ট, গ্রাহকদের বিল নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই।
বন্দরের গুরুত্বপুর্ন এই টেলিফোন এক্সচেঞ্জটি এখন নিজের ইচ্ছে মত চলছে। নেই কোন তদারকি এখানকার টেলিফোন কেবিনেট বক্স তালাবিহিন অবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে পড়ে রয়েছে। যে কোন সময় চুরি কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে অচল হয়ে পড়বে গ্রাহকদের ফোন সংযোগ,বিদায় নেবে সেবা নামের কথাটি। চাহিদা থাকলেও হিলি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের বেহাল দশা জেনে কেও আর নতুন সংযোগ নিতেও আসছেন না। বরং যাদের পুরাতুন সংযোগ রয়েছে, তরাও এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা করছেন। এতে বিপুল অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
নাম প্রকাশ না করার স্বর্তে একজন কর্মচারী জানান, টেলিযোগাযোগ রংপুর অফিসের প্রধান এর বন্ধু হওয়ার কারনেই হিলিতে অফিস না করে চুটিয়ে চাকুরি করে যাচ্ছেন তিনি। আর সরকারী কোষাগার থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। আর এ কারনেই তার উর্দ্ধতন অন্যান্য কর্মকর্তারা সৈয়দ সিরাজুল ইসলামকে কিছইু বলেন না।
হাকিমপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক জামিল হোসেন চলন্ত,আলহাজ্ব হাসান চৌধুরী মধু, আলহাজ্ব বাবুল চৌধুরী বলেন, ফোন সংযোগ একবার অচল হলে সচল করার জন্য কাউকে খুজে পাওয়া যায়না। অফিসটির প্রধান গেটটি থাকে তালা বন্ধ। একচেঞ্জ অফিসটির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে খোঁজ করলে তাকেও পাওয়া যায়না। একচেঞ্জ অফিসটির আশ পাশের দোকানদাররা জানান, তারাও এই উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে চিনেন না। তারা আরও জানান, এখানে কোনো প্রকৌশলী থকেন তা তাদের জানা নেই। তবে, স্থানীয় রিক্সা চালক মিলন তিনিই এখানকার কর্মকর্তা। তিনি রিক্সা চালিয়ে মাঝে মধ্যে অফিসে এসে আবার চলে যান। এই সময় কোন গ্রাহক এলে ওই রিক্সা চালক তাকে রিক্সায় উঠিয়ে নিয়ে যায় তার কাজটি করার জন্য। তার ভিজিট গ্রাহক প্রতি ২শ টাকা মাত্র।
রিক্সা চালক মিলন বলেন, এখানে কোন লোকবল না থাকায় উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মৌখিক নির্দেশে ও নিয়োগ পাওয়ার আশায় কাজ করছেন। আর গ্রাহকদের অকেজো সংযোগ ঠিক করে দিলে গ্রাহকরা তাকে খুশিমনে বক্শিস দিয়ে থাকেন।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ সিরাজুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিলিতে অবস্থান না করে সৈয়দপুর থেকে অফিস করার কথা স্বিকার করেন। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে তা ভিত্তিহিন বলে দাবি করেন। তিনি আরও বলেন কোন গ্রাহকই হয়রানির শিকার হন না। সুশংখলার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।