খোরশেদ আলম, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : চিকিত্সক সংকট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্তব্যে অবহেলা ও অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার কারনে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২ লাখ লোকের চিকিত্সার ভরসাস্থল ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সক থাকার কথা ৯ জন। কিন্তু আছে মাত্র ২ জন। তন্মধ্যে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি গত ফেব্রুয়ারী মাসে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বদলী হয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম তালুকদার নালিতাবাড়ী থেকে এসে অফিস করে আবার ফিরে যান। অপর চিকিত্সক আরএমও ডাঃ মোবারক হোসন শেরপুর সদর থেকে এসে অফিস করেন। ষ্টেশনে থাকার কথা থাকলেও তাঁরা এখানে থাকছেন না। মালিঝিকান্দা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাঃ খাইরুল কবীর সুমনকে এনে জোরাতালি দিয়ে হাসপাতাল চালানোর চেষ্টা করা হলেও তিনিও শেরপুর থেকে এসেই অফিস করেন। উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও শুধু মালিঝিকান্দা ইউনিয়নে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। বাকী ৬টি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোন ভবন নেই। প্রতিটি ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য একজন করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক সংকটের অজুহাতে ৭ ইউনিয়নের উপ-সহকারীদের দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়ীত্ব পালন করানো হচ্ছে। এদের মধ্যে ২/১জন ছাড়া সবাই থাকেন ষ্টেশনের বাইরে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সময় চিকিত্সক নিয়োগ দেয়া হলেও ওইসব চিকিৎসকগন যোগদান করেই লাপাত্তা। বাড়ীতে বসে বসে বেতনভাতা উত্তোলন করেন। আবার সুবিধা জনক স্থানে বদলী হন। এছাড়া সেবিকাসহ অন্যান্য কর্মচারীরা থাকলেও তাদের কর্তব্যে অবহেলা অনিয়ম অব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতির কারনে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিত্সা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। অনেকেই যুগ যুগ ধরে চাকুরী করে আসছেন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কেউ কেউ স্থানীয় বাসিন্দা হবার সুবাদে তাদের দাপটের শেষ নেই। সীমান্তবর্তী এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সা লাভের আশায় প্রতিদিন শতশত হত দরিদ্র রোগী এখানে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও চিকিত্সা না পেয়ে শূন্যহাতে বাড়ী ফিরে যান। ওষুধপত্র তো দূরের কথা, চিকিৎসকের দেখা পর্যন্ত মিলে না রোগীদের ভাগ্যে। কর্তব্যরত চিকিত্সক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কে কখন, কোথায় যাচ্ছেন, আবার আসছেন তার কোন খোজ-খবর রাখার কেউ যেন নেই। জরুরী বিভাগেও ২৪ ঘন্টা চিকিত্সা পায় না রোগীরা। মূমুর্ষ রোগী এলেই পাঠানো হয় শেরপুর সদর হাসপাতালে।
সিভিল সার্জন ডাঃ নারায়ণ চন্দ্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কোয়ার্টার গুলোর অবস্থা নাজুক অবস্থার কারনে কোন চিকিত্সক থাকতে চান না। এছাড়া অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কারনে অনেকের বিরুদ্ধেই প্রাশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।