কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : লালন ছিলেন মানব ধর্মে বিশ্বাসী। তিনি কি ধর্মের ছিলেন তা যেমন আমরা জানি না তেমনি তিনি কোন ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না সেটা তিনি বারবার বলে গিয়েছিলেন। লালন শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয় লালন সারা বিশ্বের সম্পদ। তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়া সাংস্কৃতির রাজধানী হলেও তার হৃদপিন্ড কুমারখালী। এখানেই সকল মহান মানুষের জন্ম। এ সময় তিনি লালনের গান যাতে না হারিয়ে যায় সেজন্য লালন চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার আশ্ব্সা দেন। রবিবার সন্ধ্যায় কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার লালন একাডেমীর মাঠ প্রাঙ্গনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমীর আয়োজনে ৫ দিন ব্যাপী বাউল স¤্রাট ফকির লালন শাহ্ এর স্মরণোৎসবের ২য় দিনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রউফ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যর পূর্বে লালনের জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লালন গবেষক এ্যাড.লালিম হক। লালন একাডেমীর সভাপতি ও জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহমেদ, খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র শামসুজ্জামান অরুন, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আমিনুল হক রতন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমীর নির্বাচিত সদস্য (্এপিপি) এ্যাড. শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমীর সহকারী সম্পাদক সেলিম হক। মরমী এ সঙ্গীত সাধকের বার্ষিক স্মরণোৎসব উপলক্ষে তার সাধন-ভজনের তীর্থস্থান কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছে উৎসবের পলীতে। দেশ-বিদেশ থেকে আগমন ঘটেছে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের। উৎসব চলবে ১৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে স্মরণোৎসবে থাকবে লালনের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণসহ আলোচনা, লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান ও লালন গ্রামীণ মেলা। কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেঁষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী। এ নদীর তীরেই ছেউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭’র পয়লা কার্তিক ও ইংরেজী ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই মরমী সাধক লালন শাহ’র শেষশয্যা রচিত হয়। গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহর জীবদ্দশায় দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোলপূর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধুসংঘ। লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমীও প্রতিবছর এ উৎসবটিকে ‘লালন স্মরণোৎসব’ হিসাবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোলপূর্ণিমা’ উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন। সাধুদের মতে, সত্যিকার অর্থে লালন অনুসারীরা দোলপূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপূর্ণিমার রাতের বিকেলে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়। চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরের দিন চারটায় ‘পুণ্যসেবা’ দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করেন বেশির ভাগ সাধু। প্রকৃত সাধুসঙ্গের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূলমঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা চলে আরও চার দিন। তারা মনে করেন, মানবধর্মই বড় ধর্ম। একসাথে এভাবে সাধুসঙ্গ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে। লালন স্মরণোৎসব ঘিরে কালীগঙ্গা নদীর ধারে বসেছে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল গ্রামীণ মেলা।