আমতলী (বরগুনা) , প্রতিনিধি : উপকূলীয় বরগুনার পায়রা ও বিষখালী নদী পাড়ে ফসলের জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখী ঢেড়শ , করলা । ফুলের শোভায় আলোকিত করেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আপন মনে পাখি আর প্রজাপতি ওড়াউড়ি করছে এখানে। ফুলের ওপর বসে মধু আহরণ করছে শত শত মৌমাছি।
সেসব নয়নাভিরাম দৃশ্য শুধু সবাইকে কাছে টানে। নজর কাড়ার মতো এমনই দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে বরগুনা জেলার আশপাশের এলাকাজুড়ে। কৃষিপ্রধান এ এলাকার বেশিরভাগ পরিবার চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল। বিগত দিনে ধান-সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। এসব চাষি এখন সূর্যমুখী চাষের মাধ্যমে নতুনভাবে বেঁচে থাকার পথ খুঁজছেন। এখানকার কয়েক গ্রামের চাষি অতি লাভের আশায় এ সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। এর মাধ্যমে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা। ব্র্যাকডিএফ আইডি ওএইউএস এআইডির আর্থিক সহায়তায় কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ব্র্যাক বরগুনা জেলায় ৫টি থানায় ৩১ টি ইউনিয়নের ৭৯ টি গ্রামে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দুই ফসলী জমিতে তিন ফসলে রূপান্তরিত করার জন্য জরিপের মাধ্যমে সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত ১৮১৪.৬৫ একর জমিতে ৩টি মৌসুমে ফসল আবাদের জন্য ৩৩৫৪ জন্য চাষী নির্বাচিত হয়ে চলতি আমন মৌসুমের ফসল আবাদ করেছে। চলতি রবি মৌসুমে বরগুনা সদর উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নের ১৬ গ্রামে ৫৬৬.২৪ একর জমিতে ৮৯৭ জন কৃষক ১৯ টি ব¬কে ফসল আবাদ করছে। ১৮টি ব্লকে ৭২২ জন চাষী ৪৬৩.৮২ একর জমিতে হাইব্রিড সূর্যমুখী (জাত হাইসান-৩৩), ৮৩.২৩ একর জমিতে ১১৪ জন চাষী হাইব্রিড প্যাসিফিক ৯৮৪ জাতের ভূট্টা এবং ৫৮.১৫ বিঘা জমিতে ৬১ জন চাষী হাইব্রিড করলা (জাত বুলবুলি), ঢ়েঁড়শ (জাত এভারগ্রীন), মিষ্টি কুমড়া (জাত বিউটি), লাউ (জাত গ্রীন সুপার) আবাদ করে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে।
ব্র্যাক কৃষকদের জমি তৈরী, সার, সেচ, কীটনাশক ও সবজির ক্ষেত্রে বেড়া, মাঁচা ইত্যাদি তৈরী বাবদ অনুদান সহায়তা প্রদান করেছে। রবি মৌসুমের চাষীদের বীজ রোপন পরবর্তী অনুদান সহায়তার অংশ হিসাবে ১৮-০২-২০১৪ ইং তারিখ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপনিস্থতিতে উত্তর সিংড়াবুনিয়া ব¬কের ৩৫জন চাষীর মাঝে ১৪.৫৪ একর জমিতে সবজি ও সূর্য্যমুখী চাষের অনুদান প্রদান করে। আশা করা যায় রোপনের ১২০ দিন পর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ব¬কের চাষীরা ফসল ঘরে তুলতে পারবে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে প্রতিমণ সূর্য্যমুখী বীজে ১৬ কেজির বেশী উচ্চমানের সূর্য্যমুখী তৈল পাওয়া যাবে।
একটি সময়পোযোগী বৃষ্টিপাত হওয়াতে তাই ব্র্যাক পরিচালনাধীন ব¬কগুলোকে চাষীদের ফসলের যত্ম নেওয়ার পরিচর্যা, নিড়ানো, সার প্রদান ও কেলি করার ধুম পড়ে গেছে। এই চিত্র বরগুনা সদরের ৬টি ইউনিয়নের প্রতিটি সূর্য্যমুখী ব¬কে, কোন কোন ব¬কে গাছে ফুল এসে গেছে।
সম্প্রতি সবজি ও সূর্যমুখী চাষ পরবর্তী কৃষি অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তর শিংড়াবুনিয়া ব¬কের ৩৫জন চাষীসহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বজলুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ, ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি আবদুল¬া আল ফারুক, ব্র্যাকের সিনিয়র উপজেলা ব্যবস্থাপক মোঃ মাহবুবুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, গোলাম মোহাম্মাদ ভূইঞা।
সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল, ১ একর জমিতে সূর্য্যমুখী চাষে ১৮-২০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৪৫-৫০ হাজার টাকার সূর্য্যমুখী তৈল বীজ উৎপাদন করা যায়। সব খরচ বাদ দিয়েও কৃষক প্রতি একরে ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারে। যা অন্য কোন ফসলে সম্ভব নয়। বাজারে বীজের মন প্রতি মূল্য পাওয়া যায় ১৬০০ টাকার বেশী, উপরন্ত সারা বছরের খাবার তেলের যোগান পাওয়া যায়।
ব্র্যাক বরগুনা সদরের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ ভূইঞা অনুদান বিতরণ করার সময় ব্র্যাকের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও শস্য বহুমুখী করণের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান এবং কৃষি ও কৃষকদের কারিগরি সহায়তা ও অনুদান সহ ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আশা প্রকাশ করেন তৈল বীজ উৎপাদনে ব্র্যাকের প্রচেষ্টা সূর্যমুখী চাষে বিপ্লব ঘটাবে এবং দেশে তেলের চাহিদা পূরণে অনেক অবদান রাখবে।