শ্যামলবাংলা ডেস্ক : গুনে গুনে ঠিক ১শ দিন আগে শুরু হয়েছিল ক্ষণ গণনা। রাজধানীর বুকে বসানো ঘড়িগুলো প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল- আর মাত্র কিছুদিন, আর মাত্র কিছুক্ষণ। আজ মধ্যরাতে থেমে যাবে সেই ঘড়িগুলো। এই স্তব্ধতাই সূচনা করবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। শুরু হবে ক্রিকেট নিয়ে উচ্ছ¡াস, উন্মাদনা। ক্রিকেটের এই মহামঞ্চ তৈরি করে প্রস্তুত বাংলাদেশ। প্রস্তুত মুশফিকরাও, কালই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামছে টাইগাররা। মুশফিকদের সঙ্গে থাকবে ষোলো কোটি মানুষের অশেষ শুভকামনা। সঙ্গে জয়ের প্রার্থনা। এশিয়া কাপের ব্যর্থতার অভিমান ভুলে আবারও মুশফিকদের জয়ের জন্যই তাকিয়ে থাকবে গোটা দেশ। বাংলাদেশের এই বিশ্বকাপ আয়োজনে মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকবে গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
মাত্র একদিন আগেই তার ইঙ্গিত মিলেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। বিসিবি আয়োজিত বৃহস্পতিবারের ‘সেলিব্রেশন কনসার্ট’ স্বাগত জানিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বকে। কেবল রাজধানী ঢাকাই নয়, চট্টগ্রাম ও সিলেটও এখন ক্রিকেটের উৎসবনগরী। তিনটি বিভাগীয় শহরই সেজেছে নববধূর সাজে। রাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহর হয়ে ওঠে আলোয় উদ্ভাসিত। উন্মাদনাও ছড়িয়ে পড়েছে দেশে। গ্যালারিতে বসে হোক কিংবা টিভিসেটের সামনেথ টি২০ বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে আছেন ক্রিকেটামোদীরা। এককথায় ক্রিকেটরঙে রঙিন হয়ে উঠেছে লাল-সবুজের দেশ। বিশ্বকাপ ক্রিকেট মহোৎসবের একক আয়োজক বাংলাদেশ। আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ।
টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটি ক্রিকেটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বাংলাদেশে যাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত না হতে পারে সে জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত হয়েছিল। সকল চক্রান্ত মোকাবেলা করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আয়োজনে বাংলাদেশ সফল হয়েছে।’ গতকাল রাতে গণভবনে টি২০ বিশ্বকাপ এবং লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত কর্মসূচিতে ব্যবসায়ীদের আর্থিক অনুদানের চেক গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী ওইসব কথা বলেন।
মূল বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা আরও এক সপ্তাহ। ২১ মার্চ শুরু হবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দিয়ে। তাতে কী? বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের বিশ্বকাপ তো কাল থেকেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে স্বপ্নযাত্রা শুরু হবে মুশফিক-সাকিবদের। অনেকের চোখেই এটি বাংলাদেশের ‘ফাইনাল’। জিতলে দ্বিতীয় পর্বে ওঠার পথে ৮০ ভাগ এগিয়ে যাবে আমাদের স্বপ্নের সারথীরা। হারলে মহাবিপদ। দুই পর্বে বিশ্বকাপ বলে আগেই বাংলাদেশে পা পড়েছে ছোটদের। বড়দের আগমনও শুরু হয়েছে। টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ও আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপজয়ী ধোনিরা ঢাকায় পৌঁছেছেন গতকাল দুপুরে। রাতে এসেছে আরেক সাবেক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। এসেছে নিউজিল্যান্ডও। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সাবেক চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবং কয়েকদিন আগে এশিয়া কাপ জিতে ঘরেফেরা শ্রীলংকাসহ বাকি দলগুলো এসে পড়বে আগামীকালের মধ্যেই।
বড়দের প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হবে সোমবার থেকে। ওই দিন মিরপুরে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড এবং ভারত ও শ্রীলংকা প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে। মঙ্গলবার ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নেবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
অনেক নতুনে ভরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পঞ্চম আসর। এই প্রথম দুই পর্বে হচ্ছে বিশ্বকাপ। একই সঙ্গে নারীদেরও অভিষেক আসর। স্বাভাবিকভাবেই মুশফিক-সাকিবদের মতো লাল-সবুজ পতাকা থাকবে সালমা-শুকতারাদের হাতেও। ২৩ মার্চ শুরু হবে নারীদের বিশ্বকাপ। সালমারা প্রথম মাঠে নামবেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেশের গর্বের ওই দিনে সালমাদের ব্যাট-বলেও বিশেষ নজর থাকবে সকলের। টুর্নামেন্ট সামনে রেখে কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি একদিনের ম্যাচ খেলে দুটিতেই জিতেছে তারা। নারী ক্রিকেটারদের এটি প্রথম সিরিজ জয়।
নির্বিঘ্নে খেলা সম্পন্নের জন্য নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে বিশ্বকাপের ৩ নগরী। খেলা চলাকালীন শহরে যানবাহন চলাচলে থাকবে কঠোর নিয়ন্ত্রণ। নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারি থাকবে হোটেলগুলোতে। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা (আকসু) প্রতিনিধিরাও এসে পৌঁছেছেনে। সন্দেহভাজন, বিশেষ করে জুয়াড়িরা যাতে ক্রিকেটারদের ধারেকাছে ঘেঁষতে না পারে, সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা। বিশ্বকাপ নিয়ে এ উন্মাদনার মধ্যে থাকবে না টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি। অনেক আগেই যে অনলাইনে টিকিট ক্রয়ের পর্ব সেরেছেন দর্শকরা। তবে প্রকাশ্যে টিকিট নিয়ে যুদ্ধ দেখা না গেলেও টিকিট পাওয়ার প্রত্যাশার শেষ নেই অনেকের। আগামীকাল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের টিকিট নিয়েই আগ্রহ বেশি মানুষের।