এস এম জামাল. কুষ্টিয়া : মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই বাঙালির চেতনায় এক অবিস্মরণীয় কালপুরুষ। তাঁর গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে একই স্রোতধারায় আনার জন্য আমরণ কাজ করেছেন এই মরমী সাধক। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৪ তম স্মরণোত্সব উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আঁখড়া বাড়ীতে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। সাঁইজীর জীবদ্দশায় তার ভক্ত অনুরাগী শিষ্যরা স্মরণোত্সবের অনুষ্ঠান খুব জাকজমক ভাবে উদযাপিত করতেন। এবারো তার কোন ব্যতিক্রম হচ্ছে না। স্মরণোত্সবের অনুষ্ঠানকে ঘিরে ইতোমধ্যে লালন একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন নানান উদ্যোগ গ্রহণ সহ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। লালন সাঁইয়ের মাজারের সাজসজ্জা ও ধোয়া-মোছার কাজ শেষ করে সাঁইজীর পছন্দের সাদা ধূসর রং দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে তাঁর মাজার।আজ সন্ধ্যা ৭টায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ স্মরণোত্সবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও কুষ্টিয়া ৩-সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ অনুষ্ঠান। সত্য সু-পথের সন্ধ্যানে মানবতার দিক্ষা নিতে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধু-গুরু ও ভক্তরা দলে দলে আসতে শুরু করেছে সাঁইজির মাজারে। বাউল সম্রাটের ১২৪তম স্মরণোত্সবের অনুষ্ঠানমালা সাজানো হয়েছে ৫ দিনব্যাপী। মূল উত্সব শুরু হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আসন গেড়ে গেয়ে চলেছে সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। জমজমাট এখন লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে।
কালী নদী তীরবর্তী লালন মঞ্চের সামনে আয়োজন করা হয়েছে গ্রামীণ মেলার। বিভিন্ন স্টলের পাশাপাশি থাকছে শিশু বিনোদনেরও ব্যবস্থা।
উলেখ্য, ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই বাউল সম্রাট লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানা মত থাকলেও নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় লালন ফকির ১৭৭৪ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। আর্থিক অসংগতির কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। যৌবনকালে পূণ্য লাভের জন্য তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। পরে একজন মুসলমানের দয়া ও আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর তিনি সাধক ফকির হন। তার স্মরণে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া লালন মাজার চত্বরে উত্সবের আয়োজন করা হয়।