মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : আপন স্বকীয়তা হারিয়ে এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদী এখন কালের স্বাক্ষী হতে চলেছে। এ প্রজন্মের নবীনরা এখন বিশ্বাসই করবেনা যে নওগাঁর মহাদেবপুরের এ আত্রাই নদীতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করেছে পালতোলা অসংখ্য নৌকা। ভাটিয়ালী আর পল্লীগীতি গানের সুরে মাঝি-মাল্লারা এসব নৌকা নিয়ে এক সময় ছুটে চলেছেন দূর-দূরান্তে সেটাও নবীনদের কাছে এখন অলিক গল্পের মতই। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এ নদীটিকে ঘিরে মহাদেবপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার নানান স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজার সমূহে ব্যবসার জন্য ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কালাই ও গমসহ নানান কৃষি পণ্য নিয়ে সওদাগররা নৌকায় পাল তুলে মাঝিমাল্লা নিয়ে ছুটে চলতেন। শুধু কৃষি পণ্যই নয় হাটগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। ওই সময় আত্রাই নদী ছিল পূর্ণ যৌবনা। এ নদীকে অবলম্বন করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার রাস্তাও খুঁজে পেয়েছিলেন। হাটবাজার ছাড়াও এ নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। নদীর থৈথৈ পানি দিয়ে কৃষক দুই পাড়ের ঊর্বরা জমিতে ফসল ফলাতেন। নদীর অফুরন্ত পানিতে নানা ফল-ফসলে ভরে উঠেছিল নদীর দুইধারের হেক্টরের পর হেক্টর জমি। মানুষের কাছে ছিল সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন অসংখ্য জেলে পরিবার বসতী গড়ে তুলেছিল। ছোট বড় নানা প্রজাতীর মাছেরও স্থায়ী উৎস ছিল এই নদী। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর। জীবিকার জন্য মাছের আশায় জেলেরা রাতদিন ডিঙ্গী নৌকায় জাল-দড়ি নিয়ে চষে বেড়াতেন নদীর এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সেদিন শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। কালের আবর্তে সেই ভরা যৌবনা নদী এখন মরাখালে পরিণত হয়েছে। আত্রাইকে ঘিরে গড়ে ওঠা অসংখ্য হাটবাজারগুলো বর্তমানে বিরাণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে, আর কৃষি জমিগুলো ধুধু প্রান্তরে রুপ নিয়েছে। বীলিন হয়ে গেছে জেলে পরিবারগুলো আর ওই সময়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে বন্ধ। মানুষের কাছে সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। এসবের কালের স্বাক্ষী হয়ে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে শুকনো আত্রাই নদী। ঐতিহ্যের দিক থেকেও অন্যতম ছিল আত্রাই নদী। ভৌগলিকভাবেও নদীটির ব্যাপক গুরুত্ব ছিল।