অনন্যসাধারণ সৃষ্টিধর্মী প্রতিভার অবদানে বিপুলভাবে সমাদৃত রোমান্টিক মানসপ্রবণতার অধিকারী, মানবতাবাদী, স্বাধীনচেতা, অত্যাচার-নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনা, গোড়ামী ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সাহসী-সোচ্চার, সত্য ও ন্যায়ের আদর্শে অবিচল এক যোদ্ধা; তিনি আর কেউ নন আমাদের সমধিক পরিচিত সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক, সংগঠক ও শিক্ষানুরাগী, আমার অগ্রজ কলমসৈনিক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার।
সাহিত্য, সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও পেশাগত ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। জাতীয় জীবনে তার অবদান জাতির হৃদয়ে পরম শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হবে একদিন। শোষণ-বঞ্চনা, মুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজের স্বপ্ন সারথি ‘আধার’ শেরপুর শহরের উপকন্ঠ দমদমা কালিগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৭০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার মাতুতালয় মীরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী মাষ্টার। তিনি ব্যক্তিজীবনে স্বনামধন্য একজন শিক্ষক। মাতা মোছাঃ রোকেয়া বেগম একজন আদর্শ গৃহিণী।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি চঞ্চল ও দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। স্কুল ফেলে ঘুড়ি ওড়ানো আর মাছ শিকারের মচ্ছবে ছুটে যাওয়াই ছিল তার দুরন্তপনার অন্যতম দিক। অভিভাবকের কড়া শাসন আর পুনঃপুন পিটুনীর পরও থামানো যায়নি তার ওইসব দুরন্তপনা। এরপরও ওইসময়কাল থেকেই দারিদ্রপীড়িত পরিবারের কষ্টে কিংবা আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে যাওয়াদের দলের সক্রিয় সদস্য হতেন তিনি। আর তখন থেকেই বিচক্ষণতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন প্রতিটি কর্মেই। বর্তমানে তিনি নিজের সাফল্যকে নিয়ে আত্মগর্বিত নন। তিনি সাধারণ মানুষের একজন প্রিয়ব্যক্তিত্ব। মানসপ্রবণতা, প্রেম, প্রকৃতি এবং মাটি ও মানুষের জন্য যার জন্ম, সংগ্রামশীল নানা বৈচিত্রমমতায় বর্ণাঢ্য যার জীবন, সেই রফিকুল ইসলাম আধার, আমাদের প্রেরণার উত্স। তিনি শূন্য জীবনের সন্ধিক্ষণে একাধারে পেশাগতভাবে আইনজীবী, নেশায় একজন রাজনীতিবিদ, সামাজিক দায়বদ্ধতায় একজন পরিপূর্ণ মানুষ, সমাজসেবক। তিনি ছাত্রজীবন শেষে হাজারও স্মৃতির আর্শিবাদকে সাঙ্গ করে ২০০০ সালে আইনপেশায় আত্মনিয়োগ করেন। শুরু থেকেই তিনি সত্য ও ন্যায়ের আদর্শে অবিচল। ফলে জেলা বারের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনে তিনি বারবার ভিন্ন ভিন্ন পদে বিপুল ভোটাধিক্যে নির্বাচিত হয়েছেন। বলাবাহুল্য, তার দীর্ঘ পেশাগত জীবনে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেলেও তিনি কখনও কারও নিকট পরামর্শ ফি গ্রহণ করেন না। অনুসরণীয় বিষয় হচ্ছে লালসার শিকার হয়ে কখনও অন্য কোন আইনজীবীর মামলা গ্রহণ করেননি। তার আইনপেশার উপার্জিত অর্থের অর্ধেকটাই অকাতরে ব্যয় করে চলেছেন অবহেলিত হতদরিদ্র কন্যাদায়গ্রস্তসহ বিভিন্ন মানবতার সেবায়। সেবাই মানুষের ধর্ম; বাক্যটি এখানে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আজীবন নিজেকে সপে রেখেছেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণে।
তিনি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আইন পেশায় যোগদান করলেও রাজনীতিকে তিনি গুডবাই জানাতে পারেননি। বরং রাজনীতি তার গভীরে প্রোথিত হয়েছে। সৎসাহস এবং সততাকে পুজি করে সমাজসেবার মধ্য দিয়ে নিজের কর্মযোগ্যতায় সমাজের তৃণমূল থেকে সংগ্রাম করে উঠে এসেছেন। তিনি একজন নিঃস্বার্থ ত্যাগী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। রাজনীতির কালো দিনগুলি কখনই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে তিনি আপোষহীন। নিঃস্বার্থ খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি রাজনীতি করেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিধ্বস্ত অর্থনীতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, নজিরবিহীন স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজী, অস্ত্রবাজী, অবনতি, অরাজকতা আর দলীয়করণ, আত্মীয়করণে অতিষ্ঠ অসুস্থ্য রাজনীতিকে শেরপুর তথা গোটা দেশবাসীকে মুক্ত করাই তার রাজনীতির আদর্শ হোক এটাই আমাদের কামনা।
বহুমুখী প্রতিভা ও সংগ্রামী জীবনের অধিকারী কর্মময় ব্যস্ত মানুষ আধার। তিনি চেতনার অসামান্য রূপকার, শিক্ষানুরাগী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকও। তিনি স্বপ্ন দেখেন নিরক্ষরমুক্ত সমাজব্যবস্থার। তাইতো শেরপুর শহরের উপকন্ঠ দমদমা মহল্লায় নিজ উদ্যোগে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন এম এ পাবলিক স্কুল। যাতে এলাকার গরিব, মেধাবী, সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়। এছাড়া তিনি শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ডাঃ সেকান্দর আলী মহাবিদ্যালয়, নওহাটা জামিয়া সিদ্দীকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, উত্তরা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়সহ শহরের বেশ কয়েকটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন।
সদাব্যস্ত মানুষটি যেন বসন্ত বিজয়ের প্রাতঃসমীরণে আমোদ-উলাসে বিভোর। দুঃখ-ক্লেশের লেশমাত্র নেই তার শরীর ও মননে। খরস্রোতা নদীর উপর দিয়ে সন্ধ্যার দীর্ঘ ভারবাহী তরণী যেমন করে এপাশ-ওপাশ হেলে-দুলে এঁেকবেকে মন্থর গতিতে ভেসে যায় এক সূর্যোদয় হতে আরেক সূর্যোদয় পর্যন্ত; ঠিক তেমনি রফিকুল ইসলাম আধারও সেই সন্ধ্যার দীর্ঘ ভারবাহী তরণী হয়ে সমাজ-সংস্কৃতি অঙ্গণে প্রবেশ করে এলাকার ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে তিনি সফল সংগঠক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে সমাজে সমাদৃত হয়েছেন।
মুক্তিকামী, মানবতাবাদী, চারণ সাংবাদিক এই মানুষটি তার সাহিত্য শিল্পের নিবন্ধ-প্রবন্ধের অতুলনীয় সম্পদ শেরপুরবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা। সমাজ সংস্কৃতি নবনির্মাণে, স্বাধীনতা, দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্তি অর্জনের প্রচেষ্টায় বিশুদ্ধ সমাজ গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এডভোকেট আধারের অনুপ্রেরণা অনিঃশেষ। তিনি ১৯৯৯ সালে প্রথম ‘সাপ্তাহিক শেরপুর’ এর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদকতায় পা রাখেন। এরপর একযুগেরও বেশি সময় ধরে ‘সাপ্তাহিক দশকাহনীয়া’র নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কিছুদিন ‘দৈনিক তথ্যধারা’র প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে ময়মনসিংহের ‘দৈনিক আজকের বাংলাদেশ’ ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক লালসবুজ’ ‘দৈনিক মাতৃভূমি’ পত্রিকায় দীর্ঘদিন শেরপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ ও ‘বাংলাদেশ বেতার’ এ নিষ্ঠার সাথে জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার অবিনাশী ক্ষুরধার লেখনী চিন্তা-চেতনা জাতির জন্য উজ্জল উত্তরাধিকার এবং অনুপ্রেরণার উত্স হিসেবে নিজেকে প্রস্ফুটিত করেছেন। যা আমাদের শেরপুরবাসীর গর্ব।
সম্প্রতি তার প্রকাশনা ও সম্পাদনায় অনলাইন ন্যাশনাল নিউজপোর্টাল ‘শ্যামলবাংলা২৪ডটকম (shamolbangla24.com)’ দেশব্যাপী সমাদৃত ও পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। এসবের মাঝেও তিনি সমকালীন নিবন্ধ-প্রবন্ধ লিখনে সিদ্ধহস্ত। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ায় তার বেশ কয়েকটি লেখা বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। তার অপ্রকাশিত গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের চোখে ঘুম নেই’ গল্পগ্রন্থ ‘মাঝখানে নদী’ পুস্তক আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে কর্মব্যস্ততার কারণে সাহিত্যঅঙ্গণে তার তেমন সখ্যতা না থাকলেও সাহিত্য জড়িয়ে রয়েছে তার শিরা-উপশিরায়। সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা ও কবিতা পাঠের আসরে তার দেদিপ্যমান উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তিনি অধুনাবিলুপ্ত শেরপুর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার দরাজ কণ্ঠের আবৃত্তি দর্শকশ্রোতাকে নাড়িয়ে তোলে। তিনি বর্তমানে শেরপুর নজরুল পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি। নানা প্রতিকূলতা ও কর্মব্যস্ততার মাঝেও কর্মবীর মানুষটির নিস্তার নেই। সদাসর্বদাই ব্যস্ত যন্ত্রচালিতের মতই যেন তার জীবন। তারপরও বলবো, ‘হে কর্মবীর আরও উদ্যমী হও, এগিয়ে যাও আপন মহিমায় অভীষ্ট লক্ষ্যে, সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায়। মনে রেখ তুমি আইনজ্ঞ, সাংবাদিক, সংগঠক, শিক্ষানুরাগী শুধু নও, তুমি নেতা, তুমি নায়ক থেকে মহানায়কে পরিণত হও’ -এ প্রত্যাশা আমাদের।
(বি: দ্র: নিবন্ধটি ৭ মার্চ শুক্রবার এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধারের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পঠিত।)
লেখক : সাংবাদিক, কলামিষ্ট, শেরপুর।