এম এ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) : নওগাঁর মহাদেবপুরে কৃষকরা এবার ১ হাজার ৬শ ৮০ হেক্টর জমি থেকে আলুর ফলন পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৬শ মেঃ টন। অতীতের হিসেবে এ ফলন এবার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আলুর রেকর্ড সৃষ্টি করা ফলন হলেও বাজারে মূল্যপতনে খুশিতে নেই আলুচাষী অগণিত কৃষাণ-কৃষাণী। চাষীরা এবার আলুর ফলন পেয়েছেন দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে। এতবেশী ফলন পাওয়ার পর যেখানে খুশি হওয়ার কথা সেখানে বাজারে দাম না থাকার কারণে চাষীরা পড়েছেন চরম হতাশার মধ্যে। উৎপাদিত এই বিপুল পরিমাণ আলু শেষ পর্যন্ত পানিরদরে বিক্রি করতে হয়, নাকি পচে-গলে নষ্ট হয়ে যায় সেই দুশ্চিন্তায় কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানের কৃষাণ-কৃষাণীদের মধ্যে মতিউর রহমান, ছাইদুর রহমান, আমেনা বিবি, লতিজান বিবি, খোতেজা খাতুন, আইজুল ইসলাম, লবানু মন্ডল ও নারায়ণ চন্দ্র জানান, আবহাওয়া ভাল থাকায় গতবছরের চেয়ে তাদের জমিতে এবার আলুর রেকর্ড পরিমাণ ফলন হয়েছে। তারা জানান, বিগত বছরগুলোতে প্রতিবিঘা জমিতে যেখানে আলুর ফলন হয়েছে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ মণ সেখানে চলতি মৌসুমে প্রতিবিঘা জমিতে আলুর ফলন হয়েছে ৬৭ মণ। কৃষকরা বলেন, এত আলু যেমন খাওয়া সম্ভব নয় আবার বাজারের বর্তমান মূল্য পরিস্থিতি এমন যে এগুলো বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছেনা। এসব আলু সংরক্ষণ করা গেলে পরবর্তীতে বিক্রি করে ভাল মূল্য পাওয়া যাবে বলে তারা মনে করছেন। কিন্তু উপজেলায় মাত্র ৯ হাজার মেঃটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটিমাত্র কোল্ডষ্টোরেজ থাকায় একসাথে এত আলু সেখানে রাখাও সম্ভব হচ্ছেনা। এমতাবস্থায় উৎপাদিত আলু নিয়ে চরম বেকায়দাগ্রস্ত হয়ে পড়া চাষীরা হতাশায় দিগি¦দিক ছুঁটোছুঁটি করছেন। একদিকে একেবারে নগণ্য বাজার মূল্যের কারণে কৃষকরা এমনিতেই আলুর উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেননা, অপরদিকে সংরক্ষণও করতে না পারায় কেউ কেউ মনের ক্ষোভে বাধ্য হয়ে তাদের আলু জমি থেকেই পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অধিকাংশ চাষী দাম বাড়ার আশায় এখনও অপেক্ষায় আছেন। আলুচাষীরা জানান, প্রতিবিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ পড়েছে বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকসহ গড়ে ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে ওই এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১৩ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে লাভতো দূরে থাক উৎপাদন খরচই উঠছেনা। ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে এবার আলুর রেকর্ড পরিমাণ ফলনের কথা উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে প্রতিহেক্টর জমিতে আলুর ফলন হয়েছে গড়ে ২০ মেঃটন। এই ফলনহার অনুযায়ী ওই পরিমাণ জমি থেকে এবার ৩৩ হাজার ৬০০ মেঃটন আলু উৎপাদন হয়েছে। তিনি জানান, বাজারে দাম না থাকায় রেকর্ড পরিমাণ ফলনেও কৃষক এবার ভাল নেই।