মনিবুর রহমান চৌধুরী, পত্নীতলা (নওগাঁ): নওগাঁর পত্নীতলায় আত্রাই নদীর নির্দিষ্ট বালু মহাল বাদ দিয়ে অবৈধ ভাবে শ্যালোমেশিন দিয়ে নদীগর্ভ থেকে বালু উত্তোলন করায় তীরবর্তী জনবসতি ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন সহ নদীর গতি পথ পরিবর্তন হওয়ার হুমকি বাড়ছে। এতেকরে হুমকির আশঙ্কায় রয়েছে পত্নীতলা থানা, ফরেষ্ট বাগান, বিট অফিস, শ্মশান, পলিপাড়া গ্রাম, মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁধ সহ আত্রাই নদীর উপরে নির্মিত সিদ্দিক প্রতাপ সেতু ও তীরবর্তী জনবসতি।
পত্নীতলায় আত্রাই নদীর বালু মহালের আয়তন প্রায় ৮০.১৯৮ হেক্টর হলেও নদীর বাঁধের ধারের সিমানা মহাদেবপুর থেকে ধামইর হাট পর্যন্ত প্রায় ১৬ থেকে ১৮ কিলোমিটার। বালু মহাল বাদেও নদীর ধার থেকে ভরাট বালু উঠানো হয় পুরো পত্নীতলা সিমানার নদীর দু’পাশ থেকেই অবৈধ ভাবে। যাতে করে সরকারী ও বে-সরকারী বাগান, আবাদী জমি, শ্মশান, পলিপাড়া গ্রাম, মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়ে আসছে। পত্নীতলার সিমানায় আত্রাই নদীর বালু নওগাঁ জেলা সহ বাহিরের অন্যান্য জেলাতেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ হয়ে থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ভারত থেকে শিমুলতলী হয়ে বয়ে আসা আত্রাই নদীটি উপজেলা সদর নজিপুর ফরেষ্ট বিট অফিস ও পত্নীতলা থানার পাশ দিয়ে বহমান। উপজেলার বাগুড়িয়া ছালিগ্রাম, ফরেষ্ট বাগান ও বিট অফিস ও পত্নীতলা থানার পার্শ্বে সহ সিদ্দিক প্রতাপ সেতুর দক্ষিন পাশ পলিপাড়া গ্রামের বাঁধ ঘেঁষে নদীর মধ্য থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে দিন দিনই এলাকার তীরবর্তী জনবসতি ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন সহ নদীর গতি পথ পরিবর্তন হওয়ার হুমকি বেড়েই চলেছে।
সরজমিনে দেখাগেছে, পত্নীতলায় নির্দিষ্ট বালু মহাল বাদ দিয়ে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে আত্রাই নদী থেকে সরকারী আইন বহির্ভত ভাবে স্থানীয় অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। বালু উত্তোলনের জন্য এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা নদীর বুকে নৌকায় শ্যালো মেশিন রেখে ভাসমান অবস্থায় নদীর তলদেশে থেকে পাইপের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছে।
আর এ বালু উত্তোলনের ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছুটা লাভবান হলেও যেকোন সময় এএলাকার তীরবর্তী জনবসতি ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন সহ নদীর গতি পথ পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে বন বিভাগের বাগান সহ পত্নীতলা থানা ভবন, নদীর উপর নির্মিত সিদ্দিক প্রতাপ সেতুটি সহ শ্মশান, পলিপাড়া গ্রাম, মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়ে আসছে।
এভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলনের ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। আর এ নিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্নীতলায় আত্রাই নদীর নির্দিষ্ট বালু মহাল বাদ দিয়ে অবৈধ ভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিন যাবৎ অত্র এলাকাবাসী অভিযোগ করলেও আজ পর্যন্ত এব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ইতিপূর্বে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলেও একবার লোক দেখানো প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা ধার্য করা ছাড়া অদ্যবধি প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।
নজিপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গৌতম দে জানান, অত্র এলাকাটি তার ওয়ার্ড ভুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর পক্ষে তিনিও এব্যাপারে নানাভাবে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেও কোন সুরাহা আনতে পারেননি। আত্রাই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তলনে হাইকোর্টে রীট পিটিশনের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী উপজেলা মহাদেবপুরের জনৈক ব্যক্তির নামে বালু মহাল ইজারা থাকলেও কৌশলে তা নজিপুরের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে প্রশাষনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কতিপয় বালু ব্যবসায়ী বালু মহাল থেকে অবাধে অবৈধভাবে মেশিন দ্বারা বালু উত্তোলন করছে। বর্তমানে অবৈধ ভাবে নদী গর্ভ থেকে মেশিন দ্বারা বালু তোলার ফলে বর্ষা মৌশুমের আগেই শ্মশান, মন্দির, পলিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পলিপাড়া পানি উন্নয়ন বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত মোঃ রফিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেশিন দিয়ে নদীর গর্ভ থেকে বালু উত্তলোনের বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।