রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরের রেল স্টেশনে ৪৪ বছর যাবত চা বিক্রয় করে জীবনের কঠিন যুদ্ধে এক সফল মানুষ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন উপজেলার পূর্ববালুভরা গ্রামের মো: সমাছুদ্দিন প্রামানিক ( ৬০)। জীবনের শেষ সময়ে এসেও তিনি একজন সেবক হিসেবে সেবাদান করে আসছেন উপজেলার রেল স্টেশনে চা সেবী প্রেমিকদের।
উপজেলার পূর্ব বালুভরা গ্রামের মৃত-ছকিমুদ্দিন এর ছেলে এই সফল মানুষ সামছুদ্দিন জানান, তার পিতা পাকিস্তানি শাসনের সময় ১৯৫২ সালে এই রাণীনগর রেল স্টেশনে সর্ব প্রথম ছোট্ট একটি চা স্টল দিয়ে এই চা বিক্রয়ের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি পরিবারের তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে বাবার সঙ্গে এই চা স্টলে চা তৈরি করার কাজে সাহায্য করতেন। এই ভাবে চা বিক্রয়ের ব্যবসা তার জীবনের পেশা হিসেবে পরিণত হয়। পরবর্তি সময়ে পিতার দেয়া পৈতিক সম্পত্তি হিসেবে এই চা স্টলটি পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই। আর পিতার দেয়া এই চা স্টলটিকে আর্শিবাদ মনে করে এর মাধ্যমেই এখনও জীবন-যাপন করে যাচ্ছেন সামছুদ্দিন। তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন অনেক পড়াশুনা করে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একটি ভালো চাকুরি করার আশা ছিল কিন্তু পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে তার সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেছে।
তিনি জানান, এই আয়ের মধ্য দিয়েই তিনি তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আর কলেজে পড়া একমাত্র সন্তান (বর্তমানে স্থানীয় কলেজে) স্নাতক শেষ পর্বের ছাত্র। শত অভাব-অনটনের মধ্যেও যে তিনি তার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষা দিতে পারছেন এটাই তার জীবনের বড় পাওয়া। শুধু তার সন্তানের পড়াশুনা শেষে ভালো একটি চাকুরি পেলেই তার জীবনের সকল চাওয়া পূর্ণ হবে বলে তিনি বুকে আশা বেধেঁ আছেন।
তিনি বলেন, তার এই অক্লান্ত পরিশ্রম দেখে তার ছেলে কলেজ পাঠ শেষ করে এসে সহায়তা করে চা স্টলে। সারাদিন চা বিক্রয় করে তিনি ৩০০-৪০০টাকা আয় করেন আর এই সীমিত আয় দিয়েই সন্তানের পড়াশুনার খরচ সহ পরিবার চালাতে হয়। এতে অনেক সময় তাকে হিমসিম খেতে হয় সংসারের খরচ বহন করতে। অর্থের অভাবে তিনি তার দীর্ঘদিনের চা স্টলটিও মেরামত করতে পাছেন না।
আধুনিকতার এই সময়ে অনেকেই এই বৃদ্ধের ভাঙ্গা চূড়া চা স্টলে অনেক সময় চা পান করতে ইতস্তত বোধ করেন বলে তিনি জানান। আগের সময়ে এই রেল স্টেশনে অনেক লোকাল ট্রেন দাঁড়াতো এবং অনেক লোকের সমাগম হত তাই তখন আয়ও বেশ ভালো হত। সেই সময়ের তুলনায় তার আয় অনেক কমেছে কিন্তু বেড়েছে এই অভাবী সংসারের ব্যয়। তবুও তিনি হাল ছাড়বেন না তার একমাত্র ছেলেকে উচ্চতর পড়াশুনায় স্বশিক্ষিত করতে। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, তার একমাত্র ছেলে উচ্চতর পড়াশুনা শেষ করে একটি চাকুরি নিয়ে সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার বাবার মুখ উজ্জল করবে।