শ্যামলবাংলা স্পোর্টস : ‘এমনি এমনি কথা বলে কোন লাভ নেই। ক্রিকেটারদের জবাব দিতে হয় মাঠে। মাঠে ভালো বোলিং করতে পারলে, উইকেট নিতে পারলে সবাই বাহবা দেবে’ অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই যেন টি-২০ বিশ্বকাপের ওপেন মিডিয়া সেশনে কথাগুলো বললেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। বাঁহাতি এ স্পিনারের আক্ষেপের কারণ, এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর তার একটি ওভার নিয়ে কড়া সমালোচনা হয়। রাজ্জাক অবশ্য এ সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করেছেন। তার মতে, সমালোচনা তার কাছ থেকে আরও ভালো কিছু বের করে আনবে।
অথচ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার আবদুর রাজ্জাক। টি-২০ ও ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটেই সবচেয়ে বেশি উইকেট তার; কিন্তু এশিয়া কাপে তেমন ভালো করতে পারেননি বলেই শুরু হয়ে গেছে সমালোচনা। অনেকে তার ক্যারিয়ারের ইতি পর্যন্ত টেনে দিতে চান। ক্যারিয়ারের এমন পর্যায়ে এসে এসব শুনতে কারও ভালো লাগার কথা নয়। রাজ্জাক কিন্তু নিন্দুকদের এসব সমালোচনা একজন সত্যিকারের ক্রীড়াবিদের মতোই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন- আমি আসলে জিনিসটা ইতিবাচকভাবেই নিয়েছি। আমার সেখানে অবশ্যই ভুল হয়েছে। ভুল না হলে এত কথা হতো না। জিনিসটা কেন হয়েছে, সেটা খুঁজে দেখছি। মাঠে অনুশীলন করছি, যেন ওই ভুলটা আমার আর কখনো না হয়। আসলে ভালো খেলোয়াড়ের গুণ হচ্ছে, একই ভুল বারবার না করা। যদি পারি, তাহলে নিজের কাছে ভালো লাগবে। আমি খারাপ করলে অবশ্যই আমাকে শুনতে হবে। যদি না শুনি তাহলে আরও ভালো আমার থেকে বের হয়ে আসবে না।’ তবে সমালোচকদের ভয়ে নয়, নিজের কাছে যদি মনে হয় ভালো খেলতে পারছেন না তাহলে ক্রিকেট ছেড়ে দেবেন বলেও জানান রাজ্জাক- ‘’আমি স্তিমিত হয়ে গেছি বললে একেবারেই ভুল হবে। আমি এমন কিছু মনে করি না। যদি আমি মনে করি এমন কিছু হয়েছে, তাহলে আমিই ক্রিকেট ছেড়ে দেব। আমিই খেলব না। যতদিন আমি মনে না করছি, ততদিন আমি কারও কথার পরোয়া করি না।’
এশিয়া কাপে ভালো না করার ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, আসলে অজুহাত দেখানো ঠিক নয়। তারপরও কিছু কিছু সময় বলতে হয় সবকিছু পরিষ্কার করার জন্য। এশিয়া কাপ কিন্তু আমাদের জন্য খুব বড় একটা টুর্নামেন্ট। আমি আসলে ইনজুরি থেকে উঠেই বড় একটা টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেছি। সেখানে যে খুব বেশি একটা ওলট-পালট যে হয়েছে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। তা ছাড়া সবকিছু যে আমার অনুকূলে ছিল সেরকমও নয়। অনেক সময় আছে যে, ভাগ্য সহায়তা করে না। আমি বোলিং নিয়ে যে খুব সমস্যায় আছি, আমার কাছে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। আশা করি, অতি দ্রুত এবং এ টুর্নামেন্টে সব ঠিক হয়ে যাবে।
শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ইনজুরিতে পড়েছিলেন রাজ্জাক। এ জন্য লংকানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও খেলতে পারেননি বাঁহাতি এ স্পিনার। নিজের ক্ষোভটাও প্রকাশ করেছেন তিনি- একটা কথা বলতেই হবে। হিসাব করলে দেখা যাবে, আমি আমার ক্যারিয়ারের অধিকাংশ ম্যাচেই বোলিং করেছি পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভার, সেকেন্ড পাওয়ার প্লের ৩ ওভার এবং ৪৬ ওভারে এসে ২ ওভারের মতো। এ জিনিসটা আসলে কখনও কেউ উল্লেখ করেনি। যে দু-একবার খারাপ হয়েছে, তখনই আমার ওপর অঙ্গুলি ওঠানো হয়েছে। দেখা গেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে (এশিয়া কাপ) একটা ওভার ছিল। আমি কিন্তু আমার পুরো ক্যারিয়ারে ওই সময়টায় ৬ বা ৭ দিয়ে চলে আসতাম। কোনদিন কি কারও মনে হয়েছে যে, ওই ওভারটির জন্য আমরা ম্যাচ জিতেছি! কিন্তু এটা কেউ উল্লেখ করেনি। না হলে একটা লাইন হলেও আসত। একটা টুর্নামেন্ট বা একটা ম্যাচ দেখে আমাকে নিয়ে এমন বলা মনে হয় ঠিক না। তারপরও আমার কোন ক্ষোভ নেই। বিশ্বকাপে আমি চেষ্টা করব সবার প্রত্যাশা পূরণের।
ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভাগ্যের সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও আক্ষেপ রাজ্জাকের, ভাগ্য একটা বড় বিষয় হতে পারে। যেমন আমার বল ব্যাটের কানায় লেগে চার হয়ে গেল। এখানে কিছু করার নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমার হাতে বল তুলে দেওয়া মানে হচ্ছে, আমার ওপর বিশ্বাস আছে। আমি চাই এ বিশ্বাস যেন নষ্ট না হয়।