আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী আশারচরের অস্থায়ী শুঁটকিপলীতে এখন বিরাজ করছে বিদায়ের করুন সুর। আর কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙে যাবে শুঁটকিপলীর মিলনমেলা।
জোর দখিণা বাতাস শুরু হলেই পাততাড়ি গুটিয়ে এ পলীর জেলেরা ফিরে যাবে নিজভূমে। গত ৫ মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে আসা জেলেরা নিজেদের মধ্যে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। বিদায়ের এ বিরহ জ্বালায় মনে দহন, চোখে ছল ছল পানি থাকলেও মুখে রয়েছে অনাবিল হাসি। মৌসুমের প্রথম দিকে ঘন কুয়াশার কারণে শুঁটকিকরণ প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। কিন্তু শেষ দিকে অনুকূল আবহাওয়ায় বিস্তর মাছ শুঁটকি করা, দামও ভালো পাওয়া যায়।
ফলে আগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখায় জেলেদের মধ্যে বিরাজ করছে স্বস্থির হাসি। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা আশারচর তালতলী উপজেলার সর্বশেষ দক্ষিণের মৌসুমী জনপদ। । শুকনো মৌসুমে প্রায় ৫ মাসের জন্য কয়েক শত লোক প্রতিবছর অস্থায়ীভাবে মাছ শিকার করতে এসে এখানে ঠাঁই গাড়ে। আহরিত মাছের একাংশ বরফজাত ও বাকিগুলো করা হয় শুঁটকি। চরের পূবর্ ও উত্তর প্রান্ত ঘিরে গড়ে ওঠে অস্থায়ী শুঁটকিপলী। মৌসুম শেষে বর্ষা আসার আগে শুঁটকিপলীর অস্থায়ী ডেরা গুটিয়ে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ফিরে যান নিজভূমে। আশারচরের একপ্রান্তে থেকে যতদূর দৃষ্টি যায় বনবিভাগের সৃষ্ট ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের শুধু সবুজের সমারোহ। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলে, শুঁটকি কারবারি এবং এদের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু শিশুরও আগমন ঘটে। ৮থেকে ১৬ বছরের এসব শিশুর সংখ্যা প্রায় শতাধিক । শখ করে এদের কেউ এখানে আসেনি। এসেছে নিজেদের পেটের তাগিদ এবং বাবা-মা, ভাই-বোনদের মুখের আহার যোগাতে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নান্দনিক দৃশ্য ওদের মনকে ছুঁতে পারে না।
পেটের তাগিদ ও দারিদ্র্যতার চিন্তাই সব সময় ওদের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। চিংড়ি মাছের মাথা বিচ্ছিন্ন করার চিন্তাই সব সময় মাথায় থাকে।
বেশি মাছের মাথা বিচ্ছিন্ন করতে পারলেই বেশি আয় হবে। বাবা-মা, ভাই-বোনদের মুখে আহার জুটবে। সারাদিন কাজ করে ওরা ৬০ থেকে ৭০ টাকার বেশি আয় করতে পারে না। অথচ বয়স্ক শ্রমিকরা সমপরিমাণ কাজ করে আয় করে ওদের ৫ গুণ সমান অর্থ। আরও অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সীমাহীন কষ্ট বুকে নিয়ে মজুরি বৈষম্যের এ নিয়মটি মেনে নিতে বাধ্য হয় ওরা। সোনারচরে শুঁটকি করতে আসা সাতক্ষিরা জগন্নাথ জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মোটামুটি লাভ হয়েছে।