দেবিদ্বারে পাচঁ দিনেও গৃহবধূর লাশ উদ্ধার হয়নি; ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা জোরদার: পাইপ উত্তোলনে ব্যয় হবে ৮০ হাজার টাকা: ১৯শ্রমিকের টানা অভিযানে সময় লাগতে পারে ৮-১০ দিন
দেবিদ্বার(কুমিল্লা) প্রতিনিধি : কুমিল্লার দেবিদ্বারে স্বামীর ভাড়াটে খুণীদের কর্তৃক গৃহধূকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাপূর্বক একটি পরিত্যাক্ত গভীর নলকূপের পাইপে লোকিয়ে রাখার একমাস পর লাশের সন্ধান মিললেও গত ৫দিনের শ্বারুদ্ধকর অভিযানে লাশ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
কুমিল্লার একটি প্রতিষ্ঠান সাথে যোগাযোগ করে ৮০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়। এব্যাপারে নলকূপ স্থাপন ও উত্তোলন প্রতিষ্ঠান ‘ভাই ভাই মুক্তা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ’ এর সত্বাধিকারী মোঃ আলী আকবর জানান, গত ‘শনিবার বিকাল থেকে উত্তোলন সরঞ্জামাদী সরবরাহ ও সেগুলো স্থাপন করে রোববার থেকে কাজ শুরু করেছি। সম্পূর্ণ পাইপ উত্তোলন করতে অন্তঃত আরো ৮-১০ দিন সময় লাগবে’।
এদিকে খুনীচক্র কর্তৃক লাশের আলাম নষ্ট কিংবা লাশের অস্তিত্ব রক্ষায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা থেকে ঘটনাস্থলে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে এবং লাশ উদ্ধার পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অপরদিকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার কাজ দেখার জন্য গত শুক্রবার সকাল থেকেই হাজার হাজার উৎসুক জনতা দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ছেঁচরাপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন গভীর নলকূপ এলাকায় ভীড় জমা অব্যাহত আছে, কখন লাশ উদ্ধার হবে এখন সবার মুখে মুখে একই প্রশ্ন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫বছর পূর্বে উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাঁও গ্রামের মোঃ কেরামত আলী সরকারের মেয়ে সাহিনা আক্তার(৩৫)’র সাথে একই ইউনিয়নের ছেচড়াপুকুরিয়া গ্রামের মোঃ দুধমিয়া’র পুত্র (বর্তমানে আবুধাবী প্রবাসী) মোঃ মোবারক হোসেন(৪০)’র সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। ইতিমধ্যে তারা দু’পুত্র সন্তান এবং এক কণ্যা সন্তানের জনক-জননী বনে গেছেন। প্রায় ৭বছর পূর্বে মেয়ের শান্তি ও পারিবারিক কলহ নিরসনে শাহিনা আক্তারের পিতা মোঃ কেরামত আলী সরকার ১৫শতাংশ জমি বিক্রি করে ৪লক্ষ টাকা দিয়ে মেয়ের জামাই মোঃ মোবারক হোসেনকে আবুধাবী পাঠান।
প্রায় দু’বছর পূর্বে মোবারক দেশে আসেন। দেশে আসার পর পারিবারিক বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারন করে। এনিয়ে সুলতানপুর ইউনিয়ন’র এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে একাধিকবার সালিস বসে। সালিসে তাদের মিলিয়ে দেয়া হলেও আবারো পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এক সপ্তাহের মধ্যেই মোবারক তার স্ত্রীকে বেধরক মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। ওই ঘটনায় স্বামী মোবারক হোসেন, শ্বাশুরী রফেজা বেগম এবং ভগ্নীপতী আমির হোসেনসহ ৮জনকে অভিযুক্ত করে ২০১২সালের ২১মার্চ দেবিদ্বার থানায় যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত মোঃ মোবারক হোসেন আবুধাবী চলে যায়। মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ্ কামাল আকন্দ তদন্ত ও স্বাক্ষী প্রমানের ভিত্তিতে মোঃ মোবারক হোসেনসহ অপরাপর আসামীদের অভিযুক্ত করে আদালতে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
গতবছরের প্রথমদিকে মোবারক হোসেন তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার বিষয়ে ডাক যোগে একটি তালাকনামা প্রেরন করে। শাহিনা আক্তার তালাকনামা ভূয়া দাবী করে স্বামীর বাড়িতেই অবস্থান নেয়। মোবারক স্থানীয়দের মাধ্যমে তাকে ৩লক্ষ টাকা দিয়ে বিদায় করার চেষ্টা চালায়। এ প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় সালিস বসে। সালিসে ইউপি সদস্য ইদ্রিস মিয়ার সভাপতিত্বে মোবারকের চাচা ওয়াহাব আলী শাহিনা আক্তার ও তার ছেলে মেয়েদের ভরন পোষনে প্রতি মাসে ২হাজার ৫শত টাকা দেয়ার প্রস্তাব করে। সালিসের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রথম দুই মাস অনেক পিড়াপিড়ি করে টাকা আদায় করলেও পরবর্তীতে আর টাকা পায়নি। মোবারক হোসেন তার স্ত্রীকে বাড়ি ছাড়া করতে ৩লক্ষ টাকার প্রস্তাবে ব্যার্থ হয়ে শাহিনাকে হত্যা করতে একই বাড়ির আব্দুল করিম ও তার অপর দু’সহযোগীকে দু’লক্ষ টাকার বিনীময়ে ভাড়া করে। ওই প্রস্তাবে আব্দুল করিম শাহিনা আক্তারের সাথে পরকীয়া প্রেমের ফাঁদ পাতে। এক পর্যায়ে চলতি বছরের ৭ফেব্রæয়ারী রাতে শাহিনা আক্তার খাওয়া শেষে তার সন্তানদের নিয়ে রাত্রীযাপন করা কালে রাত ১২টায় আব্দুল করিম তার সহযোগীদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে ডেকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসে। বাড়ির উত্তর পার্শ্বের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন’র বাড়ির সামনে একটি নির্জন জায়গায় এনে গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাপূর্বক একটি পরিত্যাক্ত গভীর নলকূপের পাইপের ভেতরে লোকিয়ে রাখে।
নিহত শাহিনার দুই ছেলে ইমরান হোসেন (১৩), তুষার আহমেদ (১০) ও একমাত্র মেয়ে রোজিনা আক্তার (৭) মায়ের সন্ধ্যান পাওয়া গভীর নক‚পের পাইপের পাশে এসে প্রতিদিনই আহাজারি আর্তনাদ করছে। তাদের আর্তনাদ এবং স্বজন ও উপস্থিত জনতার মধ্যে শোকের মাতম চলছে।