নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট (রাজশাহী) : চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অধিকাংশ চিকিৎসকগণ নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেন না। কেউ কেউ হাজিরা দিয়েই ছুটে যান প্রাইভেট ক্লিনিকে। প্রসূতি মা’দের টাকা ছাড়া ছাড়পত্র না দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার প্রায় তিন লাখ জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনিয়ম, অব্যস্থাপনা ও দূর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কার্যক্রম চলছে ৩১ শয্যাতেই। এখানে অনুমোদিত ২৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৬ জন কর্মরত থাকলেও তাদের অধিকাংশই নিয়মিত কর্মস্থলে থাকেননা। কোন কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সপ্তাহে দুইদিন বা তিনদিন অফিস করেন। কোন কোন চিকিৎসক অফিসে নাম মাত্র হাজিরা দিয়েই চলে যান প্রাইভেট ক্লিনিকে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৭/৮ বছর আগে কোটি টাকা খরচ করে পৃথক কোয়ার্টার নির্মান করা হলেও কোন চিকিৎসক ঐ কোয়ার্টারে থাকেন না। সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তা কর্মস্থল থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে জেলা ও বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে অফিস করেন। চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ ঐ কোয়ার্টারে বিভিন্ন কর্মচারী চুক্তি ভিত্তিক বসবাস করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রসূতি মায়েদের কাছ থেকে ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা আদায় করে ছাড়পত্র দেয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার আসমানী (২৪) নামের এক রোগী জানায়, তার এক আতœীয় মৃত সন্তান প্রসব করেছিলেন। তার কাছ থেকেও ৫শ’ টাকা আদায় করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দকৃত মূল্যবান ওষুধগুলো রোগীরা পায়না বলেও অভিযোগ করেন।
এদিকে এক্সরে মেশিন, ফিংগার এ্যাটেনডেন্স বিকল এবং ইসিজি ও জরুরী প্রসূতি সেবা (ইওসি) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, এক্সরে ফিল্ম, প্লেট, অপারেটর সবই আছে। কিন্তু প্রায় চার বছর যাবৎ এক্সরে মেশিনটি বিকল হয়ে আছে। এরফলে রোগীরা এক্সরে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বাইরে চড়া মূল্য দিয়ে এক্সরে করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের হাজিরা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করারা লক্ষ্যে গত অক্টোবর মাসে ডিজিটাল পদ্ধতির ফিংগার এ্যটেনডেন্স মেশিন স্থাপন করা হয়। কিন্তু চার মাসের মাথায় মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ইচ্ছাকৃতভাবে ঐ মেশিনটি নষ্ট করে রাখতে পারে। ইসিজি মেশিন থাকলেও তা চালু করা হয়নি। এদিকে ২০০১ সাল থেকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী প্রসূতি সেবা (ইওসি) কার্যক্রম চালু থাকলেও এবং এই কার্যক্রমে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে তিনবার পুরস্কার প্রাপ্ত হলেও এনেসথেসিয়া ডাক্তার না থাকায় প্রায় দুই বছর যাবৎ ইওসি (অপারেশন) কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে একজন করে চিকিৎসক পদায়ন দেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকার ওজুহাতে তারা স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলোতে বসেননা। এ সকল অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদেকুল ইসলাম কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।