স্টাফ রিপোর্টার : শেরপুরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক, ভাষা সৈনিক মোঃ আব্দুর রশীদ (৮৪) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ দিন যাবত ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। তাকে গুরুতর অবস্থায় ২৭ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাতে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালের ১৯ নং ওয়ার্ডের ১৫ নং পেয়িংবেডে নিউরোলজিস্ট ডা. উত্তম কুমার সরকারের নেতৃত্বে একদল চিকিত্সকের তত্বাবধানে রয়েছেন।
৩ মার্চ সোমবার বিকেলে তার সাথে থাকা একমাত্র পুত্র সাংবাদিক-আইনজীবী আব্দুর রহিম বাদল জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন যাবত প্রেশার, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে হঠাত্ করে তার অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডাক্তাররা জানান, তিনি স্ট্রোক করেছেন। গত ৫ দিনে তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তবে অবস্থার পরিবর্তন হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। ডাক্তারদের মতে, উপযুক্ত সেবা-যত্ন পেলে এবং খাওয়া-দাওয়াসহ প্রেশার-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে তিনি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেতে পারেন।
উলেখ্য, আব্দুর রশীদ ১৯৩১ সালের ২৫ জানুয়ারি শেরপুর পৌর শহরের শেখহাটিতে এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া একাডেমীতে অধ্যয়নকালে ছাত্রাবস্থায় তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট, ৬২’র শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান, ৭০’র নির্বাচন,৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে অবদান রাখেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন গনতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল আন্দোলন এবং শেরপুরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডেও অবদান রেখেছেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় তত্কালীন সরকার তাকে ষ্টেট প্রিজনার হিসেবে গ্রেফতার করলে তিনি ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে এক মাস কারা ভোগ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হলে এর প্রতিবাদ করায় তত্কালীন জিয়াউর রহমান সরকার তাকে ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে ৯ মাস কারারুদ্ধ করে রাখেন। আব্দুর রশীদ তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে , শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমেদ, জেনারেল এমএজি ওসমানী ও বিপ্লবী রবি নিয়েগীসহ দেশবরেণ্য বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সান্নিধ্যলাভ করেন এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন। শেরপুর সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রশীদ দীর্ঘ দিন ধরে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও জামায়াত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। বিশেষ করে শেরপুরের কুখ্যাত আল বদর জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই প্রতিবাদী ভুমিকা পালন করেন এবং যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানকে সামাজিকভাবে বয়কট করে শেরপুরে এক অনন্য নজীর স্থাপন করেন। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌছে তিনি শেরপুর জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।