এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী : দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নরসিংদী জেলা শহর তথা সদর আসনের অধিবাসীরা একজন মন্ত্রী পেয়েছেন। সদর আসনের এমপি লেঃ কর্ণেল (অব:) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু গতকাল বুধবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদের অধীনে মন্ত্রী হয়েছিলেন রায়পুরার এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। তিনি ছিলেন সর্বশেষ মন্ত্রী। ১৯৭৯ সালে নরসিংদী জেলায় তৃতীয় জাতীয় সংসদের অধীনে প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলেন নরসিংদী সদর আসনের এমপি, প্রাক্তন কেবিনেট সেক্রেটারী আব্দুল মোমেন খাঁন। এই মোমেন খানের পর নরসিংদী সদর আসন থেকে কোন এমপি বা কোন রাজনৈতিক আর মন্ত্রী হতে পারেননি। এরশাদ শাসনামলে চতুর্থ জাতীয় সংসদের অধীনে হুইপ নির্বাচিত হয়েছিলেন রায়পুরার এমপি মাঈন উদ্দিন ভূইয়া। ১৯৮৯ সালে ৫ম জাতীয় সংসদের অধীনে উপ-মন্ত্রী হয়েছিলেন রায়পুরার এমপি মাঈন উদ্দিন ভূইয়া। এরপর ১৯৯১ সালে ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদের অধীনে নরসিংদী জেলা থেকে ২ জন মন্ত্রী হয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন শিবপুরের এমপি আব্দুল মান্নান ভূইয়া এবং পলাশের এমপি ড. আব্দুল মঈন খান। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদের অধীনে মন্ত্রী হয়েছিলেন মনোহরদী-বেলাব আসনে এমপি প্রাক্তন সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল (অব:) নুরুউদ্দিন খান। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধীনে নরসিংদী জেলা থেকে পূনরায় মন্ত্রী হন শিবপুরের এমপি আব্দুল মান্নান ভূইয়া এবং পলাশের এমপি ড. আব্দুল মঈন খান।
দীর্ঘ ৩৫ বছর নরসিংদী সদর আসন থেকে কোন মন্ত্রী না নেয়ায় নরসিংদী জেলা শহর রাজধানী ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোর চেয়ে উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে। জেলার প্রথম মন্ত্রী খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মোমেন খান নরসিংদীর প্রশাসনিক উন্নয়নসহ মানুষের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছিলেন। আব্দুল মোমেন খানের প্রচেষ্টায় নরসিংদী থানা থেকে ১৯৭৭ সালে নরসিংদী মহকুমা প্রশাসনে উন্নীত হয়। তৎকালীন নরসিংদী মহকুমা সদর স্থানান্তর হয় রেললাইনের উত্তর পার্শ্বে। এই এলাকায়ই মহকুমা প্রশাসনের কার্যালয়সহ সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়। ১৯৭৮ সালে আব্দুল মোমেন খান নরসিংদীর মানুষের জন্য গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। তৎকালীন নরসিংদী কলেজ, ব্রাহ্মন্দী কেকেএম উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরন করা হয়। এরপর নরসিংদী জেলা সদরে উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন সাধন করা হয়নি। বিভিন্ন আসনের এমপি গণ মন্ত্রী হয়ে নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সাধন করলেও নরসিংদী জেলা শহর থেকে যায় একটি অবহেলিত শহরে। নরসিংদী সদরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল নরসিংদী সদর আসন থেকে একজনকে মন্ত্রী নির্বাচিত করা হলেও পশ্চাদপদ নরসিংদী জেলা শহরটি বিভিন্নমুখী সমস্যা কাটিয়ে একটি আধুনিক শহরে পরিনত হবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নরসিংদীর এমপি নজরুল ইসলাম হীরু প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তার কাছে নরসিংদীর শহর তথা সদর বাসীর প্রত্যাশা অনেক। প্রাথমিকভাবে জনগনের জরুরী দাবী হচেছ নরসিংদীর পরিবেশের উন্নয়ন সাধন করা। এ ক্ষেত্রে কলকারখানার বিষাক্ত বর্জে দুষিত নরসিংদীর হাড়িধোয়া ও পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদকে দুষণ মুক্ত করা। এই দুটি নদ-নদী দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া বিষাক্ত পানিতে নরসিংদীর মেঘনা নদী মারাত্মক দুষণের শিকার হয়েছে। এই মেঘনাকে দুষণের হাত থেকে রক্ষা করা। মেঘনার স্বাভাবিক প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখার জন্য মেঘনার মাছের ঘের (খেও) উচ্ছেদ করা। অবৈধ ও মেয়াদোর্ত্তীর্ণ যানবাহনের তীব্র আওয়াজে মারাত্মক শব্দ দোষণের হাত থেকে নরসিংদী শহরবাসীকে রক্ষা করা। তাঁত শিল্পের উড়ন্ত তন্তুর কারনে মারাত্মক দুষণের শিকার হয়েছে নরসিংদীর বায়ূ। এই বায়ূ দুষণের কারনে প্রতিদিন মারাত্মক শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার শিশু। নরসিংদীতে বায়ূ দুষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁত শিল্পের মালিকদেরকে তাদের শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাধ্য করা। নরসিংদী রেলস্টেশনটি দীর্ঘ ২ বছর যাবত মরা স্টেশনে পরিনত হয়েছে। এ স্টেশন থেকে দ্রæত চালু করা এবং রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জুনে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোকে নরসিংদী রেলস্টেশনে স্থায়ী বিরতির ব্যবস্থা করা। নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি অবকাঠামোগত সমস্যাসহ বহুবিধ সমস্যায় জর্জড়িত। এই বিদ্যালয়টিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ব্যবস্থাসহ এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা।