ইমরান হোসাইন, তানোর (রাজশাহী) : রাজশাহীর তানোরে এবার আম গাছের মুকুলে সবেমাত্র গুটিকড়ালি দেখা দিয়েছে। ফলে চাষিরা অগ্রিম লাভের ভাগ গুণতে শুরু করেছে। আমের মুকুলে দেরিতে গুটিকড়ালি বাঁধার কারন হিসাবে এবার আমচাষীরা হঠাৎ আকাশের গুড়িগুড়ি বৃষ্টির প্রশংসা করছেন।
জানা যায়, সাধারণত পৌষের ১৫ দিন থেকে মাঘের ১৫ দিনের মধ্যে আমগাছে মুকুল বের হয়। আম চাষিদের মতে শীতের তীব্রতা থাকলে আমগাছে মুকুল বের হতে পারেনা। তাই একটু পরে এবার উষ্ম আবহাওয়ার ফলে উপজেলার প্রায় আমগাছে মুকুল ধরেছে। বৈরি আবহাওয়ার কারনে এবার আমগাছে মুকুল ধরতে কিছুটা দেরি হয়েছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে গেলে আমগাছের মুকুল বের হওয়া থেমে যায়। এবার শীতের তীব্রতার কারণে গতবারের চাইতে আমের মুকুল কিছুটা দেরিতে দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় সব গাছে আমের গুটি কড়ালি লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্যমতে জানা যায়, পুরো উপজেলায় শতাধিক আমের বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রতিবারের ন্যায় এবারো মুকুলে আমের গুটি কড়ালি বেঁধেছে। তবে, একবার কোন আমগাছে বেশি আম ধরলে পরের বার আম কম ধরে একে বলা হয় অফইয়ার। একারণে যেসব আম গাছে গত বছর বেশি আম ধরে ছিল। এবার সেসব আম গাছে তেমন আমের মুকুল দেখা দেয়নি। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নসহ ২টি পৌরসভার বেশ কয়েক জায়গায় সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ আমগাছে মুকুল বের হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে আকাশের গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় মুকুলের পাশাপাশি আমের গুটি কড়ালি লক্ষ্য করা গেছে।
তানোর পৌর এলাকার চাঁদপুর গ্রামের আম বাগানের মালিক আবদুল গনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় আমগাছে মুকুল ধরেছে এবং আমের গুটিকড়ালী দেখা যাচ্ছে। উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির চেয়ারম্যান মমিনুল হক মমিন বলেন, ঠিকমত বিষ প্রয়োগের ফলে ও পরিচর্যা করে এবার বিভিন্ন এলাকার আমগাছে গতবারের চেয়ে মুকুলের পাশাপাশি আমের গুটিকড়ালি বেশী ধরেছে। মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী বলেন শীতের দাপট বেশি থাকার কারনে এবার আমগাছে মুকুল ধরতে একটু দেরি হলেও বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। চাঁন্দুড়িয়া ইউপির কৃষক নজরুল ইসলাম তিনি জানান, আমগাছের মুকুল যদি নষ্ট না হয় তাহলে এই এলাকায় আমের এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আম চাষিরা বাগানে পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহার করায় গতবারের তুলনায় এবার মুকুল বেশি দেখা যাচ্ছে। সেইসাথে আমের গুটি কড়ালিও কম নয়। তিনি আরো বলেন এবার আমগাছের তুলনা মুলক ভালই আমের গুটিকড়ালি দেখা দিয়েছে, যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে আমের কড়ালি অনুপাতে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উপজেলার কোন কোন এলাকায় আমগাছে এত মুকুল ধরেছে যে, গাছের পাতা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা। এবার আমের বাম্পার ফলনের কারণ হিসাবে উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুল কবীর কামালী জানান, আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে হলে ম্যাঙ্গোহুপা নামক এক ধরনের পোকার আক্রমন শুরু হয়, তখন এ পোকা আমগাছের মুকুলের রস চুসে খায় এতে মুকুল কালো রঙ্গের হয়ে ঝরে পড়ে, আবার কুয়াশার কারনে ছত্রাকের আক্রমন হয়ে থাকে এতে মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। তবে এবছর এমন কোন রোগ বালায়ের আক্রমন এখনো পর্যন্ত লক্ষ্যকরা যায়নি। আমচাষীদের মতে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় যদি না আসে তাহলে এবার তানোর উপজেলায় আমচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে তিনি আশা করেন। এছাড়া সঠিক সময়ে আমচাষিরা কীটনাশক ব্যবহার করে আমগাছের মুকুল পরিচর্যা করেছে। তাই এবার শতাধিক আমের বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় আমের মুকুল তুলনা মূলক কম পরিমানে ঝরেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশী ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।