কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের কেশবপুর পৌর এলাকার মধ্যকুলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা অবশেষে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের ঢেঁকি উৎসব উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছে। এ উপলক্ষে শত শত নারীদের উপস্থিতিতে এক অভিনব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলায় বিলুপ্ত প্রায় ঢেঁকির ব্যবহার চলে আসছে। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগে ঢেঁকির ব্যবহার তেমন নেই বললেই চলে। তবে ঢেঁকিতে মাড়াই করা (কোটা) চালের গুঁড়া উৎকৃষ্টমানের। এই গুঁড়া দিয়ে চিতই, ভাপা, পাকান, দুধ-খেজুরে পিঠাসহ হরেক রকমের সুস্বাদু পিঠা তৈরী করা যায়। এজন্য গ্রামীন বধুর কাছে এখনও ঢেঁকির চাহিদা রয়েছে। এ কথা বিবেচনা করে মধ্যকুল নাথ পাড়ার শতাধিক হিন্দু ও মুসলমান পরিবার যৌথ উদ্যোগে সঞ্চয়ের মাধ্যমে একটি ঢেঁকি তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহন করেন। এ উপলক্ষে গত ১মাস আগে পাড়ার রেখারানী দেবনাথকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সদস্য গুলজান বিবি অভিযোগ করে বলেন, সদস্যরা প্রতিটি বাড়ি থেকে চাঁদা তুলে ৫০০ টাকা দিয়ে গ্রামের সোবহান আলীকে ঢেঁকি তৈরীর দায়িত্ব দেন। কিন্তু সোবহান আলী ঢেঁকি তৈরী করে কমিটির সদস্যদের কাছে না দিয়ে প্রতারণা করে রাতের আঁধারে গ্রামের শোভারানী দেবনাথের কাছে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করে দেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে কমিটির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করেন। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই কাউন্সিলর ৯৫০ টাকা দিয়ে শোভারানী দেবনাথের কাছ থেকে ঢেঁকিটি ক্রয় করে কমিটির কাছে অর্পণ করেন।
এ উপলক্ষে ২৩ ফেব্র“য়ারী বিকেলে পাড়ার সালেহা বেগমের বাড়িতে ঢেঁকিতে চাল কোটার লক্ষ্যে ঢেঁকি উৎসবের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে ঢেঁকি উৎসবের উদ্বোধন করেন কাউন্সিলর আয়ুব হোসেন খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন হুমায়ুন কবীর, রেখা রানী দেবনাথ, পারভীনা বেগম প্রমুখ।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামীন বধুরা ঢেঁকি উৎসব উপলক্ষে নতুন ঢেঁকিটি রঙ করে কাগজের ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। অতিথি আপ্যায়নে রয়েছে ব্যতীক্রমী আয়োজন। কোন কোন বাড়িতে পিঠা খেতে জামায় আপ্যায়নও চলছে।
এব্যাপারে কাউন্সিলর আয়ুব হোসেন খান জানান, ওই পাড়ায় ঢেঁকি উৎসবের ফলে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে আতœীয়তার বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। তারা উদ্যোগী হয়ে গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছে। ঢেঁকিটি কমিটির হাতে বুঝে দিতে পেরে তিনি খুশি।