তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা : কুমিল্লা উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে বিভিন্ন উপজেলার মাঠ প্রান্তরে। কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, নাঙ্গলকোট, হোমনা, তিতাস ও চৌদ্দগ্রাম সহ ৬টি উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে ব্যাপক দলীয় সমর্থন প্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে তাদের বিজয়ী অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ একাধিক দলীয় সমর্থন প্রাপ্ত প্রার্থীদের। এ নিয়ে একাধিক দলীয়ভাবে একাধিক বৈঠক করেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা। ফলে নির্বিঘেœ প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ৬ উপজেলায় বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রসহ আওয়ামীলীগ বিএনপির ৩৯জন প্রার্থী বিরামহীন ভাবে প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এখনো প্রতীক বরাদ্ধ না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচার শুরু হয়নি তথাপি বসে নেই কেউ। দিন রাত সমান তালে চলছে প্রচার। বড় দুই দলেই রয়েছে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। তাই জেলা উপজেলা এমনকি কেন্দ্রীয় নেতারা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে কোন মূল্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে সমঝোতা করে একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামা।
আগামী ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাক্ষ্মনপাড়া, নাঙ্গলকোট, হোমনা, তিতাস ও চৌদ্দগ্রামের ৬ উপজেলায় মোট ৩৯জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ১৯জন। এর মধ্যে বিএনপির ৫জন আর আওয়ামীলীগের রয়েছে ১৪জন। ২৪ ফেব্র“য়ারি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের দিন জানা যাবে উভয় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী কত জন। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাত্র বুড়িচং উপজেলার বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম শাহিন ব্যতিত আর কারো প্রত্যাহার করার কিংবা করতে পারে এমন খবর পাওয়া যায়নি। তবে তুলনামূলক ভাবে এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের তুলনায় বিএনপি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
জানা যায়- কুমিল্লার ১৬টি উপজেলার মধ্যে দ্বিতীয় দফা তফসিল অনুযায়ী ২৭ ফেব্র“য়ারি অনুষ্ঠিত হবে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও দেবিদ্বার উপজেলায় নির্বাচন। আর তৃতীয় দফার তফসিল অনুযায়ী ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে উপরের ৬টি উপজেলার নির্বাচন। এর মধ্যে বুড়িচং উপজেলায় প্রার্থী রয়েছে ৮ জন। এখানে বিএনপির দলীয় প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুল ইসলাম শাহিন ইতিমধ্যে তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় মিজান এখন দল এবং ১৯ দলীয় জোটের একক প্রার্থী। অপর দিকে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী আখলাক হায়দার। এ দল থেকে তিন জন বিদ্রোহী প্রার্থী হলো, বর্তমান চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, এড. মাহাবুবুর রহমান। জাতীয় পার্টি থেকে আছে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও সফিকুর রহমান। জাপা এখনো দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলায় মোট প্রার্থী ৭ জন। বিএনপির একক প্রার্থী সামছুল আলম। আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী। আর বিদ্রোহী চারজন আওয়ামীলীগের প্রার্থী হলো, আলহাজ্ব আবু তাহের, হাজী জসিম উদ্দিন, এম এ বারী, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউল খান মাহাবুব এবং স্বতন্ত্র আবুল কালাম মজুমদার ।
তিতাস উপজেলায় মোট প্রার্থী ৮ জন। এখানে বিএনপির দলীয় প্রার্থী সালাউদ্দিন সরকার আর বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার হোসেন। আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী মুন্সি মুজিবুর রহমান। আর বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার, নুরুন নাহার পারভীন, মোস্তাক আহমেদ এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হলো, নাসির আলম, ও আবদুল হান্নান।
নাঙ্গলকোট উপজেলায় মোট প্রার্থী হলো ৭জন। এর মধ্যে এখানে বিএনপির দলীয় প্রার্থী এখনো ঠিক না করার কারনে নজির আহমেদ ভুইয়া, নুরুল আবছার নয়ন, শাহ আলম মজুমদার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার তিন জনেই নিজকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিচেছন। আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী স্থানীয় পৌর মেয়র সামছুদ্দিন কালু। আর বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলো, নাজমুল হাসান ভুইয়া বাছির ও হুমায়ুন কবীর ভিপি। আর জাতীয় পার্টির রয়েছে কাজী জামাল উদ্দিন।
হোমনা উপজেলায় মোট প্রার্থী রয়েছে ৫ জন। এখানে বিএনপির দলীয় প্রার্থী অ্যাড.আজিজুর রহমান মোল্লা। আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হলো রুস্তম আলী স্বপন আর বিদ্রোহী প্রার্থী রেহানা বেগম ও মো. সহিদুল্লা। একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হলো বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল হক জহর।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভুইয়া। আর বিএনপির দলীয় প্রার্থী কামরুল হুদা। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে জিএম তাহের পলাশী ও ইমাম হোসেন মজুমদার শহিদ।
এদিকে, কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানান- লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও দেবিদ্বার উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধির অভিযোগ আসলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চান্দিনায় পিকআপ চাপায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিহত
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় কেরনখাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কায়কোবাদ (৩৮) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো দু’জন। রোববার সকালে উপজেলার গেট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্কুলশিক্ষক কায়কোবাদ জেলার মুরাদনগর উপজেলার মেটাংগর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক পুত্র। আহতরা হলেন-জেলার দেবিদ্বার উপজেলার সূর্যপুর গ্রামের মৃত আব্দুল করিম ভূঁইয়ার ছেলে বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফয়েজুর রহমান ভূঁইয়া ও চান্দিনার মধুসাইর গ্রামের বাসিন্দা রিকশা চালক আব্দুর রব।
চান্দিনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি এসএসসি পরীক্ষায় চান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন কায়কোবাদ। এজন্য তিনি ও ফয়েজুর চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে রিকশায় করে ওই বিদ্যালয়ে আসছিলেন। এসময় দ্রুতগামী একটি পিকআপ ভ্যান তাদের রিকশাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই কায়কোবাদ মারা যান। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ফয়েজুর ও রিকশা চালক। এসআই আরো জানান, আহতদের মধ্যে রিকশা চালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে তাদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর পর চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ ছালেহ আহাম্মদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে, খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়েছে। স্কুল শিক্ষকের মৃত্যুর খবর পেয়ে কেরনখাল উচ্চ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।