তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা : ডিবি পরিচয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী অপহরণ হওয়ার ৭ দিন পর চোখ বাঁধা অবস্থায় বুড়িচং উপজেলার কংশনগর বাজারের পাশে কৃষি জমি থেকে থেকে উদ্ধার করেছে দেবপুর ফাঁড়ির পুলিশ। সোমবার ভোরে ৬টার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কংশনগর বাজার নৈশপ্রহরী হারুন মিয়া জানান- সোমবার ভোর পৌনে ৪টায় মৃদুলকে কংশনগর এলাকায় চোখ বাঁধা অবস্থায় কৃষি জমিতে ফেলে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে আহত অবস্থায় মৃদুল কংশনগর বাজারে এলে বাজারের তাকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান। বাড়িতে আনার পর স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল হারুনের মোবাইল ফোন দিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করানো হয়। পরে মৃদুলের পরিবারের লোকজন চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান। তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানা পুলিশ কুমিলার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ বিশ্বাসকে জানালে তিনি হারুনের বাড়ি থেকে মৃদুলকে দেবপুর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান।
অপহৃত মৃদুল চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন- চলতি বছরের ১১ ফেব্র“য়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় আমি ও আমার ছোট ভাই জুনু বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। দোকানের কাছাকাছি আসার পর একটি নোহা মাইক্রোবাস এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন লোক গাড়ি থেকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাকে গাড়িতে উঠতে বলেন। আমি ভাবলাম যদি গাড়িতে না উঠি তাহলে হয়তো গুলি করতে পারে। তাই আমি গাড়িতে উঠি। এরপর তারা আমাকে মুখোশ পরিয়ে দেন। তা দেখে জুনু বাইরে থেকে চিৎকার শুরু করেন। ততক্ষণে গাড়িটি ছেড়ে দেয়। গাড়ি ছাড়ার আধাঘণ্টা পর আরেকটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। এভাবে তিনটি গাড়ি পরিবর্তন করেন তারা। পুরো সময় আমার চোখ বাঁধা ছিল। রাত ১০টার দিকে আমাকে তিন তলা একটি বাড়িতে ওঠানো হয়। আসলে এটি বাড়ি না কি অন্য কিছু তা জানিনা।
তিনি আরো বলেন, এই ছয়দিনে আমাকে খাওয়া-দাওয়া করতে দেওয়া হয়। তবে দুইদিন পর থেকে আমাকে গালি-গালাজ করে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। সোমবার ভোরে আমাকে চোখ বেঁধে একটি কৃষি জমিতে ফেলে তারা চলে যান। এই ছয়দিনই আমার চোখ বাঁধা ছিল। চোখ খোলার পর জানতে পারলাম আমাকে কুমিলায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি জানান-মুক্তিপণের বিষয়ে কিছুই জানায়নি অপহরণকারীরা। কে অপহরণ করেছে আবার কেন ফেলে পালিয়ে গেছেন তা রহস্যজনক বলে তিনি জানান
দেবপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, পুলিশ মৃদুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার এসআই কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের পাঁচ সদস্যের একটি দল ও মৃদুল চৌধুরীর ভাই শিমুল চৌধুরী কুমিলায় আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৃদুলকে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছে চট্টগ্রামের পুলিশ।